
উনার বর্তমান মূল বেতন এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু এর চেয়ে আড়াইগুণ বেশি সাড়ে চার লাখ টাকা মূল বেতন দাবি করেছেন তিনি, দাবি অনুযায়ী ওনার বেতন বাড়ানো হলে মূল বেতন ও ভাতা মিলিয়ে মাসে প্রাপ্য দাঁড়াবে প্রায় ১০ লাখ টাকা।
সৌভাগ্যবান এই কর্মকর্তা হলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ।
আরও খবর: দুর্নীতির মামলায় জেলখাটা ফজলুল্লাহ ৪র্থ বার ওয়াসা’র এমডি হতে চান
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের ৬৫তম সভায় বেতন-ভাতা বাড়ানোর আবেদন করেন তিনি। তবে ওয়াসা বোর্ডের সভায় এ প্রস্তাব আটকে দিয়েছেন সদস্যরা। সভায় এমডির প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে দেখার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জানা যায়, এমডির মূল বেতন বাড়িয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা হলে অন্যান্য ভাতাসহ মাসে বেতন দাঁড়াবে ১০ লাখ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ২০০৯ সালে চুক্তিভিত্তিতে তিন বছরের জন্য ওয়াসার এমডি হন এরপর দীর্ঘ ১০ বছর ধরে উপর মহলকে ম্যানেজ করে পরপর ৪ বার এ পদ ধরে রাখেন।
আরও খবর: বেতন বাড়িয়ে সাড়ে ৪লাখ টাকা চান চট্টগ্রাম ওয়াসার অযোগ্য এমডি ফজলুল্লাহ
প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যক্তিগত লাভ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ। নন রেভিনিউ ওয়াটারের (এনআরডব্লিউ) নামে যেখানে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে; সেখানে এটি কমিয়ে আনার পরিবর্তে বারবার কীভাবে ওয়াসার এমডি পদে পুনরায় নিয়োগ পাওয়া যায়, কীভাবে নিজের আত্মীয়-স্বজনকে ওয়াসায় চাকরি দেওয়া যায়- তা নিয়ে ব্যস্ত এই কর্মকর্তা।
জানাগেছে, ২০১৫ সালে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ৯ মে এক দফায় বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়। ওই সময় অনুষ্ঠিত ওয়াসার বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি বর্তমানে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। যেখানে তার মূল বেতন ধরা হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রায় ১০ বছর ধরে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদে দায়িত্ব পালন করছেন প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ। বর্তমানে তিনি ৪র্থ বারের মতো ওয়াসার এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানের তার বয়স ৮১ বছর।
আরও খবর: অদক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও অনিয়ম রোধ করা গেলে পানির মূল্য বৃদ্ধি প্রয়োজন পড়ে না
বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সদস্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট সমিতির সাবেক সভাপতি শওকত হোসেন বলেন, এমডি সাহেব বেতন বাড়িয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা করার আবেদন করেছেন। সেই আবেদন তিনি বোর্ড সভায় এজেন্ডা হিসেবে উপস্থাপন করেন। তবে এজেন্ডা পাস হয়নি। সদস্যদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এমডির আবেদন যাচাই বাছাইয়ের জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বোর্ড সভায় একেএম ফজলুল্লাহর বেতন-ভাতা বাড়ানোর আবেদন সাত নম্বর আলোচ্যসূচি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আবেদনে তিনি বেতন বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন- বর্তমানে ঢাকা ও খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক চট্টগ্রামের এমডির চেয়ে দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি বেতন পান। এ অবস্থায় তিনি মূল বেতন বাড়িয়ে সাড়ে চার লাখ টাকায় উন্নীত করার অনুরোধ করেন।
একই ধরনের একটি আবেদন ২০২১ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় তুলেছিলেন এমডি একেএম ফজলুল্লাহ। তখনও বোর্ড সদস্যদের আপত্তিতে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দুই সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। তবে গত আট মাসেও ওই কমিটি কোনো প্রতিবেদন দিতে পারেনি।
আবার একই ধরনের আবেদন আলোচ্যসূচি হিসেবে সভায় উত্থাপন করা হলে বোর্ডের সদস্যদের কয়েকজন জোরালো আপত্তি করেন। তারা আগের কমিটির প্রতিবেদন উত্থাপনের দাবি করেন। তখন ফজলুল্লাহ জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ওই কমিটি কাজ করতে পারেনি। তারা কোনো প্রতিবেদনও দেয়নি। তখন বোর্ড সদস্যরা আবারও একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন, যা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে পাস হয়।
চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সদস্য সাংবাদিক মহসিন কাজী বলেন, এমডি’র প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করতে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি আগামী বোর্ড সভায় তাদের পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করবেন। এরপর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য।
এমডির বিরুদ্ধে যত অভিযোগঃ
অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতির মামলায় জেলখাটা এই কর্মকর্তা বার বার নিয়োগ পেতে সরকারে উপরের মহলে কোটি টাকা উপটৌকন দিয়েছে।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ায় তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন এর আগে নির্বাহী প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় কর্তব্যে অবহেলার কারণে একবার বরখাস্তও হন।
ওয়াসা থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি একটি সমবায় ব্যাংক হলে জনগণের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন স্যোসাল সেভিং কো-অপারেটিভ ব্যাংক নামে একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান থাকাকালীন সাধারণ মানুষের আত্মসাতের অভিযোগে ওয়ান-ইলেভেনের সময় তিনি ৩ বার জেল খাটেন।
সে সময় গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিন দফায় তাকে জেলে যেতে হয় পরে বিভিন্ন জনের টাকা পরিশোধের মাধ্যমে জেল থেকে বের হন। জনগণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এখনও চট্টগ্রাম ও ঢাকার ছয়টি মামলা চালু হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে টাকা দিয়ে তিনি মামলাগুলো ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগের পর দুই জন কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে এগুলো ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এর ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানকে কয়েক হাজার কোটি টাকার কাজ যা দিয়েছেন অবৈধভাবে বর্তমান সচিব হেলাল উদ্দিনকে বিদেশে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ হাজার ডলার প্রদান করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার দুর্নীতির মাধ্যমে তার ভাগ্নি জামাই ওর ড্রাইভারকে চা করে দিয়েছেন ওয়াসার জাইকার অর্থায়নে জাপানি প্রতিষ্ঠানে থেকে একটি বিলাসবহুল গাড়ি কোন কোন নিয়ে নিয়ে তা বিক্রি করে কর্নার একাউন্ট স্থানান্তর করেন।