
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর খুনিদের গ্রেফতার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরের অপসারণ দাবী করে কাফনের কাপড় পরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। ছেলে হত্যার এক বছর পরও হত্যাকারীদের কেউ গ্রেফতার না হাওয়ায় চবি প্রশাসন ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধু চত্বরে আজ সোমবার সকাল থেকে অবস্থান কর্মসূচিতে বসেছেন তিনি।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন- আমার ছেলের কবরের মাটি নিয়ে শপথ করে আসছি। এখান থেকে আমার মরা লাশ নিতে হবে। কাফনের কাপড়ে নিতে হবে। যত্তক্ষণ পর্যন্ত একজন আসামীও গ্রেপ্তার না হয় এখান থেকে সরবো না আমি।’ ‘যদি এখান থেকে আমাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়।শহরে প্রেস ক্লাবের সামনে চলে যাব।রাজপথে হাঁটবো। আমাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলুক, না হয় আমার ছেলের আসামীদের গ্রেফতার করা হোক’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগেরর সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফানের চৌধুরীর হত্যাকারীদের বিচার ও আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে আমরণ অনশন পালনরত অবস্থায় এসব কথা বলেন তাঁর মা জাহেদা আমিন চৌধুরী।এ সময় তিনি সাংবাদিকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির নিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের অপসারণের দাবী জানান।

তিনি আরো বলেন, দিয়াজের হত্যা মামলার অন্যতম আসামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার চৌধুরী। তার
বিষয়ে দিয়াজের মা বলেন, ‘খুনি শিক্ষককে আরো প্রমোশন দেয়ার চেষ্টা চলছে। পিএইচডি ডিগ্রী দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।খুনির আসামীরা শিক্ষক হতে পারে না।
সকাল ৯ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে অবস্থান নিয়ে আসামীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। সেখানে অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে চবি মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে শহীদ মিনারে চলে আসেন তিনি। বেলা ১২টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দিয়াজ হত্যার বিচার চাই শিরোনামে একটি ব্যানার ও কাফনের কাপড় পড়ে অবস্থান নেন।
অবস্থান কর্মসূচি শুরুর সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লোকজন জাহেদা আমিন চৌধুরীকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি কান্নায় নুয়্যে পড়েন। তিনি চিৎকার করে দিয়াজ হত্যাকারীদের গ্রেফতার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইফতেখার উদ্দিন ও প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরীর পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তিনি এ কর্মসূচি পালন করে যাবেন বলে জানান।

দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা। আজ সকালে অবস্থান কর্মসূচিতে বসার পর পরই সেখানে ছুটে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাঁরা দিয়াজের মাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি দুপুর পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচিতে অনড় রয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতির সভাপতি মাহফুজুর রহমান খোকন বলেন, ‘আজ সকালে দিয়াজের মা এখানে এসে অবস্থান কর্মসূচিতে বসেন। এ সময় তিনি কাফনের কাপড় পরে ছিলেন। তাঁর হাতে একটি ব্যানারও ছিল। সেখানে দিয়াজ হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং বিচারের কথা লেখা আছে।’
উল্লেখ্য গত বছরের ২০ নভেম্বর চবির ২ নম্বর সড়কের আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে দিয়াজের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। ঘটনার চার দিন পর ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন ও ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন নিহতের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। দফায় দফায় ময়নাতদন্তের পর দিয়াজকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে রিপোর্ট দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।