শুধু ত্রান সহায়তা নয় রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আর্ন্তজাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে ভারতের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি বলেন একমাত্র আর্ন্তজাতিক মহলের চাপ প্রয়োগের মাধ্যমেই ১২ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে।
আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ভারতের ত্রাণসামগ্রী গ্রহণকালে তিনি এ অনুরোধ জানান।
মন্ত্রী বলেন,সাহায্য দিয়ে রাহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবেনা। এর স্থায়ী সমাধান করতে হবে। সাহায্যেও পাশাপাশি তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মায়ানমারকে আর্ন্তজাতিকভাবে মায়ান,মারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
.
এসময় মন্ত্রী বলেন, ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে তারা বাংলাদেশকে শুধু সাহায্য করেনাই। সে সময় ভারতীয় হাজার হাজার সৈনিক বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিল। বাংলাদেশ সরকার ভারতের জনগন ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। শরনার্থী কি তা ভারত সরকার বুঝে। ভারত বাংলাদেশ এক অপরের বন্ধু। এ জন্য পরস্পর পরস্পরের বিপদে এগিয়ে আসতে হবে।
মায়া বলেন,এ পর্যন্ত ১২ লাখ রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছে। শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বর্তমান সরকার এসব রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছে। ভারতসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশ এ জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে ১১ লাখ ১২ হাজার ৩০৮ জন হাজার রোহিঙ্গাকে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। তাদেও বসবাসের জন্য ৩০টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন এতিম শিশুকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৯ কিলোমিটার এলাকা বিদ্যুতায়ন এবং ১৩ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণসহ ১০ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের বসবাসের সুবিধার জন্য।
.
এদিকে মিয়ানমার নাগরিকদের জন্য ভারত সরকারের দ্বিতীয় দফায় পাঠানো ৩৭৩ মেট্রিকটন ত্রানসামগ্রী হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের ২ নম্বর জেটিতে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার কাছে এসব ত্রাণসামগ্রী আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।
ভারত সরকার ও ভারতীয় জনগণের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে পাঠানো ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৫০ হাজার রেইনকোট, ৫০ হাজার জোড়া গামবুট, ৪৫ টন শিশুখাদ্য, ১০০ টন গুঁড়োদুধ ও ১০০ টন শুঁটকি,এবং কেরোসিন । এর আগে ভারতের নৌ বাহিনীর জাহাজ আইএনএস ঐরাবত’ কমান্ডার এ অশোকের নেতৃত্বে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গত ৫ মে বিশাখাপত্তম বন্দর থেকে রওয়ানা দিয়ে মঙ্গলবার (৮ মে) চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে।
এসময় ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ভারত সব সময় বাংলাদেশের সংকটে তাৎক্ষনিকভাবে সারা দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্য এর আগেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ অপারেশান ইনসানিয়াৎ এর মাধ্যমে ত্রান সামগ্রী পাঠিয়েছিল। এ ছাড়া এক মিলিয়ন লিটার কেরোসিন এবং ২০ হাজার রান্নার চুলা নিয়ে আরো ত্রানের চালান শীঘ্রই বাংলাদেশে আসবে বলে জানান হাই কমিশনার।
তিনি বলেন রোহিঙ্গাদেও আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ সরকার এবং এদেশের জনগন বিরাট একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। বাংলাদেশের এ মহৎকাজ আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি এবং সমর্থন পাবার দাবিদার। তিনি বলেন ভার বাংলাদেশের সম্পর্কের ভিত্তি, বিশ্বাস, বন্ধুত্ব ও শহীদদের আত্মত্যাগ ।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল প্রমুখ।