চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব থেকে পলাতক ও ছাত্র-জনতা কর্তৃক বিতাড়িত ও ফ্যাসিবাদী একটি গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রেস ক্লাবের সদস্য, জৈষ্ঠ সাংবাদিক ও কয়েকজন নারী সাংবাদিককে লক্ষ্য করে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল ও লাঞ্ছনাকর মন্তব্য করেছে-এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ওক্ষোভ প্রকাশ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব।
শুক্রবার দেওয়া এক বিবৃতিতে ক্লাব নির্বাহী কমিটি জানায়, ফেসবুকে প্রেস ক্লাবের সদস্য ও নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অশ্লীল, অপমানজনক ও মানহানিকর বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। এই ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়; বরং মুক্ত গণমাধ্যম, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, পেশাগত মর্যাদা এবং সামাজিক শৃঙ্খলার ওপর সরাসরি হামলা। এই ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠি বিগত জুলাই আন্দোলনের সময় নগরীর চেরাগীপাহাড়ে নারী আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালিয়েছে এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আইন- শৃংখলা বাহিনী ও ফ্যাসিবাদের পেটোয়া বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার মত ন্যাক্করজনক ভূমিকা রেখেছিলো। অপরাধীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা এখন নতুন করে হুমকী-ধমকী দিয়ে যাচ্ছে।
“সাংবাদিকদের সম্মান ও নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যেকোনো অপতৎপরতা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব কোনোভাবেই সহ্য করবে না। অপরাধীরা যে-ই হোক, তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ক্লাব দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এসব কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বাংলাদেশের একাধিক আইনের আওতায় দণ্ডনীয় অপরাধ।
কয়েকজন সাংবাদিক নামধারী কর্তৃক নারী সাংবাদিক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনান্য ক্ষেত্রে যে অবমাননাকর ও কূরুচিপূর্ণ মন্তব্যের যে সাক্ষ্য- প্রমান পাওয়া গেছে তা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০২৪ এর ধারা ২৬ (অনলাইন হয়রানি বা কটুক্তি—কারাদণ্ড ও জরিমানাযোগ্য), ধারা ২৭ (জেন্ডার বেইজ পেশাভিত্তিক বিদ্বেষমূলক বক্তব্য—শাস্তিযোগ্য অপরাধ), ধারা ২৯ (ডিজিটাল মাধ্যমে মানহানি—দণ্ড ও জরিমানা)। দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ৫০৯ (নারীর প্রতি অবমাননাকর শব্দ বা ইঙ্গিত—এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা), ধারা ৫০০–৫০১ (সম্মানহানিকর বক্তব্য—দণ্ডনীয় অপরাধ) । এ ছাড়া কর্মক্ষেত্র নিরাপত্তা ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী নারীকে লক্ষ্য করে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রাষ্ট্রীয়ভাবে শাস্তিযোগ্য।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চার দফা দাবি উত্থাপন করেছে:
১. দোষীদের শনাক্ত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও দণ্ডবিধির আওতায় মামলা রুজু ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
২. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত তদন্ত ও গ্রেফতার অভিযান।
৩. অভিযুক্তরা যেসব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় কর্মরত, সেসব কর্মস্থলের কর্তৃপক্ষের কাছে অপরাধীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি।
৪. নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনলাইন হয়রানি মনিটরিং জোরদারের আহ্বান।
প্রেস ক্লাবের নির্বাহী কমিটি মনে করে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কটূক্তি, অপমান বা হুমকি—মুক্ত গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত। এসব অপরাধের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত না হলে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ আরও বাড়বে বলে সতর্ক করে প্রেস ক্লাব। সাংবাদিকদের মর্যাদা রক্ষায় শূন্য-সহনশীলতার নীতি অনুসরণ এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্র চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব অঙ্গীকারাবদ্ধ।
সাংবাদিকদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সব ধরনের আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত। “যেকোনো অমানবিক আচরণকারী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ গড়ে তুলবে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব।
