
কক্সবাজারে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর প্রতিবাদে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সন্ধ্যার পর থেকে সড়ক অবরোধ করেন মুজিবুরের সমর্থকরা। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় আটকা পড়েছেন হাজার হাজার পর্যটক।কক্সবাজার শহরের সকল দোকানপাট, বাস কাউন্টার বন্ধ করে দেয় মেয়র মুজিবুরের অনুসারীরা। পাশাপাশি সড়কের মাঝখানে পৌরসভার ময়লার গাড়ি রেখে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে তারা। এ নিয়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে শহরবাসী ও পর্যটকদের মাঝে।
রবিবার (৩১ অক্টোবর) বিকালে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি রুজু করা হয়। এর প্রতিবাদে রাতে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কে মেয়র মুজিবুর রহমানের সমর্থকরা আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ এবং বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস মামলা রুজুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মুনাফ সিকদারকে গুলি করার ঘটনায় কক্সবাজার পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরীসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ মুনাফ সিকদারের বড় ভাই মো. শাহজাহান বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (২৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা এলাকায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মুনাফ সিকদারসহ দুইজনকে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মুনাফ সিকদারের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহত মুনাফ সিকদার (৩২) শহরের পেশকারপাড়া এলাকার শাহাব উদ্দিন সিকদারের ছেলে। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং শহর যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী। আহত অপরজন হলেন কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীর ছনখোলা এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. তারেক (২২)।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোনাফ সিকদার এক ভিডিওবার্তায় বলেন, “আমাকে মুজিবুর রহমান মেয়রের নির্দেশে গুলি করা হয়েছে। ওরা গুলি করার সময় বলছিল ‘তুই মুজিব চেয়ারম্যানের সাথে লাগছস? মুজিব চেয়ারম্যানের সাথে আর লাগবি?’ এই বলে পিছন থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়।”
ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে এ বিষয়ে জানার জন্য মেয়র মুজিবুর রহমানকে কয়েকদফা ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। কক্সবাজার পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যার চেষ্টা ধারায় মেয়র মুজিবকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে মেয়র মুজিবুরের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পরপরই পুরো শহরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মেয়রের অনুসারীরা একদিকে বিক্ষোভ মিছিল করছে, অন্যদিকে দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছে। এছাড়া প্রধান সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনও করছে তারা। তবে ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়নি। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীরুল গিয়াস বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে পুলিশ। কারও ইন্ধনে এ ঘটনা হলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।