
আইনি জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে সাড়ে ৪ বছর পর চট্টগ্রামের আনোয়ারা পারকি সৈকতে আটকে পড়া ‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ জাহাজটি কাটার কাজ শুরু করেছিল মালিক পক্ষ। কিন্তু একদিনের মাথায় ফের জাহাজ কাটা স্থগিত করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
জানাগেছে, জাহাজটি কাটার বিষয়ে শর্ত মানতে পরিবেশ অধিদপ্তর বিস্ফোরক অধিদপ্তর, পুলিশ ফায়ার সার্ভিসহ অন্যান্য সংস্থাদের সমন্বয়ে গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত ঠিমকে না জানিয়ে মালিকপক্ষ জাহাজটি কাটা শুরু করলে একদিনের মাথায় গতকাল রবিবার তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে পাঠক ডট নিউজকে নিশ্চিত করেছেন আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ।
তিনি আজ সোমবার জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তর পারকি সমুদ্র সৈকতে আটকে পড়া এমভি ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজটি নানা শর্তে কাটার অনুমতি প্রদান করেন। এই সংক্রান্ত ৭ সদস্যের গঠিত মনিটরিং কমিটিতে আমাকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মালিক পক্ষ কমিটিকে না জানিয়ে জাহাজটি কাটা শুরু করেছিল। পরে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কমিটি সভা আহবান করা হয়েছে। সভায় জাহাজ কাটার সময় পরিবেশগত ক্ষতি ও পারপার্শিক অবস্থা এবং জুড়ে দেয়া শর্ত মানা হচ্ছে কিনা তা তদারকির করে জাহাজ কাটতে অনুমতি প্রদান করা হবে।
জানাগেছে, ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে নোঙর ছিঁড়ে পারকি সমুদ্র সৈকতে এসে আটকে পড়ে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার বাংলাদেশী মালিকানাধীন ‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ নামের এই জাহাজটি। মালিক পক্ষ অনেক চেষ্টা করেও জাহাজটি সরিয়ে নিতে পারেনি। পরবর্তীকালে ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান জাহাজটি কিনে নেয়। দীর্ঘ আইনিপ্রক্রিয়া শেষে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে তারা জাহাজটি কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ জাহাজ কাটার অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ’ কে ২ কোটি টাকা জরিমানা করার পর এতোদিন জাহাজটি কাটা বন্দ ছিল।
চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ জাহাজটি পারকি সমুদ্রসৈকত চরে আটকা পড়ে। প্রবল বাতাসের তোড়ে দিক হারিয়ে ও ইঞ্জিন বিকল পড়লে জাহাজটি চরে আটকে যায়। দীর্ঘদিন সৈকতে থাকার কারণে পারকি সৈকতের আধা কিলোমিটার অংশে পলি জমে আর গাছ উপড়ে পড়ে। এ কারণে জাহাজটি সরানোর দাবী জানায় বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু মামলাজনিত কারণে এটি কাটতে নিয়ে বিপাকে পড়ে। অবশেষে হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে জাহাজটি কাটা শুরু করলে ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ জাহাজ কাটার অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ’কে ২ কোটি টাকা জরিমানা করার পর এতোদিন জাহাজটি কাটা বন্দ ছিল।

পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে শর্ত স্বাপেক্ষে জাহাজটি কাটার অনুমতি পায় ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ সংক্রান্ত একটি কমিটিও করে দেন পরিবেশ অধিদপ্তর। কমিটির সদস্যরা হলেন আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমদকে সভাপতি,কর্ণফুলী থানার অফিসার ইনচার্জ দুলাল মাহমুদ,প্রতিনিধি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম, প্রতিনিধি বিস্ফোরক অধিদপ্তর চট্টগ্রাম, প্রতিনিধি বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী,প্রতিনিধি সড়ক ও জনপদ বিভাগ ও উপ পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলাকে সদস্য সচিব করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।কিন্তু গত শনিবার মনিটরিং কমিটিকে না জানিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জাহাজ কাটা শুরু করলে রবিবার আবারো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমদের নির্দেশে জাহাজ কাটার কাজ বন্দ করে দেয়া হয়েছে।
ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজের পরিচালক মো. আমজাদ হোসেন জানান, দীর্ঘ আইনি জটিলতা শেষে আদালতের মাধ্যমেই আমরা জাহাজটি কাটার অনুমতি পেয়েছি। আদালত ও পরিবেশ অধিদপ্তরের শর্ত মেনেই জাহাজটি কাটার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
জাহাজটি মনিটরিং কমিটিকে অবহিত করে আজ সোমবার থেকে কাটার প্রস্ততি ছিল। কাটিং এর কাজে নিয়োজিত মাঝি গত শনিবার থেকে সামনের অংশ কাটা শুরু করে। যার কারনে মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে এখন জাহাজ কাটা বন্ধ রয়েছে।