ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

করোনাকালে ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশ

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে ১৬ মিনিট

.

জিয়া হাবীব আহসান:

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কারণে সম্প্রতি লকডাউন পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ বিচার ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে আছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভার্চুয়াল কোর্টের সিধান্তের মাধ্যমে দেশের বিচার ব্যবস্থায় যুক্ত হতে যাচ্ছে এক নতুন মাত্রা। গত ২৬ এপ্রিল ২০২০ ইংরেজি তারিখে প্রথমবারের মত ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে ফুলকোর্ট সভায় সিদান্ত নেয়া হয় যে, বাংলাদেশ বিচার ব্যবস্থায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে রাষ্ট্রপতির কাছে অরডিন্যান্স জারি করার সুপারিশও করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। কারণ বাংলাদেশ বিচার ব্যবস্থায় এই পদ্ধতি একেবারেই নতুন করে সংযুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের রুলসও সংশোধন করতে হবে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের রুলস কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট রুলস সংশোধন করে ভার্চুয়াল আদালত স্থাপনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে একটি কমিটি গঠনের সিধান্তও গ্রহণ করা হয় । ফুল কোর্ট সভার এই কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের ৮৮ জন বিচারপতি । দেড়শ’ বছরেরও বেশি প্রাচীন ব্যবস্থা ভেঙে বিচারাঙ্গনে এখনো লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া । যার কারণে করোনার মত ভয়াবহ লকডাউন পরিস্থিতিতে পুরো বিচার ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং এতে বিচারাধীন মামলাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি হয়ে পড়েছে । ন্যায়বিচার ও আইনগত সুরক্ষা পাওয়ার বিষয়টি মৌলিক অধিকার, যা বাংলাদেশের সংবিধানের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে । তবে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কারণে সম্প্রতি সেই মৌলিক অধিকার স্থগিত রয়েছে । রাষ্ট্রের একটি গুরত্বপূর্ণ অর্গান বিচার ব্যবস্থা এইভাবে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে থাকা দুঃখজনক কিন্তু সংবিধান চালু আছে ।পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রতিবেশী দেশসমূহ এবং সারা বিশ্বের আদালতগুলো স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার করে ‘ভার্চুয়াল কোর্ট’ এর মাধ্যমে মামলাগুলো পরিচালনা করছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মামলাজট নিরসন ও জরুরি শুনানির মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে দেশের ৬৪ জেলার অধস্তন আদালতে বর্তমানের প্রযুক্তি ও ডিজিটাল যুগেও চালু হয়নি ‘ই-জুডিশিয়ারি’ বা ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থা । এ ব্যবস্থা চালু হলে সারাদেশের ১৪০০ কক্ষ পরিণত হতো ই-আদালত কক্ষে যা বর্তমানে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝেও বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে সক্ষম হতো এতে অধস্তন আদালত অর্থাৎ নিম্ন আদালতের বিচারপ্রার্থীরা ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মামলার গতি-প্রকৃতি ও রায় জানতে পারতেন। এটি বাস্তবায়ন করা হলে দেশের আদালতগুলো ডিজিটালাইজ হবে এবং আধুনিক কম্পিউটারাইজ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া আরও সহজ, স্বচ্ছ ও গতিশীল হবে যা উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হবে এবং বিচারপ্রার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি মামলা জটও অনেকাংশে কমে আসবে। বিচার ব্যবস্থায় গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে এবং বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এ প্রকল্প গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে দাড়িয়েছে। এই সিদ্ধান্তের আওতায় বিচারক এবং আইনজীবীই শুধু নয়, বিচার-সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা, বিচারাঙ্গনের সংশ্নিষ্টদের যদি প্রশিক্ষণ না দেওয়া হয়, তাহলে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষ ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্পের সুফল থেকে বঞ্চিত হবেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভরতের বিএনএ, বাঁকুড়া: রাজ্যে গত বৃহস্পতিবার প্রথম ভার্চুয়াল জুভেনাইল আদালতের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন বাঁকুড়ার জেলা জজ অপূর্ব সিংহরায় এবং প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন আইনজীবীরা। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পর খুব কম সময়ের মধ্যে এই পরিসেবা চালু করেছে তারা। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে যে কোনও নাবালককে আদালতে না এনে প্রতিটি মহকুমায় থাকা চাইল্ড কেয়ার ইউনিটের মাধ্যমে প্রোডাকশন করতে পারবে। শুধু তাই নয়, ওই নাবালকের জন্য আইনজীবীরাও জামিনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে পাওয়া আবেদন দেখার পর জুভেনাইল বোর্ডের বিচারকরা প্রয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অভিযুক্ত ও তার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে রায় দিতে পারবেন। জুভেনাইল বোর্ডের ক্ষেত্রে ভিডিও কনফারেন্স বা ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থা রাজ্যের মধ্যে প্রথম বাঁকুড়াতেই শুরু হল। জুভেনাইল বোর্ড ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নাবালক নাবালিকাদের ধরার পর নিয়ম অনুযায়ী তাদের জুভেনাইল বোর্ডের কাছে পেশ করা হয়। কিন্তু, করোনা আতঙ্কে লকডাউনের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজকর্মের জন্য আদালতের মতো জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডেও বিচার ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায় । এই অবস্থায় কোনও নাবালক অভিযুক্ত হলে তার বিচার প্রক্রিয়া যাতে থেমে না থাকে সেজন্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য হাইকোর্টের তরফে জেলা আদালতগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপরেই বাঁকুড়া জেলা আদালতের মতো জুভেনাইল বোর্ডে ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থা চালুর জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। জেলা প্রশাসন ও জেলা আদালতের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সকল আইনজীবীরাও। ভারতের জেলা আদালতে অনলাইনে বিচার প্রক্রিয়ায় ইতিমধ্যেই সাড়া পড়েছে। প্রায় শতাধিক গুরুতর মামলার শুনানিও হয়েছে। এই ব্যবস্থায় লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব মেনে আইনজীবীরা তাদের মক্কেলদের হয়ে কাজ করতে পারছেন । ফলে লকডাউনের সময়ে বাড়িতে বসে আয়ের পথও খুলে যাচ্ছে । আমাদের দেশে যদিও জুবিনাল ট্রাইব্যুনালের মাননীয় চেয়ারম্যান বিচারপতি ইমান আলী শিশু আদালত সমূহকে অভিযুক্ত শিশুদের আদালতে উপস্থিত না করে জামিন শুনানির নির্দেশ দেন ।মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে সংবিধানের আরটিক্যাল ১০২ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্টে যাওয়ার সুযোগ আছে কিন্তু বর্তমান অবস্থায় মানবাধিকারও লঙ্ঘন হয়েছে । অনেকে মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইতিপূর্বে জামিন লাভের পরেও আদেশ নিম্ন আদালতে ও কারাগারে না পৌছানোর কারণে তারা বের হতে পারেনি । আদালত বা সংশ্লিষ্ট অফিসারের স্বাক্ষরের অভাবে আদালতের রায় বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এদিকে লকডাউনের সুযোগে অসংখ্য মানুষ তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এমনি অনেকে চাকুরি চ্যুতির শিকার হচ্ছে । আদালতের আদেশ ছাড়া হাজার হাজার কোটি টাকার মালামাল কাস্টম হাউজ থেকে রিলিজ হচ্ছেনা । এমন পরিস্থিতিতে আদালতের বা আইনজীবীদের কি কোন ভূমিকা নাই । বিযয়টি নিয়ে আইনজীবী নেত্রীবৃন্দকে দ্রুত ভাবতে হবে, অন্যথায় এই মানবতাবাদী পেশাকে অনেকে সুবিধাবাদী পেশা হিসাবে চিহ্নিত করে ফেলতে পারে । অনেক গুরতর আসামীর জামিনের আধিকার থাকা স্বত্ত্বেও তা চাওয়া সম্ভব হয়নি । অনেক ভাড়াটিয়া বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন থাকলেও তারা কোর্টে যেতে পারেনি । মহামান্য বিচারপতি বিষয়টি চিন্তা করে জরুরি পরিস্থিতিতে ইমারজেন্সি একটি হিসেবে সপ্তাহে ২দিনের জন্য সীমিত আকারে শুধুমাত্র জরুরি জামিন শুনানির একটি সিধান্ত দিলেও পরবর্তীতে তা স্থগিত করলে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থার কথা উঠে আসে । বাংলাদেশ সংবিধান স্থগিত করা হয়নি এবং জরুরি কোন ঘোষণাও দেয়া হয়নি ।অথচ করোনাভাইরাস কভিড-১৯ এর ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও রাষ্ট্রের একটি গুরত্বপুর্ণ অবকাঠামো বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ থমকে গিয়েছে । ‘ভার্চুয়াল কোর্ট’ ধারণাটি বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে । বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের (হাইকোর্ট ডিভিশন) বিধি ১৯৭৩ (১৯৭৩ সালের বিধি) মোতাবেক প্রধান বিচারপতি এই পদক্ষেপে গ্রহণ করতে পারেন । এমনকি সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত (suo moto) হয়েও এই উদ্যোগ নিতে পারেন । ১৯৭৩ সালের বিধিমতে, প্রধান বিচারপতি আদালতের বিচারকার্য সুষ্ঠু ও দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য যেকোনও কোর্ট পরিচালনার দিকনির্দেশনা (practice directions) জারি করার ক্ষমতা রাখেন । সেই প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করে ভার্চুয়াল আদালতের শুনানি অনুষ্ঠিত হতে পারে । ১৯৭৩ সালের বিধিমতে, মাননীয় প্রধান বিচারপতি কাজ সংক্রান্ত কোর্ট পরিচালনার দিকনির্দেশনা (practice directions) জারি করতে পারেন । যার মধ্যে সাধারণ প্রশাসন, শপথ, ই-ফাইলিংয়ের ব্যবস্থা, এফিডেভিটের মতো কাজও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । এসব নির্দেশনার মধ্যে যেখানে বিচারকরা কোথায় বসবেন সেই ‘কোর্ট পয়েন্ট’ হতে পারে । এছাড়া এক বা একাধিক নির্ধারিত ‘রিমোট পয়েন্ট (দূরবর্তী স্থান)’ হতে পারে, যেখানে মামলার শুনানির জন্য আইনজীবী ও সাক্ষী উপস্থিত থাকতে পারেন । বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ১৯৭৩ সালের বিধি এবং অন্যান্য বিধানের মধ্যে যদি কোনও অসঙ্গতি থাকে, তাহলে তখন ১৯৭৩ সালের বিধির এক বা একাধিক বিধি সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করার ক্ষমতাও রয়েছে।