
কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা রাশেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় সেখান থেকে ২১ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
রোববার (০২ জুলাই) স্থানীয় বাহারছড়া চেকপোস্টের ইনচার্জ লিয়াকতসহ অন্যদের প্রত্যাহারের আদেশ দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খোন্দকার গোলাম ফারুক পাঠক ডট নিউজের সাথে টেলিফোনে আলাপকালে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন- মেজর হত্যা নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি মাঠে পর্যায়ে তদন্ত করছে।
এর আগে শুক্রবার (৩১ জুলাই) বাহারছড়ায় পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদ নিহত হন।
মেজর সিনহা রাশেদ খান ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন উপসচিব মো. এরশাদ খানের ছেলে। তিনি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে ২০০২ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি গত ৩ জুলাই ঢাকা থেকে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের তিনজন ছাত্রছাত্রীসহ একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একটি ট্রাভেল ভিডিও তৈরি করতে কক্সবাজার আসেন। প্রায় এক মাস যাবত তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে শুটিং করেন।
সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যুর ব্যাপারে জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সিফাত নামের অপর একজন সঙ্গীসহ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার আসছিলেন। মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে সেনা কর্মকর্তা বাধা দেন। এই নিয়ে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে সেনা কর্মকর্তা তাঁর কাছে থাকা পিস্তল বের করলে পরিদর্শক লিয়াকত তিনটি গুলি চালান। এতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হন। তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শনিবার সকালে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন দাবি করেন, শামলাপুরের লোকজন ওই গাড়ির আরোহীদের ডাকাত সন্দেহ করে পুলিশকে খবর দেয়। এই সময়ে পুলিশ চেকপোস্টে গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু গাড়ির আরোহী একজন তাঁর পিস্তল বের করে পুলিশকে গুলি করার চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ওই ব্যক্তি মারা যান।
পুলিশ সুপার জানান, এই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। দুজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ পিস্তলটি জব্দ করেছে। এ ছাড়া গাড়িতে তল্লাশি করে ৫০টি ইয়াবা, কিছু গাঁজা এবং দুটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেন।
এ দিকে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যু ও মাদক উদ্ধারের দাবির ঘটনায় শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁর রাজউক কলেজের বন্ধুরা। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করতে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন্স অ্যান্ড ক্রাইম) জাকির হোসেন এখন কক্সবাজার অবস্থান করছেন। এ ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহা. শাজাহান আলিকে আহ্বায়ক, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন ও রামু সেনানিবাসের জিওসির একজন প্রতিনিধিকে সদস্য করে গতকাল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, কমিটি ঘটনার বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার কারণ, উৎস অনুসন্ধান করবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় ইত্যাদি সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ পূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ মতামত দেবে।
ঘটনার পর তানভীর অপু নামের একজন তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি হতবাক, শোকে বাকরুদ্ধ। যে উচ্ছল মানুষটি শুধু ভ্রমণ করার জন্য, দুনিয়া দেখার জন্য সেনাবাহিনীর মেজরের চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে জীবনে চলতে চেয়েছিলেন নিজ পথে, তাকে এভাবে হত্যা করা হলো।
সাবেক এসএসএফ অফিসার, কমান্ডো ট্রেনিং পাওয়া আমাদের এত কাছের বন্ধুটা এত ভালো মানুষ ছিলো, আর তাকে নিয়ে এখন এত রটনা –
১. মেজর (অব:) রাশেদ uniform নয় বরং ছিলেন combat কালার T- shirt প্যান্টে এ
২. তার কাছে তার লাইসেন্স পিস্তল ছিলো।
৩. তিনি ইউটিউবে একটা show একটা শুটিং এ সেখানে ছিলেন।
৪. নিজের পরিচয় retired major দেবার পর তিনি গাড়ি থেকে নামেন। এবং তখন আগে থেকেই উপস্থিত ইন্সপেক্টর লিয়াকত গুলি চালান, যেটা প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন সংস্থা জেনেছে।
৫. এর আগে পাহাড়ে শুটিংয়ের সময়ে স্থানীয় তিন / চার জনের সাথে তিনি সাউট করে চলে যেতে বলেন।
এই ঘটনার পিছনে সত্য উদঘাটন হোক।’