
একজন কর্মকর্তার দুর্নিতীর তথ্য আড়াল করতে দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে অবস্থিত স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড-(এসএওসিএল) এর তড়িগড়ি করে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে জ্বালনী মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে।
দুর্নির্তীর অভিযোগে বির্তকিত এ কর্মকর্তা হলেন এসএওসিএল’র মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদ।
অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটির এই শীর্ষ কর্মকর্তার বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নির্তীর প্রাথমিক অনুসন্ধানে তথ্য-প্রমাণ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকও। প্রতিষ্ঠানটির ৫৭ কোটি টাকা আত্মসাতের একটি ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে হাজার কোটি টাকার অধিক অর্থ লোপাটের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিশেষ করে অভিযোগ উঠা দুই কর্মকর্তা এসএওসিএল মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদ এর নামে-বেনামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অগুণিত সম্পদেরও খোঁজ পেয়েছে দুদক।

এ অবস্থায় তার সে দুর্নীতি আড়াল করতে করোনাভাইরাসের এই মহামারি মধ্যেও তড়িগড়ি করে আগামী ২৫ জুন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বোর্ড সভার আয়োজন করছেন বোর্ড চেয়ারম্যান জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব-মোঃ আবুল মনসুর।
এ ব্যাপারে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব-মোঃ আবুল মনসুর বলেন, কোন দুর্নিতীবাজ কর্মকর্তাকে রক্ষা করতে নয়, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এজিএমএর তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। একজন ব্যাক্তির কারণে কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড বন্ধ থাকবে না। কেউ দুর্নিতী করে থাকলে তা দুদক তদন্ত করে সত্যতা পেলে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হবে।
জানাগেছে, এসএওসিএল প্রতিষ্ঠানটির অর্ধেক মালিকানা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসি। আর বাকি অর্ধেক ব্যক্তি মালিকানা। আর সরকারি-বেসরকারি দুই পক্ষের স্বার্থ দেখার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়-একজন মহা-ব্যবস্থাপককে। যার নাম-মোহাম্মদ শাহেদ।

অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ শাহেদের বিরুদ্ধে একাধিক সংস্থা দুর্নীতির প্রমাণ পেলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না জ্বালানি মন্ত্রণালয়।
৫৫ বছর পুরনো এই প্রতিষ্ঠানটি আগে শুধু, লুব্রিকেন্ট ব্লেডিং করতো। এজন্য সরকার থেকে পেত সার্ভিস চার্জ। তবে, ২০০০ সালের পর থেকে এসএওসিএল তার চরিত্র বদলাতে থাকে। মনোযোগ দেয় তেল বিক্রির দিকে। প্রথমে এলপি গ্যাস, তারপর বিটুমিন, ফার্নেস অয়েল, ডিজেল আর সর্বশেষ জেট ফুয়েলও বিক্রির অনুমোদন নেয়-প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকেই, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকও। শাহেদের বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপরও একাধিকাবার বিদেশ ভ্রমণ করেন শাহেদ।
দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান জানান, অনুসন্ধান শেষ করে নথি কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বিদেশ গেলেন কীভাবে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দুদক থেকে অনুমতি নিয়েই তিনি বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।
অন্যদিকে, গতবছর তদন্তে নামে বিপিসি। ছয় বছরের হিসাব নিকাশ চাইলেও, তদন্ত টিমকে দেয়া হয়-২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪এই দুই বছরের কাগজপত্র। বাকি ৪ বছরের কোন কাগজপত্র দেখতে দেয়া হয়নি তদন্ত কমিটিকে। তারপরও সেই দুই বছরে-ই অনন্ত ১৩৮ কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পায় বিপিসি। প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক শাহেদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে গত আগস্টে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিলেও, এখন পর্যন্ত সুপারিশ কার্যকর করেনি মন্ত্রণালয়। উল্টো মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল মনসুর নিজেই বার্ষিক সাধারণ সভা আহবান করেন। এই সভা হয়ে গেলেই ধামা-চাপা পড়ে যাবে শাহেদের দুর্নীতি।
তবে, বেসরকারি ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠান ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের যে কর্মকর্তা শাহেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন, তারাও সুবিধাভোগী। তারাও সেই বোর্ডের সদস্য। অভিযোগ আসলে তো তাদের বিরুদ্ধেও চলে আসে। তাই কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে আমি মনে করি’।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদের মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার ফোন করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।