
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গোয়েন্দা পুলিশকে জড়িয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ৩ জনকে আটক করেছে সিআইডি। এসময় বহিষ্কৃত জবি শিক্ষার্থী তিথি গুজব ছড়িয়ে আত্মগোপন করে বলেও জানায় তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় সিআইডি সাইবার পুলিশের ডিআইজি জামিল আহমেদ।
জামিল আহমেদ জানান- সিআইডির তদন্তে দেখা যায়, জাগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী তিথি সরকার বিভিন্ন সময় ফেসবুকে ধর্মীয় উস্কানীমূলক পোস্ট শেয়ার করতো। এরপর নিজেই নিখোঁজ হওয়ার গুজব ছড়িয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। পরে তিথিকে সাইবার পুলিশ নরসিংদী থেকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিথি সরকার, স্বামী শিপলু মল্লিক ও নিরঞ্জন সরকার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।

সপ্তাহখানেক আগে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারের হাত পা বাঁধা লাশ সিআইডির মালিবাগ কার্যালয়ে পড়ে আছে’ এমন খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
(নিচের অংশটুকু সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ এর ফেসবুক ষ্ট্যাটাস থেকে নেয়া)
তিথির শেষ রক্ষা হলোনা:
সিআইডি সাইবার ক্রাইম টিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে সিআইডির মালিবাগ অফিসের চারতলা থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার শীর্ষক একটি মিথ্যা পোস্ট -র খবর পায়। এই সংবাদটি দ্রুত বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেইজ এ ভাইরাল করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রকৃতপক্ষে সিআইডির অভ্যন্তরে এ রকম কোন ঘটনাই কখনোই ঘটেনি। মিথ্যা নিউজ এবং সকল গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা কার্যক্রম শুরু করে সিআইডির সাইবার পুলিশ টিম। ০২/১১/২০২০ তারিখে রাজধানীর রামপুরাস্থ বনশ্রী এলাকা থেকে অন্যতম গুজব রটনাকারী নিরঞ্জন বড়াল (৫০) কে গ্রেফতার করে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তিথী সরকার তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে মহানবী (স:) কে নিয়ে কটুক্তিসহ ধর্মীয় উস্কানীমূলক বিভিন্ন পোস্ট, কমেন্ট ও তথ্য শেয়ার করেন, যার ফলশ্রুতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ তার বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সমাবেশ করে। এ সম্পর্কিত ভবিষ্যৎ বিপদ এড়াতে এবং নিজেকে নিরাপদ রাখতে তার সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীর পরামর্শে তার ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছে মর্মে গত ২৩/১০/২০২০ তারিখে পল্লবী থানায় একটি মিথ্যা জিডি করে । এরই ধারাবাহিকতায় ২৬/১০/২০২০ তারিখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিথী সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করে এবং বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদকের পদ থেকেও তাকে বহিস্কার করা হয়।

গত ২৭ অক্টোবর ২০২০ তারিখে তিথী সরকারের বড় বোন স্মৃতি রাণী সরকার ডিএমপির পল্লবী থানায় তিথী সরকার নিখোঁজ সংক্রান্তে একটি জিডি করে। উক্ত জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৫ অক্টোবর ২০২০ সকাল ০৯.০০ ঘটিকার পর তিথী সরকার মিরপুরের পল্লবীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন বলে জানান।
সাইবার পুলিশ সেন্টারের গোপন তথ্য বিশ্লেষনে জানা যায়, তিথী সরকার স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থেকে গ্রেফতার/অপহরণের নাটক সাজাচ্ছে। তার ধারণা ছিল এভাবে করে আত্মগোপনে থেকে তার অপহরণের দায়ভার অন্যের উপরে চাপিয়ে দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত ঘটনা থেকে সে রেহাই পাবে/ ঘটনাপ্রবাহ অন্যদিকে ধাবিত হবে।

পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকা তিথী সরকারের অবস্থান সনাক্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের লক্ষ্যে সিআইডি সাইবার পুলিশের একটি বিশেষ টিম অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও গোপন সোর্সের এর দেওয়া তথ্যানুযায়ী গত ১১/১১/২০২০ খ্রি. নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন পাচদোনা এলাকা থেকে তিথী সরকারকে আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় গত ২৫/১০/২০২০ তারিখে মিরপুরের পল্লবীর বাসা থেকে বের হয়ে তার প্রেমিক শিপলু মল্লিক এর সাথে যোগাযোগ করে বাগেরহাট যান। সেখানে শিপলু মল্লিককে বিয়ে করে বাগেরহাটে অবস্থান করে ৯ নভেম্বর ঢাকায় আসে। পরবর্তীতে শিপলু মল্লিকের নরসিংদীর দূরসম্পর্কের চাচা দেবাশীষ রায়ের বাসায় অবস্থানকালীন সময়ে সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের ২টি টিম তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে ১১/১১/২০২০ তারিখ সেখান থেকে তিথী সরকারকে আটক করা হয়। এর আগে সকাল ১১.৪৫ টায় ঢাকার গুলিস্থানের কাপ্তান বাজারের ইলেকট্রনিক মার্কেট থেকে শিপলু মল্লিককে আটক করা হয়।
নিরঞ্জন বড়াল গ্রেফতার লিংক:
https://www.facebook.com/1371990406/posts/10218422090048197/?d=n