
নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি:
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নিজ ঘরে ধর্ষণ চেষ্টায় বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় প্রধান আসামি সহ ৪জনকে পৃথক পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ ও র্যাব-১১ গ্রেফতার করে।
আজ সোমবার (৫ অক্টোবর) সকালে মামলার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা থেকে ও স্থানীয় দুর্ধর্ষ দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আটক করে র্যাব-১১।
আটককৃত, বাদল (২২) একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মধ্যম একলাশপুর গ্রামের মোহর আলী মুন্সি বাড়ির রহমত উল্যার ছেলে, দেলোয়ার একই গ্রামের কামাল উদ্দিন ব্যাপারী বাড়ির সাইদুল হক’র ছেলে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম কার্যালয়কে র্যাব-১১ হেডকোয়ার্টার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এ ঘটনায়, সোমবার দিনগত রাতে রাতে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে নির্যাতিতা গৃহবধূ (৩৫) বাদী হয়ে নয় জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাব তিন দফায় অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে আটক করে।
এছাড়া তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে আরও একটি মামলা হয়েছে। রবিবার রাতে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ (৩৫) বাদী হয়ে প্রথম মামলাটি করেন। এদিকে, দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও আবদুর রহিমসহ ৫ তরুণ ওই ঘটনা ঘটায় বলে জানা গেছে। কিন্তু আসামি তালিকায় নেই বাহিনী প্রধান দেলোয়ারের নাম।
বাদল (২২)-কে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া রহিম (২০), আবুল কালাম (২২), ইসরাফিল হোসেন (২২), সাজু (২১), সামছুদ্দিন ওরফে সুমন (৩৯), আবদুর রব ওরফে চৌধুরী মিয়া (৪৮), আরিফ (১৮) ও রহমত উল্যা (৪১)-এর নাম উল্লেখসহ ৭/৮ অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে গত ৩২ দিন দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর পরিবারকে কিছু দিন অবরুদ্ধ করে রাখে। এক পর্যায়ে তার পুরো পরিবারকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে।
পুলিশের হাতে আটককৃতরা হলো- একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার হারিদন ভূঁইয়া বাড়ির শেখ আহম্মদ দুলাল’র ছেলে মো. রহীম (২০) ও একই এলাকার মোহর আলী মুন্সি বাড়ির মৃত আব্দুর রহীম’র ছেলে মো.রহমত উল্যাহ (৪১)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত মাসের (২সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূ (৩৫) এর বসত ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে শ্লীলতাহানি করে স্থানীয় বাদল ও তার সংঘবদ্ধ বখাটে যুবক দল। ঐ সময় গৃহবধূ বাঁধা দিলে তারা তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে।
ওসি মো.হারুন উর রশীদ আরো জানান, পুলিশ অভিযুক্ত অপর আসামিদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। আটককৃত আসামিদের বিচারিক আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, তিন বছর আগে ওই নারীর বিয়ে হয়। স্বামী তাকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর থেকে তিনি বাবার বাড়িতে থাকতেন। দীর্ঘদিন স্বামীর সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ ছিল না। ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই নারীর স্বামী তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। রাত ১০টার দিকে দেলোয়ার তার লোকজন নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে অনৈতিক কাজের অভিযোগ এনে তাকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে পিটিয়ে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও করে।
রবিবার (৪ অক্টোবর) দুপুরের দিকে ঘটনার ৩২দিন পর গৃহবধূকে নির্যাতনের ঐ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পেলে তা ভাইরাল হয়ে গেলে টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের। ঘটনার পর থেকে গত ৩২ দিন অভিযুক্ত স্থানীয় দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা নির্যাতিতা গৃহবধূর পরিবারকে কিছু দিন অবরুদ্ধ করে রাখে। এক পর্যায়ে তার পুরো পরিবারকে বসত বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করলে পুরো ঘটনা দীর্ঘদিন স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ প্রশাসনের অগোচরে থাকে। পরে ঘটনার জানাজানি হলে পুলিশ দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে ২ আসামিকে আটক করে।