
‘তবে কি চট্টগ্রামে সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বন্ধ করে দিতে চান প্রশাসন ? তবে কি বিপ্লবের পূন্যভূমি চট্টগ্রাম প্রতিক্রিয়াশীল অন্ধকারের শক্তির দখলে চলে যাবে ?’ বাঙালি ঐতিহ্য ও লোকজ সংস্কৃতি চর্চার অন্যমত প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম নগরীর ডিসি হিলে তিনটি অনুষ্ঠান ছাড়া সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার যে সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে তার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে সর্বস্তরের সাংস্কৃতিক কর্মীরা এসব প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।
শনিবার বিকেলে নগরীর চেরাগী পাহাড় চত্বরে সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, যেখানে সরকার জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মৌলবাদ প্রতিরোধে সারাদেশে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাড়ানোর জন্য বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন সেখানে ডিসি হিলের মতো স্থানে অনুষ্ঠান করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র স্বাভাবিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করবে না, এতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে সহায়ক হবে। সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার কারণে চট্টগ্রামের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠক-শিল্পীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত ‘সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার’ প্রতিবন্ধক ও বাঙালি ঐতিহ্যের লোক সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। করা হয়।
শহীদ জায়া, মুক্তিযোদ্ধা বেগম মুশতারি শফির সভাপতিত্বে ও আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রাম ও খেলাঘরের সভাপতি প্রফেসর ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ডা. চন্দন দাশ, গণজাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রামের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সুচরিত দাশ খোকন, চবি নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. কুন্তল বড়ুয়া, কবি আশীষ সেন, সাংস্কৃতিক সংগঠক সুনীল ধর, উদীচী চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তা, সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপেন চৌধুরী, সঙ্গীত শিল্পী মানস পাল চৌধুরী, সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ স্বর্ণময় চক্রবর্তী, অবসর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. সঞ্জিত আলম, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পাল, সুচয়ন ললিতকলা কেন্দ্রের প্রধান সমন্বয়কারী তাসকিয়াতুন নূর তানিয়া, সম্মিলিত আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রামের যুগ্ম সম্পাদক সেলিম রেজা সাগর, রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থার রুবেল দাশ প্রিন্স প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, ডিসি হিল চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এটি প্রধান স্থান। এখানে প্রায় ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চা ও বাঙালি ঐতিহ্যের নানা অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়ে আসছে। ডিসি হিলে বাংলা নববর্ষের উৎসব ছাড়াও বই মেলা, লোক সংস্কৃতি উৎসব, নবান্ন উৎসব, বসন্ত উৎসব, বর্ষাবরণের মতো নানা উৎসব উদযাপন করা হয়। পাশাপাশি উদযাপন হয়ে আসছে বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেনের’র নেতৃত্বে সংঘটিত চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ’র বার্ষিকী, শ্রমিক আন্দোলনের ঐতিহাসিক মে দিবসের বার্ষিকী। এসব অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার মানে হচ্ছে, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের টুঁটি চেপে ধরা। অতীতেও এ ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রামের সংস্কৃতি কর্মীরা সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। আগামীতেও এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠবে।