ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

চবি ছাত্রলীগে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেতে মরিয়া খুনি ও টেণ্ডারবাজরা

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

CU-BCL
ছবি: প্রতিকী।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) তে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেতে নানাভাবে তদবীর চালাচ্ছে বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্তরা। খুনি, চাঁদবাজ, এবং প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের নাজেহালকারীরা এখন চবি ছাত্রলীগের হাল ধরছেন এমন খবরে খোদ সাধারণ কর্মী সমর্থকদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

জানাগেছে, চট্টগ্রামে সিআরবিতে (রেলওয়ে (পূর্বাঞ্চলীয়) সদর দফতরে টেন্ডারবাজি করতে গিয়ে শিশুসহ জোড়া খুনের আসামী, ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতার গলায় জুতার মালা দেয়া ছাত্রলীগ কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কর্মী তাপস সরকার হত্যা মামলার আসামীরা আসন্ন চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পেতে যাচ্ছেন।

আওয়ামীলীগ ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টকারীদের ছাত্রলীগের পদে না আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা থাকলেও চবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির দুই নেতা এই অপরাধীদের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে তালিকা পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে। এসব অপরাধীদের কমিটিতে পদে বসালে বিতর্কিত হতে পারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও এমন ধারণা নেতা কর্মীদের।

এরই মধ্যে রেলওয়েতে টেন্ডারবাজির ঘটনায় জোড়া খুনের অন্যতম আসামী আলমগীর টিপুকে সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র খুনের আসামী ফজলে রাব্বী সুজনকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করায় প্রশ্ন উঠে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বাছাইয়ের যোগ্যতা নিয়ে। তাই পরিচ্ছন্ন ও ত্যাগী কর্মীদের পদ দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে এমনটি আশা করেন চবি’র শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, আপনাদের এবং দলীয় নেতাকর্মীদের আশ্বাস্থ্য করতে চাই। কোন অপরাধির ঠাই ছাত্রলীগে হবে না। এবং সন্ত্রাসী চাঁতাবাজদের জন্য কোন তদবীর গ্রহন হবে না। চবি ছাত্রলীগ কোন অপরাধির নাম জমা দিয়েছে কিনা তা আমরা বাছাই করে দেখবো। এবং তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেবো।

জানা গেছে, চবি ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের ২০ জুলাই। এক বছর মেয়াদী এ কমিটির মেয়াদ আছে আর কয়েকদিন। এরই মধ্যে সাংগঠনিকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় সাত মাসের মাথায় এ কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় কেন্দ্র। ওই সময় তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রে জমা দিতে বলা হয় তাদের। কিন্তু তারা এক বছর পর্যন্ত কমিটির তালিকা জমা দেয়নি। হঠাৎ করেই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ মুহুর্তে সবার অগোচরেই নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে কেন্দ্রে তালিকা জমা দেয় টিপু-সুজন।

ctg-chatro-lig
আলমগীর টিপুকে সভাপতি ও ফজলে রাব্বী সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি করা হয়। এদের একজন রেলের টেণ্ডারবাজির ঘটনায় জোড়া খুনের আসামী। অন্যজন চবি ছাত্র খুনের আসামী।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী চবি ছাত্রলীগের স্থগিত হওয়া কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু। কিন্তু আ জ ম নাছিরের টিপু গ্রুপ ছাড়াও আর সাতটি গ্রুপ রয়েছে। আলমগীল টিপু ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকে ওই গ্রুপগুলোর নেতাকর্মীদের সাথে কোন ধরণের সমন্বয় করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, কমিটি গঠনের সময়ও আ জ ম নাছিরের অনুসারী বাকি গ্রুপগুলোর সিনিয়রদের সাথে টিপু পরামর্শ করেনি। আবার নিজের অনুসারী যাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আলমগীর টিপু রাখতে চায় তারেদ বিরুদ্ধে রয়েছে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নে অভিযোগ।

জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আলমগীর টিপু তার অনুসারী ১০ জনকে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা সবাই বিতর্কিত। ২০১৩ সালের ২৪ জুন মাসে চট্টগ্রামে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় কার্যালয়ে টেন্ডারবাজি ঘটনায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে শিশুসহ এক যুবলীগ নেতা নিহত হয়। ওই ঘটনায় দায়েল হওয়া মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামী আলমগীর টিপুর অনুসারী জমির উদ্দিন, রায়হান মাসুদ শুভ ও কামরুল হাসান রায়হান। এই ঘটনার পরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আলমগীর টিপুর নেতা সাইফুল আলম লিমনকে কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে। আসন্ন চবি ছাত্রলীগের কমিটিতে টিপু ওই মামলার আসামীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে সুপারিশ করে। ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে চবি ছাত্রলীগের সাবেক উপ ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক কামরুল হাসান রায়হান, সাবেক সদস্য আরাফাত হোসেন ও রাকিব হোসেনকে।