আসুন জেনেনি ভার্চুয়াল কোর্ট কী? সশরীরে উপস্থিত না থেকে, ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থেকেও ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে বিচার পরিচালনা করাই হচ্ছে ভার্চুয়াল কোর্ট । এটি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাবহার । বর্তমানে যা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনাকে বুঝায় । ন্যায় বিচার প্রার্থী, আইনজীবী ও বিচারকগন বিশেষ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে আদালতে উপস্থিত না হয়ে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যাবহারের মাধ্যমে আরজি, পিটিশন ও বিভিন্ন দলিলাদি উপস্থাপনের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখে । অনেক দেশে অনলাইনেই মামলার সকল কাগজপত্র আপলোড করা হয়ে থাকে । সেখান থেকে বিচারক ও আইনজীবীরা সেসব নথিপত্র দেখতে পারেন, পর্যালোচনা করতে পারেন । আইনজীবীরা তাদের অবস্থান থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য তুলে ধরেন । কোথাও কোথাও পুলিশ স্টেশন থেকে আসামীদেরও সংযুক্ত করা হয় । শুনানির পর বিচারক তার রায় প্রদান করেন । বর্তমান পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায়— ১) মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে বর্তমানে বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা না থাকার পরেও কেন মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন স্থগিত থাকবে, ২) ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যে, ৩) গুরুত্বপূর্ণ মামলার জামিন শুনানির জন্য, ৪) কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে, ৫) আইনজীবী সমাজের পেশাগত ও সামাজিক নিরাপত্তার নিমিত্তে, ৬) বর্তমান পরিস্থিতিতেও অপরাধ থেমে নেই, ৭) বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য বিচার বিভাগ ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব না, ৮) দেশের দূর্যোগপূর্ণ অবস্থায় আর্থিক সংকট রোধে কোর্ট ফি, ৯) ত্রাণে অনিয়ম দুর্নীতি রোধে, ১০) মামলার চাপ কমাতে, ১১) নির্দিষ্ট সময়ে মামলা দায়েরের জন্য, বিশেষ করে চেকের মামলা । ভার্চুয়াল কোর্ট এর রয়েছে সুবিধা এবং অসুবিধা যেমন বাংলাদেশে মামলার ক্ষেত্রে অনেকগুলো ধাপ রয়েছে । অনেক কাগজপত্র দিতে হয়, স্ট্যাম্প ইত্যাদির দরকার হয় । সেই সঙ্গে পুরো নথিপত্রও এখনো ডিজিটালাইজড হয়নি ।এখানে বিজ্ঞ আইনজবীবিকে পিটিশনের সাথে সমস্ত ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হয় এবং ডকুমেন্ট গুলো সরাসরি সত্য মর্মে হলফনামা দিতে হয় । সাধারণত প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় মক্কেল নিজে হলফনামা দেন । কিন্তু ভার্চুয়াল বিচার পদ্ধতিতে সব দায় দায়িত্বরত আইনজীবীকে নিতে হয় । ইমেইলে বেঞ্ছ ক্লার্ক ও বিচারক মহোদয়কে স্ক্যান করে পুরো ফাইল অনলাইনে সাবমিট করতে হয় । ফলে নথিপত্র হয়তো আগেই জমা দিতে হবে । আবার শুনানির সময় বিচারকের কোন নথি দেখার দরকার সেটার জন্যও সময় লাগবে । তাছাড়া জারি করা কোর্ট পরিচালনার দিকনির্দেশনা (practice directions) পালন করা ছাড়াও, ‘রিমোর্ট পয়েন্টে’ মামলাকারীর কাছে ভিডিও কনফারেন্স প্রযুক্তির সুবিধা রয়েছে কিনা, তাও সংশ্লিষ্ট কর্তব্যরত ব্যক্তিদের দেখতে হবে । অন্যথায় সুপ্রিম কোর্টের নেওয়া যেকোনও প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে । এক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ, এটার পেছনে ব্যয় এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ও উন্নতমানের ভিডিও কনফারেন্স প্রযুক্তির ব্যবহার করা । এক্ষেত্রে কৌশলগত উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমর্থন পাওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে । এছাড়া গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রেও বিশেষ নজর রাখতে হবে। মামলাকারীর ব্যক্তিগত ডিভাইসে মামলার শুনানির রেকর্ড করার মধ্যে গোপনীয় তথ্য