
নিরাপদ সড়কের দাবীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারনে লোকসান হয়েছে তৈরী পোশাক শিল্পে। পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারনে ৫ আগস্ট ৫টি জাহাজ ১,১৬৮টি বক্স কনটেইনার ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করেছে পাঁচটি জাহাজ । এই কারনে নিশ্চিত ভাবে সংশ্লিষ্ট রপ্তানীকারকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।
আজ বুধবার(৮আগষ্ট) দুপুরে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মঈনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু এ তথ্য জানান।
লিখিত বক্তব্যে মঈনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু বলেন, গত ২৯শে জুলাই দুঃখজনক ভাবে বাস দূর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী রাজিব ও মিমের মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। দূর্ঘটনার প্রেক্ষিতে আন্দোলন শেষে ছাত্ররা শিক্ষাঙ্গণে ফিরে গিয়েছে, তাদেরকে অভিনন্দন। তাদের আন্দোলন জাতীর বিবেক কে নাড়া দিয়েছে। পরিবহন সেক্টরের অব্যবস্থাপনা তারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তাদের সুশৃঙ্খল শান্তিপূর্ণ আন্দোলন মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
সরকার আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমন আশা ব্যাক্ত করে তিনি বলেন, এ’ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনায় দেশ অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়ে। বর্তমান সরকার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে এ’ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা বিরুপ প্রভাব ফেলবে। ভবিষ্যতে এ’ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা যাতে না ঘটে সে’বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

তিনি আরো বলেন, দুঃখের বিষয় ছাত্ররা ঘরে ফিরে গেলেও পরবর্তী ২দিন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের ধর্মঘটে সাধারণ জনজীবন যেমন বিঘ্নিত হয়েছে, তেমনি বিঘ্নিত হয়েছে আমদানী-রপ্তানী বাণিজ্য। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তৈরী পোশাক শিল্প। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের আমদানী ও রপ্তানী পণ্য পরিবহন করা যায়নি। আমদানীকৃত পণ্য বন্দর থেকে খালাস করা সম্ভব হয়নি এবং রপ্তানীতব্য পণ্য জাহাজীকরণের জন্য সময়মত বন্দরে পৌঁছানো যায়নি। এতে একদিকে কারখানার উৎপাদনশীলতা ব্যহত হয়েছে অপরদিকে রপ্তানীর জন্য পণ্য প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। এ’সব পণ্য যথাসময়ে জাহাজীকরণে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ডিস্ কাউন্ট দিতে হবে এবং অধিক ভাড়ায় বিমান যোগে প্রেরণ করতে হবে।
বন্দরে মোট ধারণ ক্ষমতা- ৪৮,০০০ টিউজ। গত ২৯ জুলাই তারিখে বন্দর ইয়ার্ডে মোট কন্টেইনার ছিল ৪১,০০০ টিউজ। ৭ জুলাই তারিখে বন্দর ইয়ার্ডে মোট কন্টেইনার ছিল ৪৩,৫০৭ টিউজ। এ অনাকাঙ্খিত ঘটনার কারণে আমদানী-রপ্তানী পণ্যবাহী কন্টেইনার ডেলিভারীতেবিঘ্নিত সৃষ্টি হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এই ব্যবসায়ী নেতা আরো বলেন, একদিকে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি, অন্যদিকে বন্দরের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, পর্যাপ্ত ইক্যুপমেন্ট না থাকায় প্রায়শই জাহাজ জটের সৃষ্টি হয়, যা প্রতিনিয়ত তৈরী পোশাক খাতের গতিশীলতা ব্যহত করে। গত বছরের ১০ জুলাই তারিখে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশে কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা ৭ দিন আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম চালু রাখা হচ্ছে। এর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
বর্তমানে বন্দরে ০৪টি গ্যাংট্রি ক্রেন আছে। আগামী অক্টোবরে আরো ৬টি গ্যাংট্রি ক্রেন সংযুক্ত হবে। যা আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন,বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ফেরদৌস, পরিচালক কাজী মাহাবুবউদ্দিন জুয়েল, সাইফ উল্লাহ মনসুর, আমজাদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।