
শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরিক্ষা এসএসসিতে অংশ নেয়া হয়নি আরিফুল ইসলামের। পরিক্ষার প্রথম দিনেই পৃথিবী ছেড়ে পরপারে পাড়ি দিতে হলো তাকে। শরীরের ভীতরে কঠিন এক রোগ বাসা বেঁধেছিল তার কেউ জানতো না।
নিজের জীবন নিয়ে আরিফুল ইসলামের খুব আশা ভরসা ছিল। লেখাপড়া শিখে উচ্চ শিক্ষা শিক্ষিত হয়ে মানুষ হবে। চাকুরী করে পরিবারের হাল ধরে বলে বোয়ালখালী উপজেলার হওলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে অংশ নিতে যাচ্ছিল।

২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল আরিফুল। পরীক্ষার ঠিক দু’দিন আগেই আরিফের শরীরে ধরা পরে দূরারোগ্য ব্যাধি।
বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের লাল মিয়া হাজীর বাড়ির মো. নাছের আহমদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে আরিফুল ইসলাম (১৫) সবার ছোট।
আরিফুলের রড় ভাই শহীদুল ইসলাম বিক্রম জানান, গত রবিবার ২৯ জানুয়ারি আগে হঠাৎ আরিফুলের নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু হয়। এরপর ডা. কাউছারকে দেখানো হলে তিনি রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন।
পরদিন রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট দেখালে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জন্য বললে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের ৬তলার ৩৭নং ওয়ার্ডের ৫নং বেডে ভর্তি করানো হয় বলে জানান তিনি। প্রতিদিন চার ব্যাগ করে o+ রক্ত দেয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছিল না।
অবশেষে কোন রকম সুযোগ না দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আরিফুল।
বড় ভাই শহীদুল ইসলাম বিক্রম জানান, হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎকরা পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছে আরিফের চিকিৎসায় প্রচুর রক্ত ও অর্থের প্রয়োজন। আমরা সে চেষ্টাই করছিলাম। কিন্তু আরিফ আমাদের সে সুযোগ দিলো না।
নিজে লেখাপড়া করতে পারিনি। তাই ছোট ভাইটিকে নিয়ে প্রচুর স্বপ্ন দেখেছিলাম। আরিফ পরীক্ষায় এ-প্লাস পেলে একটি সাইকেলের বায়ানা করেছিল জানিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
হওলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক কান্তি চৌধুরী বলেন, আরিফ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিল। আরিফের শ্রেণি রোল ছিল ৫। এবারের নির্বাচনী পরীক্ষায় সে ৪ পয়েন্ট ৫৬ পাওয়ায় তাই আশা করেছিলাম সে এসএসসিতে ভালো ফলাফল করবে।
তিনি আরো বলেন, তার পিতা পটিয়া উপজেলা একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রহরী হিসেবে কর্মরত ও বড় ভাই পাইপ ফিটার মিস্ত্রি। অত্যান্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিল আরিফুল ইসলাম। তার এ অকাল মৃত্যু স্কুলের শিক্ষক/ ছাত্রছাত্রীদের সকলের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।