
মালয়েশিয়া প্রবাসী স্বামীকে বশে আনতে বৈদ্যের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক গৃহবধূ। কিন্তু নেশা জাতীয় পানি পড়া খাইয়ে অজ্ঞান করে ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেছে ভণ্ড বৈদ্য কথিত কবিরাজ মোহাম্মদ আলী (৬২)। জেলার হাটহাজারীর থানাধীন বাথুয়া গ্রামে।
গৃহবধূর এমন অভিযোগের পর র্যাব-৭ এর একটি টিম হাটহাজারীতে অভিযান চালিয়ে ভন্ড কবিরাজ মো. আলীকে গ্রেফতার করেছে।
প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে তিন মাস যোগাযোগ ছিল না এক সন্তানের জননী ওই গৃহবধূর। অনেক চেষ্টা করেও স্বামীর সাথে যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে প্রতিবেশীর পরামর্শে স্বামীর খোঁজ মেলাতে দ্বারস্থ হন মো আলী নামে ওই বৈদ্যের কাছে।

স্বামীর সন্ধান দিতে গৃহবধূকে প্রথমে তিন দফা পানি পড়া খাওয়ান বৈদ্য। বিনিময়ে প্রতিবার গুণতে হয় ৫ হাজার টাকা। কিন্তু পানি পড়ায় কাজ হয়নি, মিলেনি স্বামীর খোঁজ। আবারও বৈদ্যের কাছে যান তিনি।
এবার বৈদ্য বলে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করলেই কেবল নিখোঁজ স্বামীর খোঁজ পাওয়া যাবে। কিন্তু এতে রাজি না হলে বৈদ্য কৌশলে উক্ত নারীকে নেশা জাতীয় পানি খাইয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ত্র লুটে নেয়।
র্যাব জানায়, ইসলামি শরীয়া মোতাবেক বিবাহ করে ১৮ বছর সংসার জীবন অতিবাহিত করে আসছিল এক দম্পত্তি। তাদের সংসারে একটি মেয়েও আছে। কিন্তু স্বামী গত ৬ বছর ধরে মালেশিয়াতে থাকে। সন্তানের লেখাপড়া করানোর জন্য চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো মা ও মেয়ে। বাসা ভাড়া নেওয়ার ৩ মাস পরে ওই স্বামী তার স্ত্রীর (ভিকটিম) সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেনি। এছাড়া মেয়ের পড়াশুনা ও সংসারের কোনো খরচ দেয়নি। স্বামী কেন তার সঙ্গে এমন আচরণ করছে তাতে স্ত্রী অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ে। সে তার প্রতিবেশীদের সহিত বিষয়টি আলোচনা করলে তার প্রতিবেশী বৈদ্য, কবিরাজের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
পরে তারা কবিরাজের সঙ্গে তিন দফায় দেখা করে পানিপড়া ও তাবিজ নেয়। তখন কবিরাজকে ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে ভিকটিম। কিন্তু কবিরাজের পানিপড়া ও তাবিজে কোনো কাজ না হয়ার কারণে কবিরাজের বাসায় যায় স্ত্রী। এসময় কবিরাজ ভিকটিমের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করলে ওই নারীর সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে। নারী কুপ্রস্তাবে রাজি না হয়ায় কবিরাজ তার বাসার অন্য রুম থেকে একটি কাচের গ্লাসে করে পানি পড়া দেয় এবং তা খেলে তার সকল সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে জানায়। সেই পানি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে কবিরাজ ওই গৃহবধূকে (ভিকটিম) ধর্ষণ করে। একদিন পরে তার জ্ঞান ফিরলে সে কবিরাজের খাটে শুয়ে আছে এবং তার শরীরের কাপড় এলোমেলো দেখে অবাক হয়ে যায়। পরে ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা শেষে সে জানতে পারে তাকে (ভিকটিম) ওই কবিরাজ ধর্ষণ করেছে। পরে এ বিষয়ে র্যাবের কাছে অভিযোগ জানালে অভিযুক্ত ওই কবিরাজকে আটক করা হয়।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার বলেন, গত ২২ জানুয়ারি শেষবারের মত পানি পড়া খেতে এবার নিজের আখড়া হাটহাজারীতে যেতে বলেন পানি বাবা মোহাম্মদ আলী। সেখানে কৌশলে রুপাকে পানির ভেতর ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খেতে দেয় বৈদ্য মোহাম্মদ আলী। সেই পানি পড়া খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ওই নারী। পরবর্তীতে জ্ঞান ফিরে এলে একটি খাটের উপর নিজেকে অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পান তিনি। বুঝতে পারেন তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
এ ঘটনার দুই দিন পর সোমবার (২৪ জানুয়ারি) র্যাবের কাছে অভিযোগ দেয় ধর্ষিতা নারী। র্যাব অভিযান চালিয়ে এই বৈদ্যকে আটক করে।
র্যাবের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, আটক মোহাম্মদ আলী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে সে একজন ভুয়া কবিরাজ। প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে বিভিন্নভাবে তাবিজ, পানি পড়া দেয় সে। এরপর বিভিন্ন কৌশলের অসহায় নারীদের নিয়ে এসে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক করে। তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।
আটক আলীর বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে তাকে হাটহাজারী থানায় হস্তান্তর করা হয় বলেও জানায় র্যাব।