
চট্টগ্রাম মহানগরীতে টিকা কেন্দ্রগুলোতে প্রচন্ড ভীড়ের কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে করোনাভাইরাসের গণটিকা টিকা নিতে গিয়ে উল্টো করোনায় সংক্রামক হয়ে পড়ছে অনেকে।
উপচে পড়া ভিড় আর কেন্দ্রের অব্যবস্থাপনার কারণে একদিকে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্য বিধি, অপরদিকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও অনেকে টিকা নিতে পারছেন না।

এক সময় করোনা টিকা গ্রহণে মানুষের মধ্যে অনীহা থাকলেও বর্তমানে টিকা গ্রহণে মানুষের মধ্যে প্রবণতা বাড়লেও বাড়েনি তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা। আবার মোবাইল ফোনে কোন মেসেজ না পেয়েও কেন্দ্রেগুলোতে অবাঞ্ছিত ভিড় অনেকটা নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে টিকা কেন্দ্রগুলোতে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায় চট্টগ্রামে প্রতিদিন নগরীতে গড়ে ১০ জন করে করোনা আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করছে। আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিন ৮ থেকে ৯শ জন।

আজ বুধবার (১১ আগষ্ট) সকাল থেকে নগরী কয়েকটি টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গছে। সকালে চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতাল টিকা দান কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, টিকা দিতে হাসপাতালের সামনে শত শত মানুষ সমবেত হয়েছেন। হাসপাতালের ভিতরে এক সঙ্গে এতো মানুষের প্রবেশ করানোর সুযোগ না থাকায় ধাপে ধাপে মানুষকে ভেতরে ঢুকানো হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবার ভেতরের ঢুকানোর জন্য গেইট খুলতেই ভেতরে ঢুকতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আবার কখনো রোদের তাপ সহ্য করে করোনার টিকা নিতে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইন এতে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় না রেখে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।এমনকি লাইনের কেউ কেউ চাইছেন সামনের জনকে ঠেলে টিকা কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে। এতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা যায়।
সকাল ৮টায় টিকা নিতে আসা ৫৭ বছর বয়সী রহিম সোবাহান জানান, সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন কেন্দ্রের বাইরে ১১টা পর্যন্ত ভেতরে ঢুকার সুযোগ পাননি তিনি।
এই চিত্র দেখা গেছে বন্দর, ইপিজেড ওপতেঙ্গা-হালিশহর এলাকার টিকা কেন্দ্রগুলোতে। তার মধ্যে বন্দরের ধোপপুলস্থ ৩৮নং ওয়ার্ড অফিসের টিকা কেন্দ্রেটি উল্লেখ যোগ্য। এখানে অনেকেই টিকা নিবন্ধন করেই টিকার কোন মেসেজই না পেয়েও নিবন্ধন কার্ড নিয়ে লাইনে দাড়িঁয়েছে এমনও অনেকে ছিলেন ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িঁয়ে, কারণ টিকা নেয়ার জন্য ।

পতেঙ্গার কাটগড়-স্টিল মিল এলাকার টিকা দিতে আসা একাধিক নারী-পুরুষের লাইন এড়িয়ে তীব্র জটলার দৃশ্য।তেমনি ইপিজেডের হক সাহেব রোডস্থ মোহাম্মদীয়া স্কুল এবং নিউ মুরিংস্থ আহম্মদীয় সরকারী প্রাঃ বিদ্যালয় টিকা কেন্দ্রে এবং নিয়মিত টিকা কেন্দ্রে বন্দরটিলা মাতৃসদনের নিচে-উপরে ও মূল কেন্দ্রে ভিড়ে স্বাস্থ্য বিধি মানা জয়নি।
এখানে লাইনে অপেক্ষমান হাজেরা বেগম নামে একনারী বলেন, ‘কেন্দ্রের বাইরে যে ভিড় তাতে করোনা মুক্তির জন্য টিকা নিতে আসলাম নাকি করোনা সঙ্গে করে নিতে আসলাম ঠিক বুঝতে পারছি না।
এব্যাপারে বন্দর ইপিআই জোনের জোনাল মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ হাসান মুরাদ চৌধুরী বলেন, আমরা বারবার সরকার ঘোষিত টিকার এসএমএস ছাড়া কাউকে কেন্দ্রে না আসতে অনুরোধ জানাচ্ছি। সকল কেন্দ্রের সামনে ব্যানার-সাইনবোর্ড লাগিয়ে টিকা কেন্দ্রে ভিড় এড়াতে নিরুৎসাহী করছি। তার পরও জনসাধারণ টিকার এসএমএস না পেয়ে অনলাইনে নিবন্ধন করেই টিকা নিতে চলে আসছে। যার ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমক ও করোনা উপসর্গ দ্বিগুন বেড়ে যেতে পারে বলে ধারনা করছেন।আর এই অবস্থার রোধ করা না গেলে চট্টগ্রামে ভয়াবহ রূপ নিবে করোনা। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থাও এব্যাপারে বারবার ঘোষনা দিচ্ছে ভিড়-জনসমাগম রোধ করা না গেলে করোনাভাইরাস অতিমাত্রাই সংক্রমিত হবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, একসঙ্গে অনেক মানুষ সমবেত হয়ে যাওয়ার এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সারাদিন টিকা দেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এক সঙ্গে অনেকে ভিড় করছে। এর পরও সুশৃঙ্খলভাবে সবাইকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন আরও জানান, চট্টগ্রাম মহনগরী ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মোট ৩২৬টি কেন্দ্রে করোনার গণটিকা কার্যক্রম চলছে। গতকাল শনিবার প্রথম দিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে।তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪১ ওয়ার্ডের ১২৩টি বুথে টিকাদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩টি করে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আখতার চৌধুরী জানান, সিটি করপোরেশন এলাকার প্রতি কেন্দ্রে ৩০০ জন করে টিকা নিতে পারছেন। তিনটি বুথে একদিনে ৯০০ জন টিকা পাবেন। এর বাইরে স্থায়ী ১১টি কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম চলমান আছে। কোন কেন্দ্রে অনিয়ম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।