
মহানগরীর উপকণ্ঠে ও জেলার সীতাকুণ্ডের পাহাড়ী এলাকা জঙ্গল সলিমপুরে ছিন্নমূল অধিবাসীদের নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের চলছে রাজনীতির নোংরা চালবাজি।!
জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর গত মাসাধিকাল ধরে অন্ধকারে থাকা জঙ্গল সলিমপুরে স্থানীয় সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলমের নির্দেশে পিডিবি বিদ্যুৎ সংযোগ দিলেও ১২ ঘন্টার মাথায় আবারও সে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে।
জানাগেছে সরকারী খাস জায়গা দখল করে অবৈধভাবে বসবাসকারী কয়েক হাজার মানুষ গত এক মাসেরও বেশী সময় অন্ধকারে রাত কাটছে।
পাহাড়ের পাদদেশে পাহাড় কেটে ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী এসব জনগোষ্ঠিকে উচ্ছেদ করতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছে প্রশাসন। গত দেড়মাস আগে এখানে পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৩ জনসহ ৫ জনের মত্যু ঘটে। এর পরপরই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানকার সব ধরণের নাগরিক সুবিধা কেড়ে নেয়া হয়। বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় কয়েক হাজার পরিবারে বিদ্যু সংযোগ।
এর পর থেকে বিদ্যুতের দাবীতে বিভিন্নভাবে আন্দোলন করে আসছিল এখানকার মানুষ। দু সপ্তাহ আগে বিদ্যুৎ পুণ:সংযোগের দাবী নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করতে গিয়ে গ্রেফতার হয় আন্দোলনকারী ৫ ছিন্নমূল নেতা।

জানাগেছে, জঙ্গল ছলিমপুর ছিন্নমূলে দীর্ঘ ১মাস ৮দিন বিচ্ছিন্ন থাকার পর মঙ্গলবার স্থানীয় এমপি দিদারুল আলমের নির্দেশে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সংযোগ প্রদান করে। কিন্তু ১২ ঘন্টা পার না হতেই আবার সে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যুৎ অফিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে যাবার সময় কয়েক গাড়ী পুলিশ নিয়ে যায়। পুলিশের উপস্থিতিতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পর হাজার হাজার মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। একপর্যায়ে জনরোষের ভয়ে এলাকা ত্যাগ করে পুলিশ ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীরা।
ছিন্নমূল সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি গাজী ছাদেকুর রহমান ছাদেক জানান, দীর্ঘ এক মাসেরও বেশী সময় আমার হাজার হাজার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে অন্ধকারে দিন যাপন করছি। এখানে মসজিদ মাদ্রাসা, স্কুলে লেখাপড়া ইবাদত বন্ধ হওয়ার উপক্রম বিদ্যুতের অভাবে। আমরা স্থানীয় এমপিকে অনুরোধ করলে তিনি আমাদের দুর্দশা দেখে বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে সংযোগ দিলেও তা আবার বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তারা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছি। প্রয়োজনে ২৪হাজার পরিবারকে নিয়ে চট্টগ্রাম শহর অচল করে জানিয়ে দিতে চাই ,শান্তিতে বসবাস করতে হলে ছিন্নমূল বস্তিবাসীর প্রয়োজন আছে কিনা..?

এদিকে মঙ্গলবার বিকালে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন খবর ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষনিকভাবে হাজার হাজার ছিন্নমূল লোকজন জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। এসময় জঙ্গল ছলিমপুর ছিন্নমূল সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সমাবেশে বালুর মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বালুর মাঠে ছিন্নমূল সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতি গাজী ছাদেকুর রহমান ছাদেক, সাধারণ সম্পাদক কাজী মশিউর রহমান, জাতীয় শ্রমিক লীগ নগর নেতা বশির উল্লা ,আব্দুর রশিদ, ইস্রাফিল, মুকুল বোস, এম.এ সালাম, আমজাদ হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আরমান, ডাঃ জে.এম দাশ বক্তব্য রাখেন ।

তারা বলেন, সংসদীয় আসনের এমপি দিদারুল আলমের নির্দেশে ও বিদ্যুৎ সচিবের অনরোধে আলোবিহীন এলাকায় দ্রুত বিদুৎ সংযোগ প্রদান এবং মানবিক প্রয়োজন বিবেচনায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সহায়তা দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে তার নূন্যতম অধিকার রক্ষার আহবান করলে বিদ্যুৎ কর্র্র্তৃপক্ষ মঙ্গলবার সংযোগ দিয়ে জঙ্গল ছলিমপুর ছিন্নমল বস্তিবাসীর প্রায় ২৪ হাজার পরিবারকে সস্তি দেন। কিন্তু তার মাত্র ১২ঘন্টা পরেই ডিসির নির্দেশে পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ করে ছলিমপুর ছিন্নমল বস্তিবাসীর সংযোগ বিচ্ছন্ন করতে পুলিশ ও বিউবো লাইনম্যানরা আসলে জনতার তীব্র প্রতিরোধে ফিরে জান।
এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে ১৩৭৪/উচ্ছেদ নং-৭ ধারায় নোটিশ ১৭ আগষ্ট ওই এলাকায় অবৈধ ভাবে বসবাসরত ১৫১টি পরিবারের তালিকা সম্বলিত উচ্ছেদ পত্র প্রদান করেন বলে জানান। তবে সব এলাকায় উচ্ছেদ কেন করবেন তার জন্যই তারা এমপিকে বল্লে, তিনি ডিসির সাথে দেখবেন এলাকাবাসীকে আশস্ত করেন। বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে নারী-পুরুষ চলাচল পথে শুয়ে-বসে অবস্থান করে তা প্রতিহতের ডাক দেন।