প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা মামলাকারী ব্যক্তি অন্য পরিস্থিতিতে অবৈধ মামলার সুবিধার্থে তা ব্যবহার করতে পারেন । অথবা নিরপরাধ ব্যক্তির অসুবিধার জন্য তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দিতে পারে । ভিডিও কনফারেন্স প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশেষ কোনও চুক্তি না থাকার কারণে আরও অন্য ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে । এক্ষেত্রে যে প্রশ্নটা করা প্রয়োজন তা হলো— সুপ্রিম কোর্ট সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনও প্রকার চুক্তি বা লিখিত অঙ্গীকার ছাড়াই কি সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করবে । কোনও সফটওয়্যার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাধারণ নিয়মাবলি ও শর্তগুলো কি কার্যবিবরণীর পবিত্রতা রক্ষা করতে পারবে, যা পৃথক পৃথক মামলাকারী ব্যক্তির মৌলিক অধিকারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে ? অধিকাংশ সফটওয়্যার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তথ্য নিয়ে কাজ করার জন্য ক্ষুদ্রাক্ষরে/ছোট প্রিন্টে লেখা ‘নিয়ম ও শর্তাবলি’ ব্যবহার করে এবং তা তাদের পক্ষেই কাজ করে, আর তা তাদের বৃহৎ ক্ষমতা দেয় ব্যবহারকারীর তথ্য নিয়ে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করার বা রেখে দেওয়ার । প্রকৃতপক্ষে, শর্তাবলিগুলো যেকোনও সময়ে একতরফা পরিবর্তন করা সম্ভব যা ব্যবহারকারীদের জন্য বাধ্যতামূলক । উদাহরণস্বরূপ, অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে জুম’ এর (zoom) গোপনীয়তার নীতিতে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, ‘আমরা সংরক্ষণ বা প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য আপনাদের তথ্য যুক্তরাষ্ট্র অথবা আমাদের কোনও তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারি ।’ মামলাগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে এটা যথার্থ নাও হতে পারে, যেখানে মামলাকারীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না বা ইচ্ছুক নয় তাদের মামলার তথ্য তৃতীয় কোনও পক্ষ সংরক্ষণ করুক, যা তারা নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারে । বিশেষত বর্তমান সময়ে ও যুগে যখন তথ্য ও প্রযুক্তি একে অন্যের সঙ্গে জড়িত । বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এই সমস্যাটি আরও বেশি, যেহেতু তথ্য সুরক্ষার কোনও কাঠামো নেই, যা গোপনীয়তা লঙ্ঘনের জন্য ব্যক্তিবর্গকে জবাবদিহি করতে পারে। প্রতিটি পদক্ষেপে ‘গোপনীয়তা অধিকারের’ বিষয়টি সরকারের সুবিবেচনায় থাকা উচিত, যেহেতু এটা মৌলিক অধিকার । তথ্য গোপনীয়তা যেকোনও গণতান্ত্রিক দেশের অবিচ্ছেদ্য এবং সর্বদা সংবেদনশীল । কারণ, গোপনীয়তা নাগরিকের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত । তাছাড়া আরো কিছু সমস্যা- ব্যবহারিক প্রতিবন্ধকতা দিক থেকে রয়েছে। যেমন— ১) অবকাঠামোগত সমস্যা, ২) সংস্থানের সীমাবদ্ধতা, ৩) যথাযত প্রশিক্ষণের অভাব, ৪) প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব, ৫)দেশব্যাপী পর্যাপ্ত ইন্টারনেট সেবা নেই এবং অধিকাংশ মানুষ এর ব্যবহার জানেন না, ৬) আমাদের জুডিশিয়াল সিস্টেম Open Court System । বংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ নং অনুচ্ছেদে পাবলিক ট্রায়ালের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ই-জুডিশিয়াল বা ভার্চুয়াল জুডিশিয়াল সিস্টেমে তা সংবিধানের পরিপন্থি, ৭) ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা কতটুকু রক্ষা সম্ভব, যেমন ব্যাংক হিসাব ইত্যাদি, ৮) জেরা, জবানবন্দি, স্বীকারোক্তি ইত্যাদির ক্ষেত্রে শারীরিক উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, অন্যথায় ন্যায় বিচার বিগ্ন হতে পারে, ৯) ই-জুডিশিয়াল বা ভার্চুয়াল জুডিশিয়াল সিস্টেমের ক্ষেত্রে সাধারণ দিনের মতো সকল মামলা শোনা সম্ভব না, গুরুত্বপূর্ণ মামলা গুলো শোনতে হয় । তবে প্রশ্ন থেকে যায় কোন মামলা গুলো গুরুত্বপূর্ণ যা নির্ণয় নিয়ে অরাজগতা দেখা দিতে পারে, ১০) দাখিলীয় দলিলাদির সত্যতা নির্ণয় নিয়ে প্রশ্ন । আমাদের সাক্ষ্য আইনে ডিজিটাল এভিডেন্স এর কোন কথা উল্লেখ নেই ।