
রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধিঃ
যৌতুকের জন্যে স্ত্রীকে বেদড়ক পিটিয়ে পঙ্গু করে দেওয়ার ঘটনায় স্ত্রীর দায়েরকৃত মামলায় আদালত কর্তৃক ১৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পালিয়ে থাকা অভিযুক্ত স্বামী সিরাজুল ইসলামকে আটক করেছে রাঙামাটির গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা।
শুক্রবার শহরের হ্যাপীর মোড় এলাকায় আসামী সিরাজুলের অবস্থান নিশ্চিত হন রাঙামাটির পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর কবির। এসময় তারই নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম হ্যাপীর মোড় এলাকায় গিয়ে সিরাজুলকে আটক করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ডিবি পুলিশের এসআই আহসানুজ্জামান।
গত জুন মাসের ২৬ তারিখে রাঙামাটি জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ১৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকেই এই আসামী পলাতক ছিলো। আদালত কর্তৃক পরোয়ানা জারির পর পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। অবশেষে পুলিশ সুপার আলমগীর কবির এর নিজস্ব গুপ্তচরের মাধ্যমে রাঙামাটি শহরে সিরাজুলের অবস্থান নিশ্চিত হন। এসময় গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদের সেখানে পাঠিয়ে উক্ত এলাকাটি ঘিরে সিরাজুলকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
বরকল থানা সূত্র জানিয়েছে, সিরাজুলের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ছিলো।
উল্লেখ্য, রাঙামাটির বরকল উপজেলার এরাবুনিয়ার বাসিন্দা আব্দুল ছাত্তার জানান, ১৯৯৫ সালে তার কন্যা মোছাঃ সামছুন্নাহারকে একই এলাকার মৃত ছোলেমান শিকদারের বড়ছেলে সিরাজুল ইসলামের সাথে বিয়ে দেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও তার ভাইদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে এক পর্যায়ে একটি পা অকেজো করে বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে আটকে রাখে। ২৪/০৭/১৯৯৭ইং তারিখে নিজ কন্যাকে দেখতে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি স্বচক্ষে দেখে সে সময় বরকল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। ২৮/০৭/১৯৯৭ইং তারিখে আদালতে ফৌজদারি নালিশ দায়ের করা হয় উল্লেখ করে মেয়ের বাবা জানান, বর্তমানে আমার মেয়ের দুইটি পা অকেজো হয়ে সম্পূর্ন পঙ্গু অবস্থায় মানবেতর দিনযাপন করছে।
তিনি জানান, আসামীদের বিরুদ্ধে আমি সেসময় রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রামে মামলাটি পরিচালনা করি। পরে ২০০৮ সালে রাঙামাটিতে জেলা ও দায়রা জজ আদালত স্থাপন করা হলে সেসময় মামলাটি রাঙামাটিতে স্থানান্তর হয়। এরপর থেকে এখানেই এই মামলাটি চলতে থাকে। এরই মধ্যে আসামীরা হাইকোর্ট থেকে জামিনে বের হয়ে রাঙামাটির আদালতে আর হাজিরা দেয় নাই।
সর্বশেষ ২৬শে জুন (মঙ্গলবার) দুপুরে রাঙামাটিস্থ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের এর বিচারক সিনিয়র দায়রা জজ মোহাম্মদ কাউসার এই রায় প্রদান করেন। ২০০৮ সাল থেকে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে জেলা ও দায়রা জজ আদালত চালু হওয়ার পর এটাই এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাজার প্রথম রায় বলে মন্তব্য করেছেন এই মামলা পরিচালনার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি এ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম।
দীর্ঘ ২২টি বছর এই মামলাটি পরিচালনা করে অবশেষে মামলার রায়ে আসামীদের বিরুদ্ধে এই ধরনের রায় ঘোষণায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছের মামলার বাদিপক্ষ। এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আরো দু’জনই সিরাজুলের ভাই। তারা হলো ৭ বছর দন্ডপ্রাপ্ত ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন ও তরিকুল ইসলাম। আসামীরা সকলেই রাঙামাটির বরকল উপজেলাধীন কলাবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা।