আলমগীর মানিক, রাঙামাটি।
রাঙামাটির জুড়াছড়ির হতদরিদ্র জুমিয়া পরিবারের মা হীন ইমোনা চাকমাকে সম্পূর্ন সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব নিয়েছে রাঙামাটি সেনা রিজিয়ন। সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি পোষ্টে এই হতদরিদ্র মেয়েটির চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে সহায়তা চেয়ে আবেদনে সাড়াদিয়ে দূর্গম পাহাড়ে অবস্থান করা ইমোনা চাকমাকে রাঙামাটিতে ডেকে এনে তার চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার রাঙামাটিস্থ ৩০৫ বিগ্রেড কর্তৃক বহনের কথা নিশ্চিত করেছেন রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ গোলাম ফারুক।
বর্তমানে জুড়াছড়িস্থ ঘিলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ইমোনা চাকমা বিগত ২০০৯ সালে নিজ বসতগৃহে ঘুমিয়ে থাকাকালীন সময়ে আকস্মিক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আগুনে পুড়ে যায় শরীরের বেশির ভাগ অংশ।
এতে করে বামপাশের অধিকাংশ ও শরীরের ডানপাশের আংশিক অংশ পুড়ে মারাত্মক আহত হয়। সেসময় মানুষের সহায়তায় এবং সহায় সম্বল বিক্রি করে কোনো রকম চিকিৎসা করে ইমোনাকে ভালো করে তুলেন বাবা জুমচাষী কৃষক মরদ স চাকমা। এরপর ২০১৪ সালে ইমোনার মা পদ্মানন্দী মারা যান। তখন থেকে ইমোনার চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে।
গ্রামের এক শল্য চিকিৎসকের চিকিৎসা করতে গিয়ে ইমোনার বাম হাতের নীচের অংশ থেকে কোমরের নীচের অংশের মাংস ও চামড়া পুড়ে যাওয়ায় তার শরীর সংকুচিত হয়ে আসে। ফলে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছিলো ইমোনা।
এছাড়াও প্রয়োজনীয় ওষুধ খেতে না পারায় তার শরীরের পুড়ে যাওয়া অংশে সংক্রামিত হয়ে চুলকানো ও ক্ষত হতে থাকে। এমাবতাবস্থায় ইমোনার পিতা লালন চাকমা করুন আর্তিতে এলাকার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি লালন চাকমা ইমোনার কয়েকটি ছবি তুলে নিজের ফেসবুক একাউন্টের টাইম লাইনে ইমোনা চাকমার সুচিকিৎসা নিশ্চিতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়ে স্টেটাস দেন।
লালন চাকমা জানান, আমি শনিবার বিকেলে স্টেটাসটি আপডেট দিয়েছি। এরপর রাতের বেলায় রাঙামাটি রিজিয়ন থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করে রোববার সকালে রাঙামাটি আসার জন্য বলে। আমি দুপুরে ইমোনাকে নিয়ে রাঙামাটি রিজিয়নে আসি। বিগ্রেডের জি-টু-আই মেজর তানভীর স্যার আমার সাথে কথা বলে রিজিয়ন কমান্ডারকে বিস্তারিত জানায়। পরে দুপুরে রিজিয়ন কমান্ডার স্যার আমার সাথে এবং ইমোনার সাথে কথা বলে ইমোনাকে সুস্থ করে তোলার সকল দায়-দায়িত্ব রাঙামাটি সেনা রিজিয়ন নিবে বলে আশ্বস্থ করেছেন। লালন চাকমা বলেন, হতদরিদ্র ইমোনা চাকমার সুচিকিৎসার দায়িত্ব রাঙামাটি সেনা রিজিয়ন গ্রহণ করায় তাদের প্রতি ইমোনার পরিবারসহ আমরা সকলেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এদিকে, আগামী ৩০শে মে ইমোনাকে চট্টগ্রাম পাঠানো হবে বলে রাঙামাটি রিজিয়ন সূত্রে জানাগেছে। রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, ইমোনাকে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদানে যতটাকাই খরচ হোক না কেন, রাঙামাটি রিজিয়ন এর পক্ষ থেকে তার সবটুকুই বহন করা হবে। এসময় তিনি ইমোনার পিতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে রাঙামাটি আসার আমন্ত্রণ জানান।
এদিকে ইমোনা চাকমা তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায়, তার চিকিৎসা সেবার দায়িত্ব নেওয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা রাঙামাটি রিজিয়নের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানায়, আমি আবারো ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারবো। নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাবে। পড়ালেখা করে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবো।
