
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আদালত অবমাননা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা।
আজ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম কোর্ট হিলের আইনজীবী অডিটোরিয়ামে আয়োজিত জরুরী সংবাদ সম্মেলনে সমিতির পক্ষ থেকে এই অভিযোগ আনা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন।
জেলা প্রশাসন কর্তৃক আইনজীবী সমিতির ভবন,আদালত ভবন সংক্রান্তে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ, ঐতিহ্যবাহী পুরাতন আদালত ভবনের সম্মুখে পার্কিং নির্মাণ করে চলাচলের পথ সংকীর্ণ করা সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এই সমিতির আত্মার বন্ধন আছে। ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি স্বৈরশাসকের পুলিশ বাহিনীর গুলির মুখে বিজ্ঞ আইনজীবীরা নিজেদের মানবঢাল বানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জীবন রক্ষায় এগিয়ে এসেছিল”
তিনি আরো বলেন, ” সমিতির ভবনসমূহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সমিতির নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়। ভবনসমূহ নির্মাণে বিভিন্ন দফায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আইন মন্ত্রনালয় থেকে অনুদান দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, ” সমিতির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিজ্ঞ সদস্যদের চেম্বারের চাহিদার প্রেক্ষিতে সমিতির লিজ ও ডিক্রিমূলে প্রাপ্ত জায়গায় ভবন নির্মাণ কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে বর্তমান জেলা প্রশাসন কর্তৃক বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত দপ্তরে পত্র প্রেরণ করে ভবন নির্মাণ কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পায়তারা করছেন। এছাড়াও পানি সংযোগ, গ্যাস সংযোগ, বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন বিভিন্ন দপ্তরে পত্র প্রেরণ করেন।”
আইনজীবি সমিতির নেতারা বলেন, ” বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান থাকা অবস্থায়, জেলা প্রশাসক বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব চরিতার্থ করার মানসে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মাধ্যমে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা বিভাগ,সুরক্ষা বিভাগে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পত্র প্রেরণ করেন।
আইনজীবী সমিতির ৫টি ভবন নির্মাণে সিডিএ কর্তৃক অনুমোদনের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয় কর্তৃক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত তদন্ত কমিটি বিগত ১৭ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বিভিন্ন অংশীজনের সাথে আলাপ করেন। উক্ত সভায় আদালত ভবন এলাকার অন্যতম অংশীজন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিকে কোনভাবেই অবগত করা হয়নি এবং উক্ত সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব ডিসির পক্ষ হয়ে আইনজীবী সমিতির বিপক্ষে বক্তব্য প্রদান করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
আদালত ভবন এলাকায় আনসার ব্যাটেলিয়নের সদস্য এনে নিরাপত্তার নামে বরিশালের মতো ঘটনা সৃষ্টির পাঁয়তার করছেন জানিয