
চট্টগ্রামে পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ অঞ্চলে বর্তমানে ৯৩ শতাংশ করোনা রোগীই উচ্চ সংক্রমণশীল ডেলটা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছে। নগরী এবং গ্রামেও ডেল্টার সংক্রমণ সমানভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমিত রোগীর মধ্যে আছেন তরুণ, যুবক, মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধ।
করোনা রোগীর জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনের পর আজ ৬ আগষ্ট শুক্রবার গণমাধ্যমে এ তথ্য জানান গবেষণা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)।
সম্প্রতি সিভাসু ও ঢাকা বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ যৌথভাবে এ গবেষণাটি সম্পন্ন করেছে। গবেষণায় দেখা যায়, ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট (বি.১. ৬১৭.২) শহর ও গ্রামে সমান ভাবে ছড়িয়েছে। ৩০ জনের মধ্যে ২৮ জনই করোনার ডেলটা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন। অবশিষ্ট দুজন রোগীর একজন যুক্তরাজ্য ভ্যারিয়েন্ট এবং অপরজন চীনের উহানের একটি ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে ১৫ জন ও উপজেলা থেকে ১৫ জন করোনা রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে এমন তথ্য দেন তারা। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নোভেল করোনা ভাইরাসের তুলনায় খুবই ছোঁয়াচে, খুব দ্রুত ছড়াতে পারে একজন থেকে অন্যজনে।
চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৯৩ শতাংশের নমুনায় মিলেছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।
আক্রান্ত ৩০ জনের মধ্যে নগরীর ১৪ জন ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট ও নগরীর বাইরে ১৪ জন ডেলটা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। এরা হাটহাজারী, মীরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, সাতকানিয়া, আনোয়ারা ও সন্দীপ উপজেলার। এর মধ্যে হাটহাজারির আছেন ছয়জন, রাঙ্গুনিয়ার চারজন, মীরসরাই, সাতকানিয়া, আনোয়ারা ও সন্দীপের একজন করে।
সিভাসু উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের তত্ত্বাবধানে ‘কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মূল্যায়ন’ শীর্ষক এই গবেষণায় পোলট্রি রিসার্চ ও ট্রেনিং সেন্টার (পিআরটিসি) সহযোগিতা করে।
গবেষণায় সিভাসুর উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে ৭ জন শিক্ষক অংশ নেন। এরা হলেন প্রফেসর ড. পরিতোষ কুমার বিশ্বাস, প্রফেসর ড. শারমিন চৌধুরী, ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ডা. ত্রিদীপ দাশ, ডা. প্রনেশ দত্ত, ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম, ডা. মো. তানভীর আহমদ নিজামী।
এ ছাড়া বিসিএসআইআরের গবেষক ড. মো. সেলিম খান এবং মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোরশেদ হাসান সরকার গবেষণায় অংশ নেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও এ গবেষণায় অংশ নিয়েছেন।
সিভাসু উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অত্যন্ত সংক্রামক। এটি এখন দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রভাবশালী স্ট্রেইন। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যখন কাউকে আক্রান্ত করে তখন তার শরীরে সেই ভাইরাসটি সংখ্যায় অনেক বেশি থাকে। অর্থাৎ, ভাইরাসটি খুব দ্রুত তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে অধিক সংখ্যক ভাইরাস বেরিয়ে আসে, যা সহজেই অন্যকে আক্রান্ত করতে পারে।
প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ জানান, ১ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৫ জন রোগী ও আক্রান্ত ১৫ জন যারা হাসপাতালে আসেননি এমন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেছি। এদের মধ্যে ১৮ জন পুরুষ, ১২ জন নারী আছেন। ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণ প্রথমে সীমান্তবর্তী জেলায় ও পরে ঢাকায় শুরু হয়েছিল। চট্টগ্রামে দু-একজন রোগী পাওয়া গেলেও বর্তমান ঢেউয়ের জন্য কোন ভ্যারিয়েন্ট দায়ী তা জানা যাচ্ছিলনা। আমরা মূলত গবেষণা করে সেটিই বের করেছি। এটি চিকিৎসক ও করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস।