
সরকার পতনের একদফা দাবী এবং বিএনপি মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবীতে বিএনপির ডাকা চতুর্থ দফা অবরোধের প্রথম দিন আজ রবিবার (১২ নভেম্বর) মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাকর্মীরা। অবরোধকে কেন্দ্র করে মহানগর বিএনপির আরো ২০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এদিকে অবরোধের কারণে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যায়নি পণ্যবাহী গাড়ি কিংবা যাত্রীবাহী বাস।
নাশকতা রোধে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাব পুলিশের পাশাপাশি চট্টগ্রামে টহল দিচ্ছে বিজিবি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে জানানো হয়,চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি টহল দল মহাসড়ক ছাড়াও নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নিয়েছে।
বিজিবি চট্টগ্রাম-৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ ছিদ্দিকী বলেন, চট্টগ্রামে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিজিবি চট্টগ্রামে টহল দিচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়-বিএনপির নেতাকর্মীরা সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল সমাবেশের মধ্য দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে এবং কর্মসূচি সফল করছে। চলমান গণ আন্দোলনে শাসকগোষ্ঠী তাদের পতনের আশঙ্কায় ভীত হয়ে পড়েছে। তাই অবরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশ চট্টগ্রামে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গণগ্রেফতার করছে। রিমান্ডে নিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন, মিথ্যা গায়েবী মামলা দিয়ে জুলুম নির্যাতন করে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে।

নগর বিএনপির সহ দপ্তরের দায়িত্বে থাকা ইদ্রিস আলী জানান, অবরোধের সমর্থনে রবিবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এস কে খোদা তোতনের নেতৃত্বে নগরীর জাকির হোসেন রোড়ে খুলশী থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে। তাছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আবদুল মান্নান ও কোতোয়ালি থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে শাহ আমানত ব্রীজ সংলগ্ন নেভাল রোড়ে কোতোয়ালী থানা বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল, মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন লিপু ও চাঁন্দগাও থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন ভূইয়ার নেতৃত্বে কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় চাঁন্দগাও থানা বিএনপির মিছিল, বায়েজিদ থানা বিএনপির সভাপতি আবদুল্লাহ আল হারুন ও জালালাবাদ ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ বেলালের নেতৃত্বে কুলগাও বটতলী এলাকায় বায়েজিদ থানা বিএনপির মিছিল, মহানগর বিএনপি’র সাবেক সহ সংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম স্বপনের নেতৃত্বে টাইগার পাস আম বাগান এলাকায় খুলশী থানা বিএনপি’র মিছিল, জামাল খান মোড়ে ২১নং জামালখান ওয়ার্ড বিএনপির মিছিল, পাথরঘাটা ওয়ার্ড বিএনপির মিছিল, পাহাড়তলী নয়া বাজার এলাকায় মহানগর যুবদলের সহ সভাপতি ফজলুল হক সুমনের নেতৃত্বে থানা যুবদলের মিছিল, চাঁন্দগাও সিএন্ডবি এলাকায় মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলমের নেতৃত্বে মিছিল, পাঁচলাইশ হামজার বাগ এলাকায় পাঁচলাইশ থানা যুবদলের আহবায়ক মো. আলী সাকীর নেতৃত্বে থানা যুবদলের মিছিল, নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোড গাউছিয়া মোড় এলাকায় থানা যুবদলের মিছিল,

চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সাবেক প্রচার সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদা আক্তার লিটার নেতৃত্বে নগরীর পোর্ট কানেকটিং রোড়ে মিছিল ও সড়ক অবরোধ, শেখ রাসেলের নেতৃত্বে মুরাদপুর এলাকায় পাচলাইশ থানা যুবদলের মিছিল, মহানগর যুবদলের সহ সাধারন সম্পাদক তানভীর মল্লিকের নেতৃত্বে পাহাড়তলী এলাকায় মিছিল, চান্দগাঁও এক কিলোমিটার সড়কে চাঁন্দগাও থানা যুবদলের মিছিল, সদরঘাট এলাকায় থানা যুবদলের মিছিল, পাহাড়তলী ডিটি রোডে মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক রাজিবুল হক বাপ্পীর নেতৃত্বে মহানগর ছাত্রদলের মিছিল, খাতুনগঞ্জ ও আছাদ গঞ্জ এলাকায় কোতোয়ালী থানা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল ও সিএন্ডবি এলাকায় চাঁন্দগাও ওয়ার্ড যুবদলের নেতাকর্মীরা মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে।
এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রবিউল হোসেন রবি ও সদস্য সচিব কামরুদ্দিন সবুজের নেতৃত্বে সকালে আনোয়ারা কেইপিজেডের প্রধান ফটকের সামনে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহিদের নেতৃত্বে নগরীর লালখান বাজার ও স্টেডিয়াম এলাকায় মিছিল ও সড়ক অবরোধ, হাটহাজারী উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক তকিবুল হাসান চৌধুরী তকির নেতৃত্বে হাটহাজারী উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রদলের চট্টগ্রাম রাঙামাটি রোডে মশাল মিছিল ও দক্ষিণ জেলা যুবদলের সি. যুগ্ম সম্পাদক মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে সাতকানিয়া যুবদলের মিছিল বের করা হয়।
মহানগর বিএনপির গ্রেফতারকৃত নেতৃবৃন্দের মধ্যে বায়েজীদ থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ ইউছুপকে পাঁচলাইশ চালিতাতলি বাজার থেকে গ্রেফতার করে বায়েজিদ থানা পুলিশ। তাছাড়া উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড বিএনপির সহ সভাপতি মোহাম্মদ ইউছুপকে নিজ দোকান থেকে পতেঙ্গা থানা, রাতে রামপুর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল মান্নান, জসিম উদ্দিন লেদু ও উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড বিএনপি নেতা রঙ্গিপাড়ার মো. তাহের ও থানা ছাত্রদলের সি. যুগ্ম আহ্বায়ক আরমান হোসেনকে হালিশহর থানা, চান্দগাঁও থানা যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন জুয়েল, মোহাম্মদ মিনহাজ, থানা যুবদল নেতা ইরফান ফরহাদ, ইমরান হোসেন সুজনকে চাঁন্দগাও থানা, এনায়েত বাজার ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সি. যুগ্ম আহবায়ক ওমর ফারুক, বাগমনিরাম ওয়ার্ড যুবদল নেতা সফিকুল ইসলাম, বকশিরহাট ওয়ার্ড যুবদল নেতা ওমর ফারুক রানা ও মো. মানিককে কোতোয়ালী থানা, দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা রবিউল হক সুমনকে ইপিজেড থানা, জালালাবাদ ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ফয়সাল উদ্দিন সাকিবকে বায়েজিদ থানা, আকবর শাহ থানা পুলিশ উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য আকতার হোসেন সহ ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে।
যুবদল নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে নিন্দা-
চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও থানা যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন জুয়েল, ৩৫ নং বকশীর হাট ওয়ার্ড যুবদল নেতা ওমর ফারুক রানা ও মোহাম্মদ মানিকসহ দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি ও
সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদ।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, আওয়ামী সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। যে কারণে নাগরিকদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে প্রতিবাদী কণ্ঠকে
স্তব্ধ করতে চায়। এই ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার তাদের অপশাসন ও অত্যাচারে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। তারা জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারকে হরণ করেছে। রাতের ভোটে ক্ষমতা দখলকারী আওয়ামী সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায় দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির ফলে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। তারা দেশকে একটি বৃহৎ কারাগারে পরিনত করেছে। এভাবে দেশ চলতে পারেনা। এই অবৈধ সরকারকে দেশের জনগণ আর এক মুহূর্তও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চাই না। এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে দেশব্যাপী সড়ক, নৌ ও রেলপথ সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি চলছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবেই। জীবনের বিনিময়ে হলেও রক্ত দিয়ে এই সরকারকে বিদায় করে মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করা হবে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। দেশের জনগণ আজ জেগে উঠেছে। হরতাল-অবরোধে জনগণের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ এটায় তার প্রমাণ করে।
তাই জনতার আন্দোলনের কাছে নতি শিকার করে এ সরকারকে বিদায় নিতে হবে ইনশাআল্লাহ।
আমরা যুবদলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং সকল নেতাকর্মীকে অবিলম্বে নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।