তাদের আলমগীর টিপু শীর্ষস্থানীয় সম্পাদকীয় পদগুলোতে রাখার সুপারিশ করেছেন। এ ঘটনায় বহিষ্কৃত সাবেক শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক মনছুর আলমকে সিনিয়র সহ সভাপতি পদে সুপারিশ করেছেন তিনি। ২০১৫ সালে ছাত্রলীগের গ্রুপিং সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্রে শান দিতে শাণ দিতে দেখা যায় টিপু অনুসারী মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ওরফে টাইগার মোফা ও শ্রাবণ মিজান নামে দুই জনকে। যা গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সমালোচনা ঝড় উঠেছিল। টিপু তাদের দুইজনকেও পদ দেওয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বানচাল করতে টিপু ও সুজনের অনুসারীরা সংঘেের্ষ জড়ায়। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া অস্ত্র মামলার আসামি টিপুর আপন ছোট ভাই মোঃ আরমান, আবু তোরাব পরশ এবং ইমতিয়াজ অভি। তাদের পদে বসাতে টিপু সুপারিশ করেছেন বলে জাসা গেছে। ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর কলেজ ছাত্রীর নগ্ন ছবি প্রচারের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া রাকিব হোসেনকে কমিটিতে পদ চেষ্টা চলছে।

চবি ছাত্রলীগের বিগত কমিটির প্রচার সম্পাদক সৌমেন পালিত বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে এমন ব্যক্তিদের আলমগীর টিপু তার অনুসারী হওয়ায় ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো পায়তারা করছে। অথচ পরিচ্ছন্ন ছাত্রলীগের কর্মীদের ভাল পদে না রেখে গোপনে তিনি কেন্দ্রে কমিটির তালিকা পাঠিয়েছেন। আমরা এমন কমিটি মেনে নেবনা।’ চবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী সাঈদা রুখসাত তাজিন বলেন, ‘শুধুমাত্র টিপু ভাইয়ের গ্রুপের সাথে না থেকে রাজনীতি করি বলে আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। উনি উনার গ্রুপের ২-৩ জন ছাত্রীকে কমিটিতে পদ পাইয়ে দিচ্ছেন। আমরা ক্যাম্পাসে এ বিষয়ের প্রতিবাদ করব।’

এমনকি নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী অনুসারী স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুজন নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীকে না জানিয়েই নিজের মতো করে কমিটির তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে এ বিষয়ে কথা বললে সুজনের এমন কর্মকান্ড প্রকাশ পায়। এ নিয়ে বিষ্মিত হয়ে যায় গোটা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের সবাইকে এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

শুধু তাই-ই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী তাপস হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি, পুলিশকে মারধরের অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদেরও ফজলে রাব্বী সুজন পদ পাইয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে মহিউদ্দিন চৌধুরী অনুসারী শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা ও মহিউদ্দিন চৌধুরী অনুসারী রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুজন আওয়ামী লীগ ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে এমন অভিযুক্তদের পদ পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কর্মী তাপস সরকার হত্যা মামলার আসামী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাকে জুতার মালা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে কমিটির তালিকা কেন্দ্রে জমা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে অপরাধীরা দায়িত্ব পেলে সংগঠনে আবারও অস্থিতিশীলতা তৈরী হবে।’

ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ চলাকালে একটি কক্ষে ঢুকে আরাফাতকে কুপিয়ে দুই পায়ের রগ কেটে দেয় ফজলে রাব্বী সুজনের অনুসারী বায়েজিত আহমদের সজল, ফসিউর রহমান সনেট, ইশতিয়াক আহমেদসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। ওই ঘটনায় আরাফাতের বোন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার দুই আসামীকে পদে বসাতে সুজন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করেছে।

এদিকে ২০১৪ সালে ১৪ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ কর্মী তাপস সরকার খুন হয়। ওই হত্যা মামলার আসামি রাবিদ রায়হান, আসিফ ইকবাল সাকিব, আনিসুর রহমান, জায়েদুল আওয়ালকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে তদবির করছে সুজন। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের জেরে মামলা আসামী ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আদনান চৌধুরী সাদ্দামকে পদ পেতেও সুজন সুপারিশ করেছেন বলেও জানা গেছে। একই সাথে প্রিমিয়ারই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাসেল আহমেদকে চবি ছাত্রলীগের পদে বসাতেও সুপারিশ করেছে সুজন। যে চবিতে বহিরাগত হিসেবে সুজনের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়া পুলিশের উপর হামলাকারী ও এ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামী নাছির উদ্দিন মিশু ও নিয়াজ উদ্দিনকেও পদে বসাতে চান সুজন।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print