তাই আইন ও বিধিসমূহ সংশোধন, পরিবর্তন, সংযোজন ও যুগোপযোগী করতে হবে, রুলসে আছে বাদী/বিবাদী বা ফরিয়াদির যেকোন দরখাস্ত লিখিত/টাইপকৃত হতে হবে, ই-পিটিশনের কথাটি উল্লেখ নেই । ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনও সংশোধন করে এর বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে । বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৪ সুপ্রিকোর্টের আপীল বিভাগকে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের একচ্ছত্র অধিকার দিয়েছে । সুতরাং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সুপ্রিমকোর্টের আপীল বিভাগ ই-জুডিশিয়াল বা ভার্চুয়াল জুডিশিয়াল সিস্টেম বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারে । করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ মতো বৈশ্বিক মহামারী সংকটে গুরুত্বপূর্ণ মামলা গুলো বা অল্প পরিসরে জামিন শুনানী করা যেতে পারে । সুপ্রিম কোর্ট কোন ধরনের মামলা গুলো চাঞ্চল্যকর বা গুরুত্বপূর্ণ এই মর্মে দিক নির্দেশনা প্রদান করবে । মামলা শুনানীর পূর্বে ই-এপ্লিকেশন বা মামলার সারমর্ম পেশ করবে যা বিচারক বিবেচনা করে মামলার শুনানী করবে । ইন্টারনেট সুবিধা সর্ব-সাধারনের জন্য সহজলভ্য এবং উন্নত করতে হবে । অবকাঠামো তৈরি করতে হবে । তাৎক্ষনিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে । ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে । বিচারক, আইনজীবী, মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তা, আই টি এক্সপার্ট ও প্রশাসের সমন্বয়ে একটি কমটি গঠন করতে হবে । সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে । কিন্তু বর্তমান করোনাভাইরাসের মতো পরিস্থিতি সামলাতে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর বিকল্প নেই, দীর্ঘদিন ধরে আদালত বন্ধ রয়েছে । অনেক মানুষের যেমন জামিন আটকে রয়েছে, অনেকের নিষেধাজ্ঞার শুনানি হচ্ছে না । অনেক জরুরি মামলার কার্যক্রম বন্ধ । আমাদের আইনজীবীদেরও কোন কাজ নেই । এই করোনা সংকটের সময়ে ভিডিও কনফারেন্স অবশ্যই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে, যদি এটার প্রয়োগ সঠিকভাবে করা হয়। তাহলে এটা বাংলাদেশের পুরো বিচার ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি করবে । বর্তমান সংকট উত্তরণের পরেও কিছু কিছু মামলা ভার্চুয়ালী শুনানি হলে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে, যানজট ও পরিবেশ দূষণ কমবে এবং ঘরে বসেই দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির সুফল পাওয়া যাবে । আশা রাখি প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় এ-নতুন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সংযোজিত হবে ।

লেখকঃ আইনজীবী,কলামিস্ট,মানবাধিকার ও সুশাসন কর্মী

“পাঠকের কলাম” বিভাগের সকল সংবাদ, চিত্র পাঠকের একান্ত নিজস্ব মতামত, এই বিভাগে প্রকাশিত সকল সংবাদ পাঠক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। তা্ই এ বিভাগে প্রকাশিত কোন সংবাদের জন্য পাঠক.নিউজ কর্তৃপক্ষ কোনো ভাবেই দায়ী নয়।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print