জেলা প্রতিনিধি, রাঙামাটিঃ

রাঙামাটি শহরের গরুর মাংস বিক্রেতাদের নির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের কারনে দূর্ভোগে পড়েছে হাজারো ক্রেতা সাধারণ। শহরের বনরূপা, রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি এলাকার চারটি দোকানে গত রবিবার থেকে জবাইকৃত গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছে মাংস ব্যবসায়িরা। কোনো প্রকার অগ্রিম ঘোষণা ছাড়াই মাংস বিক্রি আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে গরুর মাংস ক্রেতা সাধারণ।
খোঁজ নিয়ে গিয়ে জানাগেছে, রাঙামাটি জেলা প্রশাসন থেকে নির্ধারিত করে দেওয়া ৪৫০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি মূল্যে মাংস বিক্রি করতে রাজি নয় বিক্রেতারা। তাই তারা আপাতত পরবর্তী নির্দেশনা পাওয়ার আগ পর্যন্ত শহরের কোথাও মাংস বিক্রি করবে না।
এ ব্যাপারে বনরূপার মাংস বিক্রেতা জাফর জানিয়েছেন, দুইমণ ওজনের একটি গরু আমাদের কিনতে হয় মিনিমাম ৪২ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারি নির্দেশনানুসারে সেই গরুটি সম্পূর্ন বিক্রি করলে মূল্য পাওয়া যাবে সর্বসাকূল্যে ৩৬ থেকে ৩৭ হাজার টাকা। তাতে আমাদের লাভতো দূরের কথা, একটি গরুর মাংস কিনতে আমাদেরকে পাঁচজন কর্মচারি রাখতে হয়। যাদের প্রত্যেকর বেতন ৪৫০ থেকে ৫০০টাকা করে দিতে হয়। এছাড়াও আমাদের দোকান ভাড়াও রয়েছে। সবকিছু মিটিয়ে বর্তমানে আমাদের প্রতিকেজি মাংস বিক্রি করতে হচ্ছে অন্তত একশো টাকা লস দিয়ে।
অপরদিকে রিজার্ভ বাজারের মাংস বিক্রেতা হারুন জানিয়েছেন, ৫শ টাকার কমে মাংস বিক্রি করলে আমাদের লাভে-লসে সমান সমান থাকে। তারপরও আমরা এখানকার ক্রেতা সাধারনের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ৫শ টাকা কেজি ধরে হাড্ডিসহ মাংসের কেজি বিক্রি না করলে আমাদের কোনোভাবেই পোষাবে না।
তাই আমরা জেলা প্রশাসন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আপাতত মাংস বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মাংস বিক্রেতারা জানান, গত ১৪ই মে রবিবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আইন শৃঙ্খলা সভায় অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক রাঙামাটি শহরে প্রতিকেজি মাংস ৪৫০ টাকার বেশি বিক্রি করা যাবেনা মর্মে মূল্য নির্ধারন করে দেন। এতে করে আমাদেরকে কোনো কিছুই বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
মাংস বিক্রেতারা জানান, সেদিনে সভায় জানানো হয়, নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি করতে না পারলে মাংস বিক্রি না করার জন্যে। তাই আমরা মাংস বিক্রি করছিনা। লস দিয়ে ব্যবসা করার চেয়ে না করাই ভালো।
ব্যবসায়িদের সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরের চারটি দোকানে প্রতিদিন চারটি থেকে সাতটি গরু জবাই হয়। শহরের আট শতাধিক বাসিন্দা এই দোকানগুলোর নিয়মিত কাষ্টমার।
গত রবিবার থেকে মাংস বিক্রি বন্ধ রাখায় শহরবাসী মাংস সংগ্রহ করতে পারছেনা। অতি প্রয়োজনীয়তার সময় রানীর হাট, মাইনী থেকে মাংস সংগ্রহ করছেন অনেকেই।
রাঙামাটির মাংস ব্যবসায়িরা জানান, মাইনী-মারিশ্যা এলাকাগুলোতে সেখানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে ৫শ টাকা কেজি ধরে। এছাড়াও রানীর হাট, রাউজানেও মাংস বিক্রি করা হচ্ছে একই মূল্যে।
অথচ সে সকল এলাকা থেকে গরু প্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশী খরছ ব্যয় করে রাঙামাটিতে এনে সেই গরুর মাংস ৪৫০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করা কোনো ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা ৫শ টাকা কেজি ধরে মাংস বিক্রির অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত শহরের কোথাও মাংস বিক্রি করবো না।
উল্লেখ্য, স্থানীয় বাজারে গরুর মাংসের দামবৃদ্ধির অভিযোগ উঠায় গত ১৪ই মে রোববার জেলা আইনশৃঙখলা সভায় জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান আশ্বস্থ করে বলেন, গরুর মাংসের দাম যা নির্ধারন করা হয়েছিল তাই থাকবে অর্থাৎ হাড্ডিসহ ৪৫০ টাকা এবং হাড্ডিছাড়া ৫৫০ টাকা। এই দামের বাইরে গিয়ে ব্যবসায়িরা বেশি দামে বিক্রি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেছিলেন, নির্ধারন করে দেয়া দামেই গরুর মাংস বিক্রি করতে হবে। যদি ব্যবসায়ীদের না পোষায় তাহলে তারা ব্যবসা করবেন না। আর ক্রেতারা যদি ঐ দামে কিনতে না পারেন সেটা ক্রেতাদের বিষয়। তবে কোন অবস্থাতেই দাম বৃদ্ধির সুবিধা নিতে পারবে না। এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে সাথে সাথে ঐ ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে রবিবারের এই সভার পর থেকেই মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছে মাংস বিক্রেতারা।