
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষানীতি ও নারী নীতিমালার বিরোধীতা, ১৩ দফা দাবী, শাপলা চত্বরে বৃহৎ সমাবেশ সহ নানান কর্মকান্ডের কারণে বারবার আলোচনার শীর্ষে থাকা দেশের শীর্ষ অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল (১৫ নভেম্বর)। হাটহাজারী মাদরাসার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এ সম্মেলনকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে শীর্ষ এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। হেফাজতের নতুন আমির কে হচ্ছেন এ নিয়ে হাটহাজারী সহ সারা দেশের আলেম সমাজ ও সাধারণ জনমনে আগ্রহের কমতি নেই।
সরকারের ঘোষিত নারী উন্নয়ন নীতিমালা ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধীতা করতে গিয়ে গত ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংগঠনটি দেশজুড়ে আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবিতে সারাদেশ ব্যাপী ব্যাপক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর অবরোধের মাধ্যমে।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আমির হিসেবে হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফি আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করে গেছেন। চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আল্লামা শফির মৃত্যুর পর হেফাজত আমিরের পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। এরপর থেকেই হেফাজত আমিরের এ পদ লাভের জন্য হেফাজতের শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতার মধ্যে ব্যাপক তোড়জোড় চলছে। শীর্ষ এ পদে কে আসছেন এমন প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। শুরু থেকেই চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে থাকলেও সংগঠনটির বেশিরভাগ অংশ চাচ্ছেন ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থানান্তরিত করতে। এজন্য ঢাকায় অবস্থানরত হেফাজতের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের থেকে আমির ও মহাসচিব নির্বাচনের ব্যাপারেও অনেকে ভাবছেন, এমন দাবি করেছেন হেফাজতের বেশ কয়েকজন নেতা। এই সম্মেলনে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফি’র অনুসারী নেতাদের কৌশলে বাদ রেখে নতুন কমিটি গঠনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে হেফাজতের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতার অভিযোগ। তবে হেফাজতের অন্যতম নেতা মাওলানা মীর ইদরিস অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেন, বর্তমান কমিটির সকল নেতৃবৃন্দকেই সম্মেলনে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে। কাউকে বাদ দেয়া হয়নি।
এদিকে আগামীকালের এই সম্মেলনে সারাদেশ থেকে কওমি অঙ্গনের শীর্ষ আলেমরা কাউন্সিলে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। হেফাজতের প্রায় সাড়ে তিনশত কেন্দ্রীয় শীর্ষ আলেম সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে নতুন আমির নির্বাচিত করবেন। নতুন আমির হিসেবে বর্তমান মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক শায়খুল হাদীস আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরীকে বেশিরভাগ আলেমগণ সমর্থন করলেও চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার মাদ্রাসার পরিচালক ও হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা নায়েবে আমির আল্লামা মুফতি ইজহারুল ইসলামের নামও রয়েছে আলোচনায়। মুফতি ইজহার তার দুই ছেলেকেও হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক করতে আগ্রহী এমন কথা শোনা গেলেও মুফতি ইজহারের বড় ছেলে হারুন ইজহার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। হেফাজতের মহাসচিব পদ নিয়েও চলছে নানা গুঞ্জন। এ পদটির জন্য একাধিক নাম শোনা গেলেও হেফাজতের শীর্ষ নেতা মাওলানা নুর হোসাইন কাসেমী কিংবা মাওলানা মামুনুল হককে এই পদে দেখতে চাইছেন বেশিরভাগ আলেম।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে সারা দেশের আলেম সমাজ। গুরুত্বপূর্ণ এ পদে যিনি আমির নির্বাচিত হবেন তাকে নিয়েই হেফাজত পূর্নগঠিত হবে।
তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে সম্মেলনকে ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি শেষ পযার্য়ে। সারাদেশের ৬৪টি জেলা থেকে হেফাজতের শীর্ষ নেতারা সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। সেখানে তাদের মতামতের ভিত্তিতে আমাদের আমির নির্বাচিত করা হবে। মুফতি ইজহার আমির পদে আসছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের সংগঠনে কোন প্রার্থী কিংবা ভোট প্রদানের নিয়ম নেই, কাউন্সিলে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের তাৎক্ষনিক মতামতের ভিত্তিতেই কমিটি গঠন হবে।
এদিকে হেফাজতের আমির আল্লামা শফির পুত্র মাওলানা আনাস মাদানি হেফাজতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে থাকলেও কাউন্সিল নিয়ে তার তেমন ভূমিকা দেখা যাচ্ছেনা। আল্লামা শফির মৃত্যুর পর থেকে তিনি অনেকটা নীরব রয়েছেন। বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার তাকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
আল্লামা শফির অনুসারী হিসেবে পরিচিত হেফাজতের যুগ্ন মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহি বলেন, হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফি হেফাজতে ইসলামকে মুসলমানদের ঈমান আক্বিদা রক্ষার জন্য দলমত নির্বিশেষে সকল মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ একটি প্লাটফরম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই হেফাজতকে ক্ষমতালোভী একটি গোষ্ঠির পকেট কমিটিতে রূপান্তর করা হচ্ছে। এ কমিটিতে আল্লামা শফি, মুফতি আমিনি ও চরমোনাই পীর অনুসারিদের বাদ দেয়ার নীল নকশা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত যারা হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির সাথে যারা চরম বেয়াদবি ও অমানবিক আচরণ করতে বেশি উৎসাহিত ছিলেন এবার হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে তাদেরই বেশি মূল্যায়ন করা হচ্ছে।