
বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে কধুরখীল ইউনিয়নের ৭ বছর পুরোনো চিঠির সূত্র ধরে আইনের তোয়াক্কা না করে নিয়মবর্হিভূত নিকাহ্ রেজিষ্টার (কাজী) নিয়োগের পাঁয়তারার অভিযোগ উঠেছে নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও সাব-রেজিস্ট্রার এর বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে গঠিত একটি প্যানেল কাগজে কধুরখীল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জোড় করে স্বাক্ষর নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৬১নং আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ওয়ার্ড গঠন ৩ (১) ধারায় উল্লেখ রয়েছে,‘ ইউনিয়ন পযার্য়ে সংরক্ষিত আসন ব্যতিরেকে সাধারণ সদস্য নিবার্চনের জন্য ইউনিয়নকে ৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করতে হবে ও ৩ (২) ধারায় সংরক্ষিত আসনে সদস্য নিবার্চনের উদ্দেশ্যে একটি ইউনিয়নকে ৩টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করতে হবে।’
জানা যায়, ২০১০ সালের ১৮ জুলাই উপজেলার পোপাদিয়া, আমুচিয়া ও কড়লডেঙ্গা ইউনিয়ন ও কধুরখীল ইউনিয়নে নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন নিয়োগ সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার।
আইনী জটিলতার কারণে কাজী নিয়োগ তখন হয়নি। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী পোপদিয়া, আমুচিয়া ও কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নে অবসর জনিত কারণে তিন ইউনিয়ন শুন্য ঘোষণা হলে সকল প্রক্রিয়া শেষে ওই বছরের ১৮ আগষ্ট এ তিন ইউনিয়নের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তবে কধুরখীলের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে পূর্বের ন্যায় নিয়োগ প্রাপ্ত কাজী এ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এসআরও নং ৩১৪-আইন/২০১২। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯(২০০৯ সনের ৫৮ নং আইন) এর ধারা ৪ এর উপ-ধারা (২) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলাধীন পূর্ব গোমদন্ডী ইউনিয়ন, পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়নের ৬ ওয়ার্ড এবং কধুরখীল ইউনিয়নের ৩ওয়ার্ড নিয়ে পৌরসভা হিসেবে ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করে। ফলে কধুরখীল ইউনিয়ন অসম্পন্ন ইউনিয়নে পরিণত হয়।
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৬১নং আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ওয়ার্ড গঠন ৩ (১) ধারা মতে এ ইউনিয়ন অসম্পন্ন ই্উনিয়ন হিসেবে গণ্য হয় ও ইউপি নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়।
এসব আইনী প্রক্রিয়া থাকার পরও ২০১০ সালে বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে সে সময় আবেদনকারীদের দিয়ে উদ্যেশ্য প্রণোদিত কাজী নিয়োগ সংক্রান্ত নিয়োগ কমিটির গোপন সভা দেখিয়ে এবং গোপনে স্বাক্ষর নিয়ে প্যানেল তৈরির কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে এলাকায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সাব-রেজিস্ট্রার যৌথ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এলাকার একাধিক প্রার্থী ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস।
কধুরখীল ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিচ বলেন, কাজী নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির সভা একাধিক বার আহবান করলেও একবারো হয়নি। হঠাৎ প্রায় সাড়ে ছয় বছর পর এ সংক্রান্ত আইনের সকল ধারাকে অগ্রাহ্য করে পূর্ব পরিকল্পিত ও উদ্যেশ্য প্রণোদিত ভাবে কাজ করে। এক পর্যায়ে আমাকে ইউএনও কাজী মাহবুবুল আলম (সম্প্রতি পদোন্নতিপ্রাপ্ত) উনার বাসায় ডেকে নিয়ে এক ধরণের জোড় করে পূর্ব থেকে তৈরী করা প্যানেল কপিতে স্বাক্ষর করতে বলে। আমি কোন ধরণের মিটিং এর অসম্পুর্ন ইউনিয়নে কাজী নিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা করতে চাইলেও এতে কোন কর্ণপাত না করেই স্বাক্ষর নিয়ে নেন।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাওলানা মো. ওবাইদুল হক হক্কানী বলেন, ইউনিয়নে কাজী নিয়োগের জন্য হাল নাগাদ প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করতে হবে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৬১নং আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ওয়ার্ড গঠন ৩ (১) ধারার উল্লেখ মতে ৯ ওয়ার্ডে পূর্ণ নয় এমন অসম্পন্ন ইউনিয়নে নির্বাাচন বা কাজী নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া কোন ভাবেই গ্রাহ্য হয় না। এ ছাড়া ৭বছর পূর্বের আবেদনের প্রেক্ষিতে কাজী নিয়োগ কার্যক্রম বা প্যানেল কোন ভাবেই গ্রাহ্য নয় বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে কাজী নিয়োগ সংক্রান্ত নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার এস এম শফিউল বারীর মোবাইলে বার বার ফোন করা হলে কখনো বন্ধ, কখনো কল রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ নিয়ে জেলা রেজিস্ট্রার আলী আহম্মদ এর মোবাইল নাম্বারে বার বার ফোন করলে তা রিসিভ করেননি।