
অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থী মুরাদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরন করলেন মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য ভর্তি ফি’র ১ লাখ ৭৩ হাজার ১৫০ টাকা প্রদান করলেন সাবেক মেয়র মো. মনজুর আলম। সোমবার সকালে মুরাদের ভর্তি ফি’র অর্থ তাঁর হাতে হস্তান্তর করা হয়। সমাজের শিক্ষার উন্নয়নে অব্যাহত কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে এ অর্থ প্রদান করা হয় মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে।
সৈয়দ মো. মুরাদ উদ্দিন । বাড়ী রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকায়। যখন ৪র্থ শ্রেনীতে পড়েন সে সময় তাঁর পিতা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এর পর থেকে তাদের পরিবারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। তখন তাঁর মায়ের বয়স মাত্র ত্রিশ বছর। স্বামী হারিয়ে ২ মেয়ে এক পুত্র সন্তান নিয়ে রীতিমত চোখে অন্ধকার দেখছিলেন তিনি। তার পরেও হাল ছাড়েননি। অনেক কষ্ট স্বীকার করে গত বছর চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজ বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস করেন মুরাদ। তাঁর আশা এবং স্বপ্ন সে ডাক্তার হবে।
ডাক্তারী পড়ার জন্য চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ১২৭ জনের মধ্যে ২য় হয় মুরাদ। ডাক্তারী পড়ার জন্য মা ও শিশু হাসপাতালের ৫ শতাংশ অস্বচ্ছল মেধাবী কোটায় সুযোগ মিলে তাঁর। কিন্তু ৫ শতাংশ অস্বচ্ছল মেধাবী কোটাতেও ইন্টার্নি করা সহ ডাক্তারী পড়া সম্পূর্ন করতে তাঁকে ১ লাখ ৭৩ হাজার ১৫০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। টাকার জন্য চিন্তায় পড়ে মুরাদ। কিভাবে যোগাড় করবে এত টাকা ।

তাঁর এ খবর হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডন্টে সৈয়দ মো. মোর্শেদ এর মাধ্যমে অবগত হন সাবেক মেয়র ও মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. মনজুর আলম। বিস্তারিত জানার পর তিনি মুরাদের ডাক্তারি পড়ার সব দায়িত্ব নেন এবং ভর্তির পুরো টাকা প্রদান করেন। এ ছাড়া ডাক্তারি পড়াকালীন মুরাদের অন্যান্য সকল ব্যয় ও বহন করবে মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন।
এ ব্যপারে মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক মো. সরোয়ার আলম বলেন, এটি আমাদের একটি সামাজিক কর্মকান্ড। গত ৩৫ বছর ধরে সমাজের শিক্ষাবঞ্চিতদের জন্য কাজ করছে মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। তিনি বলেন মুরাদের মেধা আছে কিন্তু অর্থ নেই যার ফলে তার স্বপ্নটা থেমে যাচ্ছিল। শুধু মুরাদ নয় সমাজের সকল শিক্ষাবঞ্চিতদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সব সময় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিবে মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশন।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মো. মোর্শেদ বলেন, মুরাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশন সহায়তার হাত নিয়ে এগিয়ে এসেছে । সাবেক মেয়র মনজুর আলমের এ ধরনের মহতি কাজেন জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
এ ব্যপারে মুরাদ বলেন,ছোটকাল থেকে স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। বাবার মৃত্যুর পর সে স্বপ্ন অনেকটা ক্ষিন হয়ে আসে। মায়ের আন্তরিক প্রচেষ্টা আর শিক্ষকদের সহায়তায় চট্টগ্রাম সরকারী মসুলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে পাস করি ২০১৪ সালে। এর পর সরকারী সিটি কলেজ থেকে এ প্লাস নিয়ে এইচএসসি পাস করি।
মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার পর যখন উত্তীর্ণ হলাম ভর্তি ফি জমা দেয়ার সময় ছিল মাত্র ৭দিন। এর মধ্যে বিভিন্ন জনের কাছে ধর্না দিয়েও টাকা বিপুল পরিমাণ অংকের টাকা জোগাড় করতে পারিনাই। তখন মেডিকেলে পড়ার আশা অনেকটা ছেড়েই দিয়েছিলাম। অবশেষে মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশন আমার এ স্বপ্ন পূরন করল। আমি সাবেক মেয়র মনজুর আলম এবং তাঁর পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।