
করোনা মহামারী থেকে নগরবাসীকে বাঁচাতে বেসরকারী উদ্যেগে কিছু তরুণের প্রচেষ্ঠায় গড়ে তোলা হয়েছে করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম। আগামীকাল ১৪ জুন রবিবার রোগী ভর্তির মধ্য দিয়ে এই আইসোলেশন সেন্টার আনুষ্ঠানিক চালু হচ্ছে।
এ উপলক্ষে আজ শনিবার বিকালে নগরীর হালিশহরে প্রিন্স অফ চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে আইসোলেশন কেন্দ্রের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্যোক্তরা এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চট্টগ্রামের একঝাঁক নির্ভীক আর মানবিক মানুষের অক্লান্ত শ্রমে গড়ে উঠেছে এই ১০০ শয্যার আইসোলেশান সেন্টার। যেখানে করোনা আক্রান্তদের পরম মমতায় বিনা পয়সায় সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা হবে।
আইসোলেশন সেন্টারে অক্সিজেন, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, পালস অক্সিমিটার, নেবুলাইজার, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকবে।
এখানে ১২ জন চিকিৎসক ও ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষণিক করোনা আক্রান্তদের সেবা দেবেন। যেখানে অক্সিজেন সাপোর্ট থাকবে,স্বাভাবিক চিকিৎসাগুলো হবে,থাকবে ভালোবাসাময় সেবা। সেখানে করোনা রোগীরা খাবে, চিকিৎসা পাবে, সেবা পাবে, মানসিক সাপোর্ট পাবে। এছাড়াও রোগীদের পরিবহনের জন্য থাকবে এ্যাম্বুলেন্স সুবিধা।

আইসোলেশান সেন্টারের প্রধান উদ্যােক্তা ও মুখপাত্র – মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন বলেন,
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি আজ পর্যুদস্ত। মুক্তিযুদ্ধের পর এক ভয়াবহ ক্রান্তিকাল পার করছে বাংলাদেশ। প্রতিদিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।
দুঃখের বিষয় হলো করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বেসামাল বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। সরকারি হাসপাতালের সিট সীমাবদ্ধতা আর বেসরকারী হাসপাতাল মালিকদের নয় ছয় মনোভাবের কারণে এই নগরীর করোনাক্রান্তদের দুর্ভোগ আজ চরমে। আই সি ইউ তো দূরের বিষয় অক্সিজেনের অভাবেই মারা যাচ্ছে অনেক রোগী। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণকারী এসব রোগীর স্বজনদের আহাজারীতে চট্টগ্রামের বাতাস আজ ভারী হয়ে উঠেছে। এসব স্বজনহারাদের আর্তনাদ আর মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের এই করোনা আইসোলেশান সেন্টারের প্রয়াস।
এই উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছেন,প্রধান উদ্যােক্তা ও মুখপাত্র – মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন, উদ্যােক্তা-নাজিমুদ্দিন মাহমুদ শিমুল, ছাত্রনেতা নুরুল আজম রনি, আ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা, আ্যাডভোকেট টিআর খাঁন, জাওয়াদ চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম, ইকরাম উল্লা, তৌহিদুল ইসলাম, জাফর আল তানিয়ার,নুরুজ্জামান, গোলাম সাদমান জনি, সাবিনা আক্তার, সুমন চৌধুরী ও এম.তৌহিদুল ইসলাম,সাদ শাহরিয়ার।
সংবাদ সম্মেলনে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানানো হয় আই এম এস গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর আবু’কে যিনি নিজের কমিউনিটি সেন্টারকে এই আইসোলেশান সেন্টারের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলামের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নগরবাসীর উদ্দেশ্যে উদ্যোগক্তরা বলেন, মানবিক মানুষের নিরলস শ্রমে গড়ে ওঠা এই করোনা আইসোলেশান সেন্টার হয়ে উঠুক মানবিক সেবার এক অনন্য বাতিঘর। চট্টগ্রাম শহরের ৬০ লক্ষ বাসিন্দাদের মধ্য হতে যদি ৫০০ মানুষ এগিয়ে এসে রোগীদের জন্য খাদ্যসামগ্রী, ঔষধ, মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আমাদের পাশে দাড়াঁতে পারবেন। দয়া করে নিজের জায়গা থেকে যতটুকু পারেন এগিয়ে আসুন এই চট্টগ্রামকে করোনার মহামারী থেকে রক্ষা করতে। আমরা সবাই এই ক্রান্তিকালের এমন সময়ে এসে পড়েছি যেখানে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে আমাদেরকে এই মহাবিপদ থেকে রক্ষা করতে।
ধন্যবাদ
সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগের করোনা বিষয়ক সেলের সমন্বয়ক ডা:আ.ন.ম মিনহাজুর রহমান বলেন, আইসোলেশন সেন্টারে করোনাক্রান্ত মৃদু ও মাঝারি উপসর্গের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে।পর্ষাপ্ত অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক আয়োজন সম্পন্ন করেই আগামীকাল ১৪ জুন থেকে এ সেন্টারে রোগী ভর্তি শুরু হবে।চিকিৎসক, নার্স সহ প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়েই ‘আইসোলেশন সেন্টার’ টীমের যাত্রা শুরু হলো।
তিনি বলেন, নগরীতে আইসিইউ শয্যা নিয়ে যে হাহাকার চলছে সে প্রেক্ষিতে বলেন, আইসিইউ শয্যার চেয়ে বেশী প্রয়োজন এই ডি ইউ সেবা। সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রার অক্সিজেন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হোক আমাদের লক্ষ্য। ভেন্টিলেটর নয়,হাইফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা ও নন বিব্রেদার অক্সিজেন মাস্কের প্রাপ্তি নিশ্চিত করলেই তীব্র উপসর্গে ভুগতে থাকা রোগীদের জীবন বাচানো সহজতর হবে।