
পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে শাররিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে স্বামী ইমাম মোহছেনকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করানোর অভিযোগ তুলেছেন স্ত্রী সুমি আক্তারের বিরুদ্ধে। নগরীর পাচঁলাইশ থানাধীন মোহাম্মদ এলাকায় গত ৭ সেপ্টেম্বর সকালে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনার ১০ দিনের মাথায় আজ ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে নিহত ইমাম মোহছেনের বৃদ্ধ মা ফাতেমা বেগম (৭৫) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ছেলের প্রতি তার স্ত্রীর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমার কনিষ্ট পুত্র ইমাম হোসেন প্রকাশ ঈমাম মোহছেন। তার সাথে ২০০৫ সালে সুমি আকতারের বিয়ে হয়। তাদের পরিবারের তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। প্রথমদিকে তাদের সম্পর্ক ভালো থাকলেও পরবর্তিতে নানান বিষয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহে রুপ নেয়। গৃহশিক্ষকের সাথে সুমি আকতারের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয় জানাজানি হলে কলহ প্রকট আকার ধারণ করে। এ নিয়ে এলাকায় কয়েকবার সালিশ বৈঠকও হয়।
কান্না জড়িত কন্ঠে ফাতেমা বেগম বলেন, আমার ছেলের সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য সুমি বিভিন্ন চলচাতুরির আশ্রয় নিতে থাকে। এক পর্যায়ের সে গৃহশিক্ষক সাইফুলের সাথে জোট বেধে আমার ছেলেকে বশ করে সমস্ত সম্পত্তি নিজের ও তিন কন্যা সন্তানের নামে লিখিয়ে নেয়। পরবির্তিতে আমার ছেলে বিষয়টি জানতে পেরে অনুশোচনায় ভুগতে থাকেন। এরপর থেকে সুমি আমার ছেলের সাথে আরো খারাপ আচরণ করতে থাকে। এমনকি আমার ছেলেকে ঘর থেকে পর্যন্ত বের করে দেয়। ছেলের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে ৪মাস ১৩দিন জেল খাটায়। জেল থেকে বের হলে ছেলের উপর অত্যাচার আরো বাড়িয়ে দেয়। এক পর্যায়ে ঈমাম মোহছেন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাড়ির ছাদে গিয়ে আত্মহত্যা করে। স্ত্রী সুমি আকতারের নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। আর কোন মায়ের বুক যেন এভাবে খালি হতে না হয়, তাই হত্যাকারীর বিচার দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিতবক্তব্য পাঠ করেন ঈমাম মোহছেনের খালাত ভাই মোশাররফ হোসাইন বলেন, সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর সুমি আকতার অত্যাচার আরো বাড়িয়ে দেয়। এক পর্যায়ে পারিবারি কলহ প্রকট আকার ধারণ করলে সুমি আকতার তার গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। এর পর ইমাম হোসেনকে হয়রানী করার জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের একটি মিথ্যা মামলা দায়ে করেন। স্ত্রী দায়ের করা সে মামলায় স্বামী গ্রেপ্তার হয়ে ৪মাস ১৩দিন কারাগার ভোগ করেন।
কারাভোগের সময়ে সুমি আকতার ঈমাম মোহছেনের ঘর দখল করে নেয়। কারাগার থেকে বেরিয়ে আসলে সুমি ঈমাম মোহছেনকে আর ঘরে ঢুকতে দেয়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে ঈমাম মোহছেনকে ভয়ভীতি ও প্রাণ নাশের হুমকি দিতে থাকে।
এতে ইমাম হোসেন শারিক ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। সে বার বার নিজ ঘরে যেতে চাইলে স্ত্রী অকথ্যভাষায় গালিগালাজ সহ অশোভনীয় আচরণে ঘরে প্রবেশ করতে পারেনি। এতে কয়েক দিন ঘরে সিঁড়ির নিচের এবং বিভিন্ন লোকজনের বাসায় দিনাপাত করেন। এক পর্যায়ে স্ত্রী ধারাবাহিক নির্যাতন, মানসম্মানহানি, মানসিক চাপ পড়ে সে আত্মাহত্যার পথ বেঁচে নেন।
ঘটনার পর থেকে থানার ভুমিকা রহস্যজনক জানিয়ে তিনি বলেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর নিজ ঘরের ছাদের উপর ঈমাম মোহছেন আত্মহত্যা করে। কিন্তু পুলিশ কোন মামলা নেয়নি। তাছাড়া ঈমাম মোহছেনের একটি চিরকুট উদ্ধার করি আমরা। যেখানে অমানবিক নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছে সে। চিরকুটটি থানায় জিডি আকারে দিতে চাইলে, সেটাও গ্রহণ করেনি থানা।
পরবর্তিতে আদালতে গিয়ে সুমি আকতারকে প্রধান আসামী করে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি। মামলায় অন্যান্য আসামীরা হলেন, মোহাম্মদ আলী (৬০), হোসনে আরা বেগম (৫০), রেজিয়া বেগম (৫০), এরশাদ উল্লাহ (২৫), মোহাম্মদ আবুল (৫০), নূর বানু (৪০)।
বর্তমানে মামলাটি সিআইডির তদন্তে আছে। ঘটনার সৃষ্ট তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ঈমাম মোহছেনের ভাই, মো. নাজের, মো. নাছির, মো. হোসেন, ভাবি চেমন আরা, আনোয়ারা বেগম, রোকিয়া বেগম, বোন জোহরা বেগম. নাছিমা আক্তার প্রমুখ।
*খতিবের হাটে স্ত্রীর পরকীয়ায় জীবন দিল ইমাম হোসেন!