
মহানগরীর মাদারবাড়ীতে গৃহবধু সোমা হত্যার ২ মাস পরেও আসামীদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। উল্টো বাদীকে মামলা আপোষ করতে নানা ধরনের চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
আজ রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন নিহত সোমার ভাই মামলার বাদী মো. ফয়সাল। লিখিত বক্তব্যে ফয়সাল বলেন ২০১৩ সালে নগরীর পশ্চিম মাদার বাড়ী এলাকার মো. সেলিমের ছেলে মো. সুজনের সাথে সোমা আক্তার সুমি’র বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী সুজন বিভিন্ন সময় যৌতুকের দাবীতে সোমাকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করত।
সর্বশেষ গত ২৮ জুন সুজনের দাবীকৃত টাকা এনে দিতে অস্বীকৃতি জানালে সোমাকে শ^াসরুদ্ধ করে হত্যার পর লাশ ওড়না পেচিয়ে ঘরের ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে। এ ঘটনার পর ডবলমুরিং থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি।

এদিকে নিজের মেয়ের মৃত্যুর পর শোকে তার মা স্ট্রোক করে মারা যায় বলে জানান ফয়সাল। সংবাদ সম্মেলনে ফয়সালের বোন রুমা আক্তার,ভাই ফাহিম ইকবাল, মুস্তাকিম আরজু,মো. জুয়েল ,মো. জিকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সোমার বড় বোন রুমা জানান,বিয়ের পর সোমার স্বামী সুজন ,তার মা জোহরা বেগম (৪২), ভাই ইরফানুল হক শাওন (২২) বোন জান্নাতুল ফেরদৌস মিম (২০) ও তাদের বাবা মো. সেলিমের প্ররোচনায় সোমাকে চাপ প্রয়োগ করে ব্যবসা করার জন্য মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়। তার পরেও বিয়ের দুই বছরের মধ্যে সোমাকে বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করতে থাকে। এ ছাড়া স্বামীর অবর্তমানে সোমার দেবর, ননদ ও শাশুড়ী মিলেও তাকে নানা ভাবে শারিরীক নির্যাতন করত।
রুমা জানান, বিয়ের দেড় বছরের মাথায় সোমার একটি মৃত কন্যা সন্তান হলে এ নিয়েও আসামীরা তাকে নানা ধরনের মানষিক নির্যাতন করে। গত ২৮ জুন সোমার সাথে তার স্বামী সুজনের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সুজন সোমাকে কিল ঘুষি মারতে থাকে। এসময় সোমার দেবর শাওন, ননদ ফেরদৌসসহ সোমাকে রুমের মধ্যে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে গলায় দড়ি পেচিয়ে শ^াসরুদ্ধ করে হত্যার পর লাশ তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এর পর সোমার স্বামী সুজন ফোন করে আমার ভাই ফয়সালকে বলে যে তোমার বোন গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে এবং তার মরদেহ মেহেদিবাগস্থ ন্যাশনাল হাসপাতালে আছে।
এদিকে তারা যখন সোমাকে ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যায় তখন ডাক্তারকে বলে যে বান্ধবীর বাড়ী বেড়াতে যাওয়ার পথে রিক্সায় ওড়না পেচিয়ে আহত হয়েছে। কিন্তু ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখেন যে সোমা অনেক আগেই মারা গেছেন। এর পর সোমার মরদেহ চমেক হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে সোমার গলায় চিকন রশির দাগ, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের জখম, নাকের উপরে জখম দেখা যায়।
এ ঘটনার পর ডবলমুরিং থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ ঘটনার সঠিক তদন্ত না করে আসামীদেওরপক্ষে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন সোমার ভাই ইকবাল। তিনি জানান, মামলা করতে গেলে পুলিশ হত্যা মামলা না নিয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করে। এ ছাড়া মরদেহের সুরতহাল রিপোর্টটিও দেয়নি। ইকবাল প্রশ্ন করেন বলেন সোমা যদি আত্মহত্যাই করে তবে তার শরীরের বিভিন্নস্থানে জখমের চিহ্ন কেন ? পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট আড়াল করল কেন ? এ ঘটনার পর সোমার স্বামী সুজনসহ সকলেই পলাতক রয়েছে কেন ?
এদিকে গত ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১ এর আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হলে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে জ্যুডিশিয়াল তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এমামলা হওয়ার পরেও পুলিশ এখনো পর্যন্ত আসামীদেরকে গ্রেফতার না করে উল্টো মামলা আপোষ করতে অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করছে। এ ছাড়া আসামীরা সোমার পরিবারের লোকজনকে নানা ভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি ধমকি অব্যাহত রেখেছে।