
‘আমি কখনো আমার ছেলের গায়েও হাত তুলি নি। সে অত্যন্ত লাজুক ছিল। সে সারা রাত জেগে পড়াশোনা করতো। ও আমার সম্পদ ছিল না, পুরো দেশের সম্পদ ছিল। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সুষ্ঠু বিচারের জন্য আমই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
কান্না বিজড়িত কন্ঠে এভাবেই বৃহস্পতিবার বিকেল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ছেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফানের হত্যার বিচার চান আওয়ামী লীগ নেত্রী মা জাহেদা আমিন চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে বার মুছড়ে পড়া দিয়াজের মা বলেন, আমার ছেলের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ কখনো আমার কাছে অভিযোগ করেনি। সে সুস্থ রাজনীতি করতো। অস্ত্রের রাজনীতি করে নাই। যদি অস্ত্রের রাজনীতি করতো, সন্ত্রাসের রাজনীতি করতো তাহলে তার কাছে অত্যন্ত একটা অস্ত্র হলেও থাকতো। আমি জানি আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করে তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক ওর নামে যাতে কোন অপবাদ বা কলংক না উঠে। তার নামে কলংক উঠলে পুরো ছাত্রলীগ কলংকিত হবে। ও এমন কাজ করতে পারে না। ওরা আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। আমার ছেলেকে সরিয়ে দিতেই এ হত্যা। ওরা হয়তো ভেবেছিল ওকে (দিয়াজ) সরিয়ে দিলে পোস্ট খালি হবে। তারা সে পোস্ট পাবে।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শেখ হাসিনা হলের অফিসে যাওয়ার সময় টিপুর গ্রুপের কর্মীরা আমার কাছে চাঁদা দাবি করতো। আমি তাদের বলতাম বাবারা আমার কষ্টার্জিত সংসার। তোমার খোঁজ নিয়ে দেখ আমার একটা সঞ্চয় হিসাব ছাড়া আর কিছু নেই। কোন এফ ডি আর ব্যাংক ব্যালেন্সও নেই।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দিয়াজের বড় বোন এডভোকেট জুবাইদা সরওয়ার নিপা। এসময় তার পাশে উপস্থিত ছিলেন তার মেঝ বোন সাঈদা সরওয়ার নিশা, ছোট ভাই মিরাজ ইরফান চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতনী। যাদের নামে আজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে তারা আমাদের কাছে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। আমার মা চাঁদা দিতে না পারায় গত ৩০ অক্টোবর রাতে আমাদের বাসায় হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। লুটপাটের মামলা করতে গেলে থানায় আমাদের হেনস্থা করা হয়। হাটহাজারী থানা পুলিশ হামলার সাথে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগও করে তিনি। পরে গত ৪ নভেম্বর পুলিশ চুরির মামলা নেয়।
তিনি আরো বলেন, মামলা তুলে না নিলে তারা আমার ভাইকে হত্যার পর লাশ ঘুম করে ফেলারও হুমকি দেয়। আমার ভাইকে যেদিন হত্যা করা হয় সেদিন আমার মা শহরে জেলা পরিষদে রত্নাগর্ভা সম্মাননা নিতে এসেছিল। বাসায় শুধু দিয়াজ ছিল। রাত ৯ টার দিকে কেয়ার টেকার ফোন করে ভাইয়ের লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে বলে জানায়। হত্যা রহস্য আড়াল করতেই তার লাশ সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে হত্যাকারীরা। এটি যে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড তা ভিডিও ফুটেজ দেখলেই বুঝা যায়।
আত্মহত্যা নয় উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এটি আত্মহত্যা নয়, খুন। তাকে জখম করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। সে ব্যাক্তিগত জীবনে বিপর্যস্ত ছিল না। ঘটনার আগের দিনও সুবর্ণ জয়ন্তীতে সে বন্ধুদের সাথে হাসি খুশি ছিল। কোন বিষণ্ণতার ছাপ ছিল না। ষড়যন্ত্রকারীরা হত্যা করেই হত্যার দিন হতে এটিকে আত্মহত্যা বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালায়।
হত্যাকারীরা প্রভাভশালী। তারা নানা ভাবে প্রভাবিত করতে চাইছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের আগেই সভাপতি আলমগীর টিপু একটি সংবাদ মাধ্যমকে বিবৃতি দেয় দিয়াজ আত্মহত্যা করেছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।