
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন মানে মানে সরে যান, এখনো সময় আছে। তা না হলে জনগণ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সরিয়ে দিতে বাধ্য হবে।
তিনি বলেন, বন্দুক দিয়ে, হুমকি দিয়ে ভয় দেখিয়ে আর কাজ হবে না। অনেক অপরাধ করেছেন, জুডেশিয়াল কিলিং করেছেন, ১ লাখ ২৪ হাজার মামলা দিয়ে ৪০ লাখ নেতাকর্মীকে আসামী করেছেন। কেউ ক্ষমতায় চীরস্থায়ী থাকতে পারে নি। নমরুদ, ফেরাউন এমনকি এরশাদ স্বৈরাচারী কায়দায় ক্ষমতায় আকঁড়ে থাকতে ব্যর্থ হয়েছেন। আপনিও (শেখ হাসিনা) পারবেন না। ক্ষমতার এ মসনদ কারো জন্য পার্মান্টেট নয় মানে মানে সরে পড়েন।
তিনি আজ রবিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে নগরীর কাজীর দেউড়িস্থ নুর আহমদ সড়কে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিকদলের মেহনতী শ্রমিক জনতার মহাসমাবেশে প্রধান অথিতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম একটি ঐতিহাসিক স্থান এখান থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। এইখানে তিনি জীবনের শেষ সময় অতিবাহিত করেছেন, প্রীতিলতার এই চট্টগ্রামের মানুষ অবৈধ লুটেরা সরকারকে কি বার্তা দিতে চায় তা সারা বিশ্বে পৌছে দিতে হবে।
বিএনপির কেন্দ্রিয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ সরকার, নির্দলীয় সরকার থাকলে আওয়ামী লীগের ভাত নেই। সবাইকে বোকা বানিয়ে বিচার ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে, খায়রুল হকের ওপর জোর দিয়ে পার্লামেন্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাতিল করা হয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে একটি বক ধার্মিক দল। বক যেমন পুকুুর জলশয়ের ধ্বারে এক পায়ে বসে থাকে মাছ ধরার জন্য, তারাও (আওয়ামী লীগ) সুযোগের অপেক্ষায় বসে থাকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য।
তারা এখন বলে বেড়াচ্ছে আওয়ামী লীগের অধিনে নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সবাই যেন নির্বাচনে অংশ নেয়। এ যেন “ভূতের মুখে রাম রাম”। আসলে আওয়ামী লীগের চরিত্রই ভালো না। আর নির্বাচন কমিশন হচ্ছে একটা ‘ঠুটো জগন্নাথ’, তাদের কোন ক্ষমতা নেই। আওয়ামী লীগ যা বলে তা বাস্তবায়ন করে।
তিনি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘তারা বলে, “নির্বাচন আমাদের অধীনে হবে। আমরাই ভোট কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করবো। আমরাই ভোট দেওয়াবো, আমাদের মতো করে সবাইকে ভোট দিতে হবে। নইলে চলে যেতে হবে।” এমনকি আমাদের ভোটারদের এখনও বলে তারা ভোট কাকে দেবে। “যদি বিএনপিকে ভোট দিতে চাও তাহলে তোমার ভোট হয়ে গেছে।” ভোট কেন্দ্রে যেতেই দেয় না।’
শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বলে তাদের অধীনে নাকি ভোট দিতে হবে। ২০২১ সালে শেখ হাসিনা আমাদের ডেকে বলেন নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, সবাই ভোট করতে পারবেন। সবাইকে বলেন ভোট করতে, আমি কোনও বাধা দেবো না। আমরা ভাবলাম, বোধ হয় শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। আগের রাতে ভোট হয়ে গেলো। এখন আবার বলছে আমরা সুন্দর ভোট করবো। আমাদের অধীনেই ভোট হবে। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হবে। তাদের কী আবদার!
আগের বার তারা ইলেকশনের আগে জনগণকে বলেছিল নির্বচিত হলে ঘরে ঘরে চাকুরি দেবে ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে চাকুরিতো কেউ পায়নি বরং ঘরে ঘরে বেকার বেড়েছে, চাউলের কেজি ৯০ টাকা হয়েছে। এ সরকার যতদিন থাকবে মানুষের দুর্ভোগ তত বাড়বে।
তাই ভালো ভালোই পদত্যাগ করে মানুষকে মুক্তি দিন, না হয় জনগণ তাদের হারানো ভোটাধিকার আদায় করে নিতে বাধ্য হবে।
আওয়ামী লীগকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আর কোনও সময় নেই, তাদের সময় শেষ। আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি। আবারও বলছি, ভালো ভালোয় পদত্যাগ করেন, সংসদ ভেঙে দেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আট বছর কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন সংগ্রাম করেছেন। রাষ্ট্র মেরামতের জন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান এই ৩১ দফা দিয়ে আমাদের একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন।’

প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকারের পতনের দিন ঘনিয়ে এসেছে। এক দফায় কী বলা হয়েছে- শেখ হাসিনা বিদায় হও। একথা এখন শুধু বিএনপি বলছে না, যুগপৎ আন্দোলনে যারা আমাদের সাথে আছে, তারাও রাস্তায় নেমে গেছে, যারা আমাদের বাইরে আছে, তারাও রাস্তায় নেমে গেছে, নতুন নতুন সংগঠনও রাস্তায় নেমে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের কয়েকটা হালুয়া রুটির দল ছাড়া আর কেউ নেই। হালুয়া রুটির দলগুলোও আছে সেটা বলা যাবে না, তারা অপেক্ষা করছে আন্দোলন কোনদিকে যাচ্ছে, ভাবছে যদি শেখ হাসিনা যদি পড়ে যায়, তাহলে হালুয়া-রুটি শেষ। তবে এবার বাংলাদেশের জনগণ নজর রাখছে, কারা হালুয়া-রুটির দিকে আছে আর কারা জনগণের সাথে আছে। সুতরাং এবার আর হালুয়া-রুটিদের পার পাবার সুযোগ নেই।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মীর নাসির উদ্দিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, বান্দরবান বিএনপির নেতা ম্যামাচিং।