
উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় নাডা। আতঙ্কে উপকূলের মানুষ। শনিবার সন্ধ্যা হতেই এই অঞ্চলগুলোতে মানুষের আনাগোনা কমতে শুরু করেছে। ৩দিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টি ও বাতাস। শনিবার বিকেল থেকেই হঠাৎ মেঘলা আবহাওয়ায় শীতের আভাস থাকায় অন্ধকার নামতেই চারিদিকে শুনশান নিরবতা। নাডা নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতিরও অন্ত নেই। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। অন্য দিকে চলছে মাইকিং ।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় নাডা আতঙ্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রোববারের নির্ধারিত টুঙ্গিপাড়া সফর স্থগিত করা হয়েছে। বিপিএলের চতুর্থ আসরটি আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে। সাগরে নিম্নচাপের কারণে জেএসসির বরিশাল বোর্ড ও জেডিসির রোববারের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে।অন্যদিকে সারাদেশের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতি।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এটি রোববার সকাল নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিশেষ বুলেটিনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বুলেটিনে বলা হয়, গভীর নিম্নচাপটি শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত ও উত্তরউত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে রোববার সকাল নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

এতে বলা হয়, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৫০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। অন্যদিকে দুপুর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব সতর্কতা ‘অ্যালার্ট-২’ জারি করা হয়েছে।
বন্দরের পর্ষদ সদস্য জাফর আলম রাতে গণমাধ্যকে জানান, ‘অ্যালার্ট-২’ অনুযায়ী বন্দর জেটিতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে শক্তভাবে বেঁধে রাখা, ক্রেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ইত্যাদি কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। তবে বন্দরের অন্যান্য কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রোববারের নির্ধারিত টুঙ্গিপাড়া সফর স্থগিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর সফর স্থগিত করা হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিপিএলের চতুর্থ আসরটি আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে। নতুন করে এই আসর মাঠে গড়াবে মঙ্গলবার থেকে। শনিবার সন্ধ্যায় বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করে।
সাগরে নিম্নচাপের কারণে জেএসসির বরিশাল বোর্ড ও জেডিসির রোববারের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
মাহবুবু বলেন, জেএসসির বরিশাল বোর্ডের রোববারের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা ১২ নভেম্বর একই সময়ে নেওয়া হবে। আর জেডিসির এদিনের ইংরেজি দ্বিতীয় প্রথম পত্রের পরীক্ষা নেওয়া হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি।
বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সারাদেশের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতি। শনিবার সমিতির প্রধান উপদেষ্টা মো. গোলাম কিবরিয়া টিপু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, দুযোর্গপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শনিবার দুপুর থেকে ছোট-বড় সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার লঞ্চ চলাচল শুরু হবে।
এছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) উদ্যেগে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘নাডা’র আঘাত থেকে উপকূলীয় নগরবাসীকে রক্ষা এবং সম্ভাব্য দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলা, পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিংয়ের জন্য শনিবার সকাল থেকে সার্বক্ষণিকভাবে নগরীর দামপাড়ায় বিদ্যুৎ উপ শাখা কার্যালয়ে মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে।
এ ছাড়া সম্ভাব্য দুর্যোগ কবলিত এলাকার মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর, শুকনো খাবার, চিকিৎসা সেবার জন্য চিকিৎসক ও ওষুধপত্রসহ চিকিৎসা সামগ্রী এবং উদ্ধারকাজের জন্য ৫০০ জন উদ্ধারকর্মী ও ইক্যুইপমেন্ট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার ওয়ার্ডগুলোতে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, পতেঙ্গা, কাট্টলীসহ উপকূলীয় এলাকার কাউন্সিলররা নিজ নিজ এলাকায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, আশ্রয়কেন্দ্র দেখা শোনাসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দায়িত্ব দিয়েছেন।
সম্ভাব্য দুর্যোগ বিষয়ে চসিকের দামপাড়া বিদ্যুৎ উপশাখার আঞ্চলিক অফিসে একটি সার্বক্ষণিক মনিটরিং সেল (৬৩০৭৩৯ ও ৬৩৩৪৬৯) খোলা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাহফুজুল হক (০১৮১৯-৩৮৭৪৬৩) ও নির্বাহী প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশের (০১৮১৯-৩৪৯০৯৩) যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।