
জে জাহেদ:
তেল চোরাকারবারী ও জলদস্যু হিসেবে পরিচিত বহুল আলোচিত চটগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার তেল শুক্কুর ও তার তিন ছেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর কর্ণফুলী উপজেলার মরিয়ম আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুল শিক্ষিকা সুমী আক্তারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন এমপি চট্টগ্রাম ডিআইজিকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

২৬ সেপ্টেম্বর (রবিবার) চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি অফিস ডিআইজির পক্ষে অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম) মোঃ জাকির হোসেন খান স্বাক্ষরিত (স্মারক নং-অপরাধ-১/০৬-২০২১/১২৭৭০) বর্ণিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে সিএমপি পুলিশ কমিশনার বরাবরে চিঠি প্রেরণ করেন।
এতে উল্লেখ করেন সুমী আক্তার কর্তৃক দাখিলকৃত আবেদনের বিষয়টি সিএমপির আওতাধীন হওয়ায় অবগতি ও পরবর্তী কার্যার্থে প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম)।
স্কুল শিক্ষিকার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী জুলধা এলাকার ত্রাস নামে খ্যাত জলদস্যু ডাকাত আব্দুল শুক্কুর প্রকাশ তেল চোর শুক্কুর ও তার তিন ছেলে মনির প্রকাশ ইয়াবা মনির, কিশোর গ্যাং লিডার দেলোয়ার হোসেন নির্যাতনকারী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মূলহোতা হয়।
লিখিত অভিযোগে শিক্ষিকা আরও উল্লেখ করেন, আব্দুল শুক্কুর সমাজে তথা চট্টগ্রাম শহরসহ পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলায় একজন চিহ্নিত তেল চোরাকারবারী, ভূমিদস্যু, জলদস্যু ও ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ ১০-১৫ বছর যাবত চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর বহির্নোঙরে আসা-যাওয়া তেলবাহী জাহাজ হতে অবৈধ ভাবে চোরাকারবারীর সাথে জড়িত।
রাষ্ট্রীয়ত্ব পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানী থেকে বিভিন্ন জাহাজে তেল সরবরাহ করার সময় পাইপ ঢুকিয়ে তার নৌকায় কয়েক হাজার লিটার তেল চুরি করে কম দামে অন্যত্রে বিক্রয় করে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানায়, তেল লুটের পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর যাবত এই তেল চোর শুক্কুর ও তার বড় ছেলে মনির ইয়াবা, ক্যাসিনো ও অনলাইন ভিত্তিক জুয়ার আসর বসিয়ে কর্ণফুলী এলাকায় বিভিন্ন কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে। যাদেরকে নিয়ে কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ইউনিয়নের পাইপের গোড়া, ডাঙ্গারচর গ্রামে বিভিন্ন ধরনের অবৈধ দখলদার, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী করে সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত রয়েছে। তাদের এই ত্রাসের রাজত্বের খবর বিভিন্ন মিডিয়াসহ পত্র-পত্রিকায় ইতোমধ্যে উঠে এসেছে।
এমনকি প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ না করায় তারা দিন দিন আরো বেশী বেপরোয়া হয়ে এলাকায় অনৈতিক কর্মকান্ড করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে হয়রানি করছে। প্রশাসনের কিছু দুস্কৃতিকারী ও কিছু রাজনৈতিক নেতাকে মাসোহারা দিয়ে আরো বেশী উগ্র হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় তেল চোর শুক্কুর ও মনিরের এই অবৈধ কর্মকান্ড বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও মিডিয়ায় প্রচারের পিছনে আমি ও আমার পরিবার জড়িত সন্দেহে বিগত ০৯ সেপ্টেম্বর আকস্মিকভাবে ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাড়ীতে অনুপ্রবেশ করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমাকে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে মারধর করে।
এছাড়াও শিক্ষিকা অভিযোগ করেন, তাঁর বৃদ্ধ পিতার বাম হাতে ৩টি কোপ দেয়। মাকে চুলের মুঠি ধরে লাঠি ও কিল ঘুষি মেরে জখম করে। ফলে তাদের ভয়ে পরিবারটি বর্তমানে গৃহহারা অবস্থায় অন্যত্র অবস্থান নিয়েছে। এলাকায় যেতে সাহস পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন অবগত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তারা আরো দাপটের সাথে অবৈধ কাজ করে চলেছে।
তাদের এই কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করার পরও প্রশাসন এখনও পর্যন্ত এই তেলচোর শুক্কুর ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্দুল শুক্কুর পাঠক ডট নিউজকে বলেন, ‘ওদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট। আমরা কেন তাদের হুমকি দেবো। মামলার তদন্ত অফিসার এসে দেখে গেছে। ওরা দুই ঘন্টা করে দোকান করতেছে। বরং মামলায় জামিন হয়নি বলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি বল্লেতো আর সব সত্য হয়ে যাবে না। আপনারা এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান থেকে জানতে পারেন। দু’পক্ষ থেকে যেহেতু মামলা হলো। যা হবার আইন আদালতে হবে।’
শুক্কুরের বড় ছেলে মনির বলেন, ‘আমরা কেন তাদের হুমকি দেব। সুমী আমার চাচাতো বোন। প্রতিদিন স্কুলে যাচ্ছে। আমরা দেখতেছি। বরং এরা মামলায় জামিন হয়নি তাই বাসায় আসে না। তাদের সাথে আমাদের পারিবারিক ঝামেলা ও মামলা হলো; তা আইনানুগ ভাবে সমাধান হবে। ওরা মামলার কারণে বাসায় আসে না।’
অভিযোগকারী সুমী আক্তার বলেন, ‘আমরা গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ঘরছাড়া। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। স্কুলে যেতে পারি না অনেকদিন। আমাকে মনির কয়েকবার হুমকিও দিয়েছে। ওদের বিরুদ্ধে যদি কিছু করি আমাদের শেষ করে দিবে। আমাদের পুরো পরিবারের উপর এরা অত্যাচার করছে। আমরা নিরাপত্তা পাচ্ছি না কোথাও। বিচারও পাচ্ছি না। তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছি।’