
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন আজ শনিবার। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। গত বৃহস্পতিবার রাতে শেষ হয়েছে নির্বাচনি প্রচার। নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে নিজের ভোট দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আজ শনিবার সকাল ৮টায় তিনি ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেসং উইংয়ের পক্ষ থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছে কমিশন। আমরা আশা করি, এ নির্বাচন দেশের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। নির্বাচন উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে রাজধানীতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে বন্ধ হয় সব ধরনের যান চলাচল। এ নির্বাচনে ২২ প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ১৩ জন দেশি পর্যবেক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের মধ্যে উত্তরে ৫০৩ জন, দক্ষিণে ৪৫৭ জন এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ৫৩ জন পর্যবেক্ষণ করবেন। বিদেশি সংস্থার পর্যবেক্ষক থাকবেন ৭৪ জন। তাদের মধ্যে ৪৬ বিদেশি এবং ২৮ বাংলাদেশি।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ৪৭০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৩৩৪ জন। বাকি ১৩৬ জনের অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। যাচাইকালে অনেকের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। বর্তমানে মেয়র পদে ৬ জন, ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের বিপরীতে ২৫১ জন কাউন্সিলর ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭৭ জন নারী কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন।
অপরদিকে, ঢাকা দক্ষিণে চূড়ান্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আছেন ৪১৬ জন। এ সিটিতে ৭ জন মেয়র পদে মনোনয়পত্র দাখিল করেছেন। তারা সবাই চূড়ান্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন। তবে কমেছে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সংখ্যা। এ সিটিতে ৭৫টি ওয়ার্ডে ৪৬০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও চূড়ান্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন ৩২৭ জন ও সংরক্ষিত ২৫টি ওয়ার্ডে ১০২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও ভোটের মাঠে রয়েছেন ৮২ জন। ভোট গ্রহণ করা হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। এর জন্য ২৮ হাজার ৮৭৮টি ইভিএম সেট প্রস্তুত হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ইতিমধ্যে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম।
গতকাল শুক্রবার বিকালে নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এনআইডির মহাপরিচালক বলেন, আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আমরা একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে বদ্ধ পরিকর। ইতিমধ্যে দুই হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্রে ১৪ হাজার ৪৩৬টি ভোটকক্ষ পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ শেষ করেছি। পরীক্ষামূলক বা মক ভোটিংয়ের জন্য ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ৪৫ হাজার ৭৭০ জন প্রিজাইডিং ও পোলিং এজেন্টকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রত্যেক কেন্দ্রে দুজন করে পাঁচ হাজার ১৫ জন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বিমান বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। তারা টেকনিক্যাল বিষয়টি দেখবেন। তবে আইন-শৃঙ্খলার কোনো কাজে অংশ নেবেন না। সেনা ছাউনি থেকে তারা সরাসরি ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আবার সেখান থেকে তারা সরাসরি সেনা ছাউনিতে চলে যাবেন।
সাইদুল ইসলাম বলেন, কেউ অবৈধভাবে ভোট বা ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে গেলে তাকে শনাক্ত করে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সনাতন পদ্ধতিতে নিয়ম অনুসারে ব্যালট বাক্স খালি দেখিয়ে ভোট শুরু করা হয়। কিন্তু ইভিএম সিস্টেমে ব্যালট বাক্স নেই, তাই খালি বাক্স দেখানোর সুযোগও নেই। এজন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোট শুরুর আধা ঘণ্টা আগে ইভিএম-এর ক্ষেত্রে ‘শূন্য ভোট’ গণনার কাগজ প্রিন্ট করা হবে। সেই ‘শূন্য গণনা’র প্রমাণ দেখিয়ে তারপর প্রত্যেক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হবে।
তিনি বলেন, সকল পোলিং এজেন্টের উপস্থিতিতে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। ফলাফলের প্রিন্ট কপি প্রত্যেক প্রার্থীর এজেন্টের কাছে দেয়া হবে। প্রত্যেক কেন্দ্র থেকেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে। পরে কেন্দ্র থেকে সেই ফলাফল রিটার্নিং কর্মর্কতার কাছে পাঠানো হবে। মহাপরিচালক বলেন, আমরা আশা করছি ভোট শেষ হওয়ার ৩০ (সাড়ে ৪টা) মিনিটের মধ্যেই ফলাফল কেন্দ্র থেকে প্রকাশ করা হবে। কেন্দ্র থেকে ফলাফল রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যদি ফলাফল প্রকাশ করতে দেরি হয় তাহলে আমাদের করার কিছু নেই। এটা ইভিএমের দোষ না। তিনি বলেন, একজনের ভোটারের ভোট দিতে ৪০ সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ এক মিনিট লাগার কথা। এবার নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতিতে বাড়বে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।