ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

হতদরিদ্র দিনমজুরের বিরুদ্ধে ১২ জেলায় ৭০টি মামলা!

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

হতদরিদ্র সাইফুল ইসলাম। ভিটেমাটিও ছিল না। অন্যের সাহায্য-সহযোগিতায় এক খন্ড জমি কিনে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন। সেই জমিই কাল হয়েছে সাইফুল ও তাঁর পরিবারের। তাঁদের বিরুদ্ধে ৭০টি মামলা হয়েছে।

কেবল নিজ জেলাতে নয়, কাছের-দূরের এক ডজন জেলায়। এমনকি যাঁরা সহযোগিতা করতে গেছেন, তাঁরাও মামলার আসামি। সম্প্রতি একসঙ্গে দুই জেলায় তিনটি মামলায় পরোয়ানা জারি হয়। এ খবর শোনার পর সাইফুলের এক ভাই মারা গেছেন।

সাইফুল ইসলাম (৩৮) রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার হাসনাপাড়া চৈারখোর মহল্লার বাসিন্দা। তিনি বলছেন, নিছক হয়রানি করার জন্যই এসব মামলা। এসব করছেন ও করাচ্ছেন শফিকুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তি। তাঁর বাড়ির পাশে এই দুই সহোদরের জমি আছে। সাইফুলের বাড়ির জমিটিও তাঁরা কিনতে চেয়েছিলেন। না পেরে এখন এই পথে হাঁটছেন।

সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। চাষের জমি বলে কিছু নেই, ভিটেমাটিও ছিল না। তবে ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল চৈারখোর মহল্লায় ১ লাখ টাকায় ৯ শতাংশ জমি কেনেন। নিজের কিছু জমানো টাকা ছিল। পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন আর্থিক সহায়তা দেন। পরে ওই জমিতে টিনের ছাপরাঘর তুলেছেন।

রাজশাহী নগরের সাগরপাড়া মহল্লার তপন মজুমদার এই জমির মালিক ছিলেন। এই জমির পাশে জমি রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলীনগরের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলামের। বাড়ি করার কিছুদিন পর ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তানোর থানায় একটি মামলা করেন শফিকুল ইসলাম।

এতে তাঁকে (সাইফুল), তাঁর ভগ্নিপতি আবদুস সামাদ, জমি বিক্রেতা তপন মজুমদার ও প্রতিবেশী শওকতকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে খেতের ফসল নষ্ট করা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়।

ওই ঘটনার এক মাসের মাথায় দ্রুত বিচার আইনে আরেকটি মামলা করেন শফিকুল। এতে সাইফুল, তাঁর স্ত্রী হারেসাসহ মোট ১২ জনকে আসামি করা হয়। এরপর আরও দুটো মামলা করেন তিনি। এর মধ্যে একটি মামলা হচ্ছে জমি থেকে উচ্ছেদের।

সাইফুল বলেন, সে সময় তানোর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা আবদুস সালাম তাঁর বাড়িতে আসেন। তাঁকে জানিয়ে দেন, তিন দিনের মধ্যে এই বাড়ি ভেঙে নিতে হবে। তা না করলে আরও মামলা হবে।

এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে তাঁদের নামে রাজশাহীতে ও বাইরের বিভিন্ন জেলায় মামলা হচ্ছেই। সর্বশেষ মামলা হয়েছে গত ১৭ এপ্রিল রাজশাহীতে। এটি ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শনের মামলা।

সব মিলিয়ে গত দুই বছরে মোট ৭০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি মামলা হয়েছে রাজশাহীর বাইরে ১০টি জেলায়। ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নরসিংদীতে চারটা করে। নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে দুটো করে। আর চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নাটোর, নওগাঁ, পাবনায় একটি করে মামলা হয়েছে। সব মামলার আরজির বিষয় একই মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে টাকা না দেওয়া।

এরপর টাকা চাইতে গেলে হুমকি দেওয়া। বাকি ৪৫টি মামলা হয়েছে রাজশাহীতে। এর মধ্যে ৪১টি মামলার অভিযোগ প্রায় অভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন। কেবল চারটি মামলায় পৃথক পৃথক অভিযোগ রয়েছে। এই মামলা চারটি করেছেন আলোচিত সাইফুল ইসলাম। রাজশাহীর অন্য মামলাগুলোর বাদী হয়েছেন তাঁর জমির বর্গাচাষিরা।

হাজিরা দিতে চরম ভোগান্তিঃ
তবু রাজশাহীর মামলাগুলোর বাদী কারা, তা খুঁজে পাচ্ছেন সাইফুল। কিন্তু বাইরের জেলাগুলোর মামলাগুলোর বাদীর হদিসই মিলছে না। সাইফুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীর বাইরের জেলায় হাজিরা দিতে গিয়ে তাঁরা কখনো মামলার বাদীকে আদালতে পাননি।

তবে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে বাদীর চেহারার যে বর্ণনা পেয়েছেন, তাতে তাঁরা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মিল পেয়েছেন। অর্থাৎ রফিকুলই বিভিন্ন জেলায় গিয়ে ভিন্ন ভিন্ন নামে বাদী সেজে মামলা করেছেন।

