ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

উষ্ণ একটি সন্ধ্যা  

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

 

শাম্মী তুলতুল

 

আমরা দুজনে গাড়ীতে উঠে পড়লাম।সোজা সমুদ্রের পাড়।সূর্য প্রায় ডুবু ডুবু। দুজন একটা বেঞ্চ নিয়ে সমুদ্রের সামনাসামনি বসলাম।তারেক ভাই তার লেখা কবিতা গুলো একটার পর একটা উপস্থাপন করল।এতো সুন্দর করে কবিতা আবৃত্তি করতে জানে তারেক ভাই আগে জানতামই না।জানতাম ভাল কবি সে। কিন্তু ভাল আবৃত্তিকার আজ জানতে পারলাম।কবিতার পালা শেষ হলে অনেক্ষণ দু’জন চুপ।সমুদ্রের গর্জনের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার আমাদের নীরবতা।গর্জনটাই অনেক মধুর মনে হচ্ছিল।

.

অনেকক্ষণ পর বললাম, জানো এই সাগর কত জনের জ্যান্ত শরীর খেয়ে পেট ভরিয়েছে।কতজনের বুক খালি করেছে।বুক খালি করে পেট ভরে ঢেকুর তুলেছে।একবার ভাবতে পার কি ভয়ানক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে সেই সব পরিবার?আমারতো ভাবলেই লোম খাড়া হয়ে যায়।শরীর শক্ত হয়ে যায়।

কত কিছু নিরবে হজম করছে।আর মানবজাতির নিষ্ঠুর তামাশা দেখে মিটমিট করে হাসছে।তবুও সে সুন্দর।তার সৌন্দর্য কখনও ফুরিয়ে যাওয়ার নয়। কখনও বৃদ্ধ হবে না সে।

বাহ দারুণ বলেছ তো।কবিতা তো তোমার লেখা উচিৎ।

কি বললে ? অন্তত এমন উপহাস করোনা।

এই মেয়ে কি বলে।সত্যি বলছি।উপহাস করবো কেন?

আস্তে বল।কবিতা লেখা এত সহজ নয়। তুমি কবি তাই তোমার কাছে সহজ লাগছে।আমার খুব কঠিন লাগে।আসলেই কবিতা আমার কাছে খুব কঠিন।

আরে  নাহ চেষ্টা করলে সবাই পারে।তুমিও পারবে।

আচ্ছা তাহলেতো তোমাকে চাই। তোমাকে লাগবে।

আমি আছিনা।

তাহলে কথা দাও শেখানোর  দায়িত্ব তোমার।

কথা দিলাম।আপনি যাহা বলিবেন তাহাই হইবে।

পিহু তারেক ভাইয়ের কথা যতই শুনছে ততই অবাক হচ্ছে।এত রসিক তারেক ভাই কবে থেকে হল। আগে কখনো দেখেনি এমন তাকে।খুব গম্ভীর লোক ছিল সে।কাল -আজের মধ্যে এত পার্থক্য হয় কি করে।অনেক প্রানবন্ত মনে হচ্ছে তাকে। যাক একদিকে ভালোই হল। আমার লাজুকতা ধীরে ধীরে কাটবে।আমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল, কি দেখছ অমন করে?

কিছু না।ভাললাগা দেখছি।

বুঝেছি।ওই দিকে দেখো আরও ভাল লাগবে। জাহাজের সাড়ি গুলো দেখতে কত দারুণ লাগছে। মিটমিট করে চোখ জুড়ানো আলোর জ্বলকানি।অনেক সুন্দর ? চারপাশের বাতাসটাও খুব  মিষ্টি পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে।

জানো পিহু , জীবনে কিছু ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় হাটতে হাঁটতে  হাপিয়ে উঠেছিলাম। ঢাকা শহরের ব্যস্ততা আর কোলাহল ছেড়ে  কক্সবাজার এসে অনেকদিন পর একটা উষ্ণ সন্ধ্যা উপভোগ করলাম।তাও তোমার সঙ্গে । ঢেউয়ের ছিটকে পরা পানি মনকে অনেক বছর পর চাঙ্গা করে দিল । সারাজীবন মনে থাকবে।বার বার এমন একই রকম পরিবেশ দ্বিতীয়বার আসেনা।তাই এই সৃতি ভোলার নয়।একটু শ্বাস নিয়ে

হঠাৎ তারেক ভাই বলে উঠল, তোমার হাতটা ছুঁতে খুব ইচ্ছে করছে পিহু। দেবে একটু ?

