ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

সেনা অফিসার সিনহা খুনের নির্দেশদাতা ওসি প্রদীপ এখনও বহাল তবিয়তে!

টেকনাফ থানায় কর্মরত অবস্থায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

টেকনাফ থানায় কর্মরত অবস্থায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।

কক্সবাজারের টেকনাফে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খাঁনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সেখানকার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই লিয়াকতসহ ২১ জন পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এ ঘটনা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি এবং সেনা বাহিনীর নিজস্ব তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
এছাড়া প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) একটি টিম মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শেষে সদর দপ্তরে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। ডিজিএফআই’র সে রিপোর্ট ইতোমধ্যে দেশ বিদেশ থেকে প্রচারিত কয়েকটি অনলাইনে প্রকাশ হয়েছে।

তদন্ত চলা অবস্থায় গতকাল রবিবার রাতে সেনা কর্মকর্তাকে সরাসরি গুলি বর্ষনকারী সেই এসআই লিয়াকতকে প্রত্যাহার করা হলেও অভিযোগ উঠেছে হত্যার নির্দেশদাতা টেকনাফ থানার আলোচিত ও বির্তর্কিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এখনো বহাল তবিয়তে স্বপদে বহাল রয়েছে।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে জানাগেছে, থানার ওসির নির্দেশ ছাড়া কোন অফিসার গুলি চালাতে পারে না। ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী বিবরণ থেকে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন। গুলি করার আগে এসআই লিয়াকত তার মোবাইল ফোন থেকে ওসি প্রদীপের সাথে কথা বলে তার নির্দেশেই সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খাঁনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে কোন কথা বলতে না দিয়েই সরাসরি বুকে পর পর তিনটি গুলি করেন।

এদিকে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) গোপন তদন্ত প্রতিবেদনে স্থানীয় টেকনাফ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে সন্দেহভাজন অপরাধীদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, “হত্যার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকা পুলিশ একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যায়ও দ্বিধা করেনি।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে টেকনাফের বির্তর্কিত ওসি প্রদীপের কথিত ক্রসফায়ারের নামে বিচার বর্হিভূত গণহত্যার কারণে পুলিশ যে কাউকে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করছে না। যার শেষ পরিণতি মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন।

.

অভিযোগ রয়েছে ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর ওসি প্রদীপ টেকনাফে যোগদান করেন। এর পর থেকে গত দুই বছরে শুধু টেকনাফে ১৪৪টি বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব বন্দুকযুদ্ধের নামে ওসি প্রদীপ কুমার ২০৪জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। মূলত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীর ট্যাগ লাগিয়ে নিরীহ লোকজনকে থানায় ধরে নিয়ে মোটা অংকে অর্থের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। যারা টাকা দিতে পারে না তারাই ভাগে জুটে ক্রসফায়ারের নামে নির্মম মৃত্যু।

জানাগেছে মাদকের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্সকে অপব্যবহার করে টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমার দাশ মেতে উঠেছেন বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যে। বিএনপির আমলে প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর আশির্বাদে চাকুরীতে যোগ দিয়ে নিজের কুকীর্তি আড়াল করতে তিনি এখন রূপ পাল্টিয়ে হয়েছেন মহা আওয়ামীলীগ।

মেজর (অবঃ) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন নামক ওই কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় কক্সবাজার পুলিশ যেই বিবৃতি দিয়েছে, সেটির সঙ্গে ডিজিএফআইর করা মাঠ প্রতিবেদনটি সাংঘর্ষিক। পুলিশ দাবি করেছে, পুলিশের একটি বহর মেজর (অবঃ) সিনহার গাড়ি তল্লাশি করতে চাইলে তিনি নিজের ব্যক্তিগত অস্ত্র বের করেন। এ সময় আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ গুলি করে।

তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজের বরাত দিয়ে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, মেজর (অবঃ) সিনহা তার অস্ত্র বের করেননি। যখন তাকে গাড়ি থেকে বের হতে বলা হয়, তখন তিনি হাত উঁচু করে বের হন। এরপর কোনো বাতচিত ব্যতিরেকেই তাকে গুলি করে হত্যা করেন পুলিশবহর প্রধান এসআই লিয়াকত। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও ৪৫ মিনিট ধরে মেজর (অবঃ) সিনহাকে হাসপাতালে না নিয়ে ঘটনাস্থলেই ফেলে রাখে পুলিশ, “পুলিশ কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মৃতদেহ হাসপাতালে আনা একটি পৈশাচিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ।”

এর আগে শনিবার রাতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে তদন্ত শেষে একটি প্রেসবিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় সংবাদ মাধ্যমকে। ঘটনার ব্যাপারে সেনাবাহিনীর বিবরণের সাথে গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনের মিল পাওয়া গেছে।

ডিজিএফআই’র প্রতিবেদনের “মন্তব্য” বিভাগে বলা হয় যে, টেকনাফ পুলিশের মধ্যে মাদক নির্মূলের নামে এক ধরণের “হত্যার প্রতিযোগিতা” বিদ্যমান। এতে বলা হয়, “এই প্রতিযোগিতা অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও আরও দিবে বলে ধারণা করা যায়।”

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের উপজেলা হিসেবে পরিচিত টেকনাফকে দেশে মাদক প্রবেশের সবচেয়ে বড় রুট বলেও বিবেচনা করা হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাদক নির্মূল অভিযানে সন্দেহভাজন অপরাধীদের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে।

গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর পাঠক ডট নিউজ এ “ভয়ঙ্কর এক ওসি’র নাম প্রদীপ কুমার দাশ” শীর্ষক তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার টেকনাফে বেশ আলোচনার সমালোচনার ঝড় উঠে। প্রদীপের হাতে নির্যাতির ও খুনের শিকার পরিবার পাঠক নিউজের প্রতিবেদনের জন্য টেলিফোনে ধন্যবাদ জানায়।  নিউজটি শুধু পাঠক ডট নিউজের সাইট থেকে শেয়ার হয় প্রায় অর্ধ লাখ।

.

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে অনুসন্ধ্যানে মাঠে নামেন কক্সবাজারে ডিজিএফআইসহ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা।  তারা ফোনে পাঠক নিউজে প্রতিবেদক ও সম্পাদকের সাথে কথা বলে সহযোগিতা চায় এবং প্রতিবেদনের সম্পর্কে তথ্য উপাথ্য সংগ্রহ করেন।

কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের পরও রহস্যজনক কারণে স্বপদে বহাল থেকে হত্যাযজ্ঞসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে ওসি প্রদীপ দাশ।

২০১৮ সালের মাঝামাঝি, অর্থাৎ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশজুড়ে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এরপর দুই-তিন মাসের মধ্যেই দেশজুড়ে ব্যাপক মাদক-বিরোধী অভিযানে দুই শতাধিক সন্দেহভাজন নিহত হন, আটক হন হাজার হাজার মানুষ। তখন অভিযোগ উঠেছিল, কেবল সাধারণ মাদক সন্দেহভাজনই নয়, সাধারণ নিরীহ মানুষ ও বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীরাও এসব হত্যাকাণ্ড ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

সুত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেয়া এ পুলিশ কর্মকর্তা চাকরির অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও কক্সবাজার জেলা পুলিশে। এর সুবাধে এসব এলাকায় গেড়ে বসেছেন অপরাধের শিকড়। তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক নানা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে কর্মস্থল থেকে হয়েছেন বরখাস্ত, প্রত্যাহার ও বদলী। কিন্তু এতকিছুর পরেও ব্যাপক ক্ষমতাধর ওসি প্রদীপের টিকিটাও ছুঁতে পারেনি কেউ। টাকার বিনিময়ে বাগিয়ে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন থানার ওসির চেয়ার। এছাড়া সরকার দলীয় প্রভাব বিস্তার করে চালিয়ে যান নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড।

কক্সবাজারের চিহ্নিত ইয়াবা কারবারিদের সাথে তার গোপন সুসম্পর্ক থাকার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন থানা ঘুরে বহু বছর ধরে কক্সবাজারেই রয়ে গেছেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।

জেলার সচেতন মহল দাবি করছেন, রোহিঙ্গা, মাদক ও মানব পাচার সহ জাতীয়-আন্তর্জাতিক ইস্যুতে কক্সবাজারের গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা টেকনাফ। কিন্তু ওসি প্রদীপ কুমারের মত একজন বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তাকে টেকনাফ থানায় দায়িত্বভার দেওয়ায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিদের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারা।

তারা বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশের কক্সবাজার প্রীতি সম্প্রতি বেশ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও সদর মডেল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালনের পর ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি মহেশখালী থানায় যোগদান করেন ওসি প্রদীপ। এ থানায় ১বছর সাড়ে ৮মাস দায়িত্ব পালনে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেন তিনি। মহেশখালী থানায় যোগদান পরবর্তী অপরাধীদের ধরপাকড় শুরু করলেও কিছুদিনেই তা মিইয়ে যায়। এতে জলদস্যু এবং ইয়াবা কারবারিদের সাথে তার গোপন আঁতাতের অভিযোগ উঠে।

এছাড়া হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মহেশখালীর চিহ্নিত সন্ত্রাসী ফেরদৌস বাহিনীকে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছিল ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে। সেসময় তার প্রত্যাহারের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল। সন্ত্রাসী বাহিনী থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মহেশখালীর হেতালিয়া প্রজেক্টের লবণচাষি মো. আব্দুস সাত্তারকে ধরে পাহাড়ে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যা করে বলে অভিযোগ রয়েছে এ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

তাছাড়া মহেশখালীতে নিজেকে আওয়ামী লীগার হিসেবে তুলে ধরতে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাতেও অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকেছেন ওসি প্রদীপ। এরকম বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকা নিয়ে একবার খোদ ওই দলেই নানা গুঞ্জন উঠেছিল। এর ফলে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীকে।

কিন্তু এত অভিযোগের পরেও ওসি প্রদীপ পেয়ে যান বাহবা। ভাগিয়ে নেন গুরুত্বপূর্ণ থানার গুরুদায়িত্ব। পুলিশি কর্মকাণ্ডের আড়ালে এমন কোন অপরাধ নেই, যা প্রদীপ কুমার দাশ করেননি। বাকি ছিল শুধু ইয়াবা রাজ্যের রাজত্ব করা। আর কাঁচা টাকার স্বাদ নেয়া। তাই ইতোমধ্যে বাগিয়ে নিয়েছেন টেকনাফ থানার ওসির চেয়ার। মেতে উঠেন হত্যা যজ্ঞে।

এসব ব্যাপার নিয়ে ওসি প্রদীপের সাথে কথা বলতে বার বার মোবাইলে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

* ভয়ঙ্কর এক ওসির নাম প্রদীপ কুমার দাশ

* বিতর্কিত ওসি প্রদীপ ফের সিএমপিতে

 

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print