প্রতিটি মামলার এজাহার যেমন একই, তেমনি কৌশলও অভিন্ন। দেখা যাচ্ছে, বাদী হিসেবে যেসব নাম ব্যবহার করা হয়েছে, তাঁরা সবাই স্থানীয় মাইক্রোবাস মালিক। তাতে প্রতীয়মান হয়, মামলার পেছনের ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া নেন।

পরে ভাড়া দেওয়ার সময় রসিদ সংগ্রহ করেন। রসিদে থাকা নামটা মামলার বাদীর জায়গায় ব্যবহার করেন। আবার যে জেলায় মামলা করা হয়, আসামিদের বর্তমান ঠিকানা হিসেবে সেই জেলার কোনো স্থান দেওয়া হয়। কিন্তু স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া তানোরের। পরে সেই স্থানীয় ঠিকানায় নোটিশ আসে। তারপর সাইফুলসহ অন্য আসামিরা বুঝতে পারেন, তাঁদের নামে সেখানে মামলা হয়েছে।

এদিকে সাইফুল দরিদ্র হওয়ায় এত সব মামলার ঘানি টানা কষ্টকর। তা দেখে এগিয়ে আসেন এলাকার কেউ কেউ। পরে তাঁদেরও মামলার আসামি করা হয়। এমনই একজন সাইফুলের প্রতিবেশী শওকত আলী। তিনি বলেন, মামলায় যাঁদের আসামি করা হয়, তাঁরা সবাই গরিব মানুষ। দূরের জেলায় মামলার হাজিরা দেওয়ার মতো টাকা পয়সা কারও নেই।

ট্রেনের টিকিট কাটতে পারেন না। গার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে শৌচাগারের পাশের ফাঁকা জায়গায় বসে দূরের পথে যান। অথবা বাসের ছাদে বা কম ভাড়ার বাসে করে যান। এই অবস্থা দেখে গ্রামের লোকজন তাঁদের ওসুরের ধান, রোজার ফিতরা ও যাকাতের টাকা দিয়ে সাহায্য করেন।

শওকত আলী জানান, যেদিন দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়, সেই রাতেই সাইফুল ও তাঁর দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্ত্রী হারেসাও আসামি ছিলেন। পরদিন জামিন নিতে এসে আদালতের ভেতরেই তাঁর প্রসব বেদনা ওঠে।

বিচারক তাঁকে দ্রুত জামিন দেন। বাড়ি ফেরার পথে তিনি সন্তান প্রসব করেন। আর সম্প্রতি নরসিংদীর দুটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে। বাড়িতে এ খবর আসে ১৫ মে। খবর শোনার পর সাইফুলের বড় ভাই তৈফুর রহমান (টুটুল) মারা যান।

তৈফুরসহ সাইফুলের দুই ভাই এসব মামলার আসামি। অপর ভাই হলেন রুহুল আমিন। এ ছাড়া সাইফুলের মেয়ে শাকিলা খাতুনও মামলার আসামি। সব মিলিয়ে ৭০টি মামলায় আসামি হয়েছেন ২৬ জন। অন্যরা সাইফুলের প্রতিবেশী বা সহযোগিতাকারী। মামলা বা অন্য ক্ষেত্রে সাইফুলকে সহযোগিতা করায় তাঁদের আসামি করা হয়েছে।

এমনকি সাইফুলের কাছে জমি বিক্রেতা তপন মজুমদারকেও চারটি মামলায় আসামি করা হয়েছে। তপন বলেন, তিনি প্রথমে জমিটা শফিকুল ইসলামের কাছে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা ন্যায্য দাম দিতে চাননি। এ কারণে সাইফুলের কাছে জমি বিক্রি করেছেন। এ কারণে তাঁকেও বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হচ্ছে।

এদিকে শফিকুল উচ্ছেদের যে মামলা করেছেন, তাতে জমিটি তাঁর বাবা আবদুল মান্নানের কেনা বলে দাবি করেছেন। জমির বিক্রেতা দেখানো হয়েছে তপন মজুমদারের দাদি হিম নলিনী দেবীকে। উচ্ছেদ মামলায় আদালতে একটি দলিল নম্বর দাখিল করা হয়েছে। তবে রাজশাহী সদর সাব রেজিস্ট্রারের অফিসে ওই নম্বরের কোনো দলিল পাওয়া যায়নি।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁদের জমিতে রাতের অন্ধকারে আসামিরা বাড়ি করেছে। এ জন্য তিনি উচ্ছেদের মামলা করেছেন। আর জমির ফসল নষ্ট করার জন্য আরেকটি মামলা করেছেন।

এর বাইরে জেলায় বা জেলার বাইরে কোনো মামলা করার কথা অস্বীকার করেন তিনি। এমনকি তাঁর ভাই রফিকুল ইসলামের বেনামিতে মামলা করার কথাও তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। শফিকুল বলেন, ভাই রফিকুল ঢাকায় কাপড়ের ব্যবসা করেন। তাঁর ফোন চাইলে তিনি নম্বরও জানেন না বলে দাবি করেন।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তিনি সদ্য এই থানায় এসেছেন। এসেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেয়েছেন। এরপর আসামিদের ডেকে কাগজপত্র দেখেছেন। ওসি বলেন, মামলাগুলো এমন যে উপস্থিত হয়ে মুচলেকা দিলেই হয়। মানুষকে হয়রানি করাই এ ধরনের মামলার উদ্দেশ্য। -সুত্র প্রথম আলো।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print