কথাটা বলতেই আমি একটু তথমত খেয়ে গেলাম।কি বলবো কি, করবো বুঝতে পারলাম না।আমার নীরবতাকে সে অনুমতি ভেবে নিল।

হাতটা  ছুঁতেই আমার ভিতর এক অজানা অনুভুতি কাজ করা শুরু করল। আলতোভাবে পরম যত্নে তারেক ভাই আমার হাতটা ধরে রাখল ।কেমন এক অস্থিরতা অনুভব করা শুরু করল শরীরে। মন বলছে হাতটা ছেড়ো না। ভালো লাগছে । নিজের আবেগ, অনুভুতিকে শক্ত খোলসে বেঁধে ফেলেছিলাম। কিন্তু তারেক ভাইয়ের স্পর্শ আমাকে আবার আগের মতোই অস্থির করে দিলো। সহজেই বরফের মতো গলছি আমি ? পবিত্র একটা স্পর্শ পাচ্ছি ।কিন্তু হঠাৎ আমার রক্ষণশীলতাকে শ্রদ্ধা করে তারেক ভাই আমার হাতটা ছেড়ে দিল। খুব ইচ্ছে করল  তারেক ভাইয়ের  বুকে মুখ লুকাতে । কিন্তু সন্ধ্যার অন্ধকার , সমুদ্রের ঢেউ , অদুরের ঝাউবন যে আমাকে দেখছে । সুযোগ হল না । হাতটা ছেড়ে একটু বিরক্ত ভাব নিয়ে তারেক ভাই বলল,আচ্ছা তোমরা এমন কেন?এত নিয়ম মেনে চল কেন?তুমি কি জানো কিছু কিছু নিয়ম মানুষের তৈরি।যা তারা ধর্মের নামে চালিয়ে  দিতে চায়।

জানি। অনেকে  সঠিক«  বিশ্লেষণ না জেনেই বিশ্বাস করে। যেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে  অল্প   জ্ঞান আর  কথায় কথায় না জেনে   ভুল ফতোয়া  দেওয়া কাঠ মোল্লাদের সৃষ্টি।যেটা সৃষ্টি করে তারা   অহেতুক মানুষকে বিভ্রান্ত করে।

তাহলে তো  সঠিক মৌলানার কাছে গিয়ে সমাধান চাওয়া শ্রেয়।

হ্যাঁ তাই করা উচিৎ।

মানুষতো ভুল বোঝে। আমাদের ধর্ম নারীদের নিজ নিয়ন্ত্রণে থেকে সকল স্বাধীনতা  ভোগের  অধিকার দিয়েছে।এটা কি নারীর জন্য কম বলে মনে হয়।বল?

মোটেও কম নয়।

তাহলে কেন এত নারীবাদ কেন এত পুরুষবাদ বলে মানুষ গলা ফাটাচ্ছে।

তোমরা মেয়েরাই তো এসব করছ।

আবার আমরা, তোমরা কেন?দু, দিকেই কিছু ঠিক, কিছু বেঠিক আছে,

মানো তাহলে।

কেন মানবনা।জোর করে কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়াকে আমি মহত্ত বলিনা।তুমিও বলনা।

কইজনে আর এমন ভাবছে তোমার মত। রাতারাতি আমরা সবাই সবার সেরা হওয়াই লিপ্ত।কথা শেষ করতে না করতেই দু, হাত ঝাড়া মেরে বসা থেকে উঠে গেল তারেক ভাই।

ভঙ্গিতে মনে হল বিদায়ের ঘণ্টা বাজল।

চলে যাবে?

যেতে তো হবে।

হুম,যেতে তো হবেই।

চল তাহলে।

কি আর করা আমিও দাড়িয়ে গেলাম।

পথ চলতে চলতে  তারেক ভাই বলল,পিহু তোমার স্পর্শ  আমাকে অনেক কাঁদাবে এবার।

আবার এলে সেদিন শুধু তোমার স্পর্শ নয়, সমস্ত তোমাকে পাবো  এই আশায় ফিরছি।

কথা দাও।

সাহসের সীমা অতিক্রম করতে পারলাম  না।মাথা নিচু করে চুপ করে রইলাম আমি।

মাথা নিচু হতে দেখে একটা মুচকি হাসি দিল তারেক ভাই।

বাস কাউনটার পর্যন্ত  তারেক ভাইয়ের সাথে গেলাম।বিদায় বেলা মনে হচ্ছিল দুজনেই কিছু বলতে চাই…কিন্তু মন সায় দিলনা।এলোমেলো ভাবনায় সব শব্দ নড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল।

রিকশায়  অন্যমনস্ক হয়ে বসে পরলাম। এমন সময় একটা ম্যাসেজ এল ফোনে।দেখলাম তারেক ভাইয়ের ম্যাসেজ।

“পিহু তুমিতো  প্রকৃতি, বৃষ্টি তোমার অলঙ্কার। থ্যাঙ্কস ফর সাচ এ ওয়ার্ম ইভেনিং। মিস ইউ ,মিস ইউ লট। তুমি সারাজীবন আমার অনুভুতি জানার জন্য অপেক্ষায় ছিলে।বুঝিনি তখন। দেরীতে হলেও যখন বুঝতে পেরেছি আর ফিরে যাবনা আগের জীবনে । ভালো থেকো মিষ্টি মেয়ে। অপেক্ষায় থেকো”।যতদিন না আমার জীবনের নিয়ন্ত্রণ অন্নের অধিকার থেকে শেষ করবনা ততক্ষণ আমায় ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখো। মুহূর্তেই আমার মনটা ভাল হয়ে গেল। ভীষণ ভাল । যতটা ভাল হলে ভাল থাকা যায়।

 

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print