
দিল্লির অধিবাসীরা গত কয়েক দশকের মধ্যে শহরটির সবথেকে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখলেন। দাঙ্গায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৪ জন। আহত হয়েছেন আরো দুই শতাধিক। ফলে রাজধানীর একাংশে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে একে অপরের প্রতি বিরাজ করছে ঘোর অবিশ্বাস। একইসঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে এমন কিছু গল্পের যা প্রমাণ করে মানবতা এখনো টিকে আছে পৃথিবীতে।
এমনই এক গল্পের স্রষ্টা প্রেমকান্ত বাঘেল। ইন্ডিয়া টাইমসসহ ভারতীয় গণমাধ্যমগুলিতে উঠে এসেছে, কীভাবে নিজের জীবন বাজি রেখে ৬জন মুসলিম প্রতিবেশির জীবন বাঁচিয়েছেন প্রেমকান্ত। ঘটনার দিন দাঙ্গা চলাকালীন প্রেমকান্তের বাড়ির পাশে থাকা মুসলিম বাড়িগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয় হিন্দুত্ববাদীরা।
প্রেমকান্ত যখন দেখলেন তার মুসলিম প্রতিবেশিদের বাড়িতে আগুন জ্বলছে তিনি এক মুহুর্ত দেরি না করে তাদেরকে সাহায্য করতে চলে যান। জীবন বাজি রেখে প্রতিবেশিদের উদ্ধার করতে থাকেন। আগুন জ্বলতে থাকা ঘরগুলো থেকে বের করে আনেন আটকে পড়া মানুষদের।
তবে মুসলিম বন্ধুর বয়স্ক মাকে উদ্ধার করতে গিয়ে গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন প্রেমকান্ত। দগ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রাণ বাঁচিয়েছেন অন্তত ৬ জন মুসলিমের। তবে দগ্ধ হওয়ার পরেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি কেউ। সারারাত একইস্থানে থাকার পর পরদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার অবস্থা গুরুতর। শরীরের ৭০ শতাংশেরও বেশি পুড়ে গেছে। তাকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। তবে তার অবস্থা এখনো সঙ্কটাপন্ন। প্রেমকান্ত সর্বশেষ জানিয়েছেন, তিনি তার বন্ধু ও তার প্রতিবেশিদের রক্ষা করতে পেরেছেন ভেবে তৃপ্তি অনুভব করছেন।
প্রেমকান্তের মত এমন অনেকেই এগিয়ে এসেছেন দিল্লির দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্থদের বাঁচাতে। মুসলিমদের পাশে দাঁড়িয়েছে দিল্লির শিখ সম্প্রদায়ও। হামলা থেকে নিরাপদ থাকতে যেসব মুসলিম ঘর ছেড়েছিলেন তাদের জন্য নিজেদের একটি প্রার্থনাস্থল গুরদোয়ারার দরজা খুলে দিয়েছেন দিল্লির শিখরা।
মুসলিমদের পাশে দাড়িয়েছেন ভারতের রাজধানীর অশোকনগরের হিন্দুরাও। তারা ক্ষতিগ্রস্ত অনেক মুসলিম পরিবারকে নিজেদের বাড়িতে সুরক্ষা দিয়ে রেখেছেন। দাঙ্গাকারীদের থামাতে নিজেরা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। ভ্রাতৃত্বের নজির রেখেছেন মুসলিমরাও। বুধবার হিন্দুদের মন্দিরে হামলা হলে স্থানীয় অন্য মুসলিমরা হাতে হাত রেখে মানবশৃঙ্খল গড়ে তোলে।
দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে রক্ষা করে চাঁদবাগের একটি মন্দিরকে। উল্লেখ্য, গত রোববার থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। দ্রুতই এটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় পরিণত হয়। এখন পর্যন্ত মোট ৩৪ জন নিহত হয়েছেন দাঙ্গায়। এরমধ্যে শুধু বৃহস্পতিবার নিহত হয়েছেন ৭ জন।
দিল্লিতে সহিংসতা, কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীর একক প্রতিবাদ!
দিল্লিতে ধর্মীয় সহিংসতার প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আতিফ অনিক।বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কলেজের মূল ফটকে দাড়িয়ে প্লেকার্ড হাতে একক প্রতিবাদ জানান তিনি।
এসময় তিনি উত্তর-পূর্ব দিল্লির শাহীনবাগে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদকারীদের প্রতি ধর্মীয় সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানান। পাশাপাশি মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঢাকায় মোদির আগমনের বিরোধিতা করেন।
আতিফ অনিক বলেন, গত মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে ভারতের উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে এ পর্যন্ত ৩৪ জন এর অধিক সংখ্যালঘু মুসলমানকে হত্যা করেছে এই মোদি সরকার।তারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উদ্দেশ্যে মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালিয়েছে। গত কয়েক মাস ধরেই ভারতের জনগণ এনআরসি এনপিয়ার এবং সিএএ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
এই আন্দোলন দমন করবার উদ্দেশ্যে, জনগণের উপর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর জন্যেই দিল্লীতে মোদি সরকারের পেটোয়া বাহিনী হামলা চালাচ্ছে।ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্যেও উদ্বেগজনক।দক্ষিণ এশিয়ার মানুষদের ভারতে নিপীড়িত জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশেই সেখানে মুসলমানদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে মুজিববর্ষে নরেন্দ্র মোদির নিমন্ত্রণপত্র বাতিল করতে হবে।
দিল্লিজুড়ে লাগাতার জ্বলতে থাকা হিংসার আগুন নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসি। তাঁর স্পষ্ট দাবি, দিল্লির হিংসা রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট। পরোক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাকেই এখানে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি।
ওয়েইসি বলেছেন, যদি বিজেপির এক প্রাক্তন বিধায়ক এলাকার ডিসিপিকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলে যে সে অনুমতি পেয়েছে, তখন সরকার কেন শক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না তাঁর বিরুদ্ধে? নাম না করে এখানে বিজেপির কপিল মিশ্রকেই নিশানায় নিয়েছেন ওয়েইসি।
তিনি বলেছেন, সরকারের কাছে যদি আগে থেকেই তথ্য ছিল যে ট্রাম্পের সফর চলাকালীন হিংসা ছড়াতে পারে, তাহলে সরকার কেন তদন্ত করেনি বা পদক্ষেপ নেয়নি। একে কোনও ভাবেই সাম্প্রদায়িক হিংসা বলতে নারাজ ওয়েইসি। তিনি বলেছেন, এটা সরকার সমর্থিত হিংসা।
ওয়েইসির অভিযোগ, দিল্লি পুলিশ বিনা কারণে ভারতীয়দের সম্মানহানী করছে এবং তাদের অপমানও করছে। এখন দোষারোপ না করে হিংসার তদন্ত করার সময়। প্রসঙ্গত, দিল্লি হিংসায় এখনও পর্যন্ত এক কনস্টেবল সহ ৭ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশকর্মী বাদে বাকি সকলেই সাধারণ নাগরিক। যার মাঝে একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সেটা শেয়ার করে ওয়েইসি লিখেছেন, ‘অমিত শাহ আপনার পুলিশ ভারতীয়দের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। কোনও কারণ ছাড়াই নিচু করে দেখানো হচ্ছে। এখনই তদন্ত করুন। এই পুলিশকর্মীদের কড়া সাজা পাওয়া উচিত।