
পরকিয়া প্রেমের কারণে পথের কাটা স্বামী রফিকুল ইসলামকে ৩০ হাজার টাকায় ভাড়া করা খুনি দিয়ে জবাই করে হত্যা করেছিল স্ত্রী উম্মী সালমা। এক বছর আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী বিএমএ এলাকার বালুর সড়কসংলগ্ন ব্রিজের নিচ থেকে রফিকুলের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। মাত্র ৩ মাস আগে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে গতকাল রবিবার (২০ডিসেম্বর) বগুড়া নন্দীগ্রাম থানা এলাকা হতে স্ত্রী উম্মে ছালমা (৩০) গ্রেফতার করে রফিকল হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম।
নিহত রফিকুল নাটোর জেলার সিংরাইল থানার কুসুমদি আনন্দনগর গ্রামের শুকলাল প্রামাণিকের ছেলে।
পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান পাঠক ডট নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ, ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলায় ভাটিয়ারী বিএম এর উত্তর পাশে হাটহাজারী- সীতাকুণ্ড সংযোগ সড়কের রেলওয়ে ওভারব্রীজের কাছে রফিকুলকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরদিন বুধবার সকালে তার উদ্ধার করা হয়।
তখন রফিকুলের স্ত্রী উম্মি সালমা পুলিশ ও সাংবাদিক বলেছিলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টায় পানির পাম্প কেনার জন্য ২০ হাজার টাকা নিয়ে ভাটিয়ারী বাজারে যান স্বামী রফিকুল। রাতে তিনি বাড়ি না ফেরায় সারারাত তাকে সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করা হয়। বুধবার সকালে স্থানীয় লোকজনের মুখে ব্রিজের নিচে মরদেহ পড়ে থাকার খবর পাই। এর পর ঘটনাস্থলে গিয়ে রফিকুলের মরদেহ শনাক্ত করি।

তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই এসআই মোঃ কামাল আব্বাস পাঠক ডট নিউজকে বলেন, অজ্ঞাত আসামী করে সীতাকুণ্ড থানায় দায়ের করা মামলার ক্লু-বিহীন এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘ ৮ মাস তদন্ত করেও হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়ে সীতাকুণ্ড পুলিশ পিবিআইকে মামলা তদন্তের অনুরোধ জানায়। মাত্র ৩ মাস আগে মামলাটি পিবিআেই’র হাতে আসে।
অনেক চেষ্টার পর আমরা মূল হত্যাকারী পরকিয়া প্রেমিক মোঃ সাকিবুল ইসলাম প্রকাশ সাকিব (২০)কে গ্রেফতারের পর সে আদালতে ১৪৪ ধারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনার কথা জানায়। তার স্বীকারোক্তিতে মামলার বাদী নিহত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী উম্মি ছালমার নাম বেরিয়ে আসে হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে।
তাই নিয়ম অনুযায়ী আমরা প্রথমে আদালতে এ হত্যার ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে স্ত্রী ছালমাকে আসামী দেখিয়ে নতুন মামলা দায়ের করি। কারণ হত্যা মামলার বাদী যখণ আসামী হয়ে যায় আগের মামলা ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে নতুন করে মামলা ও তদন্ত করতে হয়।
এসআই মোঃ কামাল আব্বাস বলেন, দীর্ঘ দিন অনুসন্ধ্যানের পর আমরা জানতে পারি হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী স্ত্রী উম্মি ছালমা বগুড়ায় অবস্থান করতে সে তথ্যের ভিক্তিতে গতকাল বগুড়ায় অভিযান চালিয়ে তার বাবার বাড়ী থেকে তাকে গ্রেফতার করেছি। মূলত হত্যাকারী সাকিবের সাথে ছালমার পরকিয়া প্রেমের কারণে ছালমার পরিকল্পনায় সাকিবের ভাড়া করা খুনি ইমরান মিলে পরিকল্পিতভাবে ভিকটিম রফিকুল ইসলামকে হত্যা করেছে।

ঘটনার বিবরণে পিবিআই জানায়, মোঃ সাকিবুল ইসলাম (সাকিব) (২০) এর সাথে বিএম গেইট, কলেজ পাড়া, রফিকুল ইসলাম সওদাগরের কলোনী, ভাটিয়ারীতে বসবাস কালে পরিচয় হয়। আসামী সাকিবুল ইসলাম সাকিব এর সাথে মামলার ভিকটিম মৃত রফিকুল ইসলাম (৪৫) পরিচয়ের সুবাদে সাকিব ও ভিকটিম মৃত রফিকুল ইসলামের মধ্যে সখ্যতা ও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এবং বাসায় আশা যাওয়ার সুবাদে রফিকুলের স্ত্রী উম্মে ছালমার মোবাইল নাম্বার আদান প্রদান হয়। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে সাকিব এর সাথে গ্রেফতারকৃত আসামী উম্মি ছালমা মোবাইল ফোনে কথা বলতো। একপর্যায়ে উভয় প্রেম ভালবাসা সহ দৈহিক সম্পর্কে জড়িত হয়ে পড়ে। নিহত রফিকুল ইসলাম তাদের প্রেম ভালবাসা ও দৈহিক সম্পর্ক জেনে গেলে স্ত্রী ছালমাকে গালাগাল ও মারধর করে। এর পরও দুজনের অবৈধ পরকিয়া চলতে থাকলে রফিকুল স্ত্রীর ছালমার দাম্পত্য কলহ বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে প্রেমিক সাকিব ও ছালমা তাদের প্রেমের কাটা রফিকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং ৩০ হাজার টাকায় হত্যার জন্য সাকিব তার পূর্ব পরিচিত এমরান প্রকাশ ইমরানকে ভাড়া করে ভাটিয়ারী বিএমএর ওভারব্রীজ এলাকায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের সময় ৬০ গজ দূরে দাড়িয়েছিল স্ত্রী উম্মী ছালমা।
গতকাল রবিবার ছালমাকে আদালতে হাজির করলে ১৬৪ ধারা দেয়া জবাবন্দিতে ছালমা স্বামী রফিকুলকে হত্যার এসব পরিকল্পনা ও হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জানায় পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা কামাল আব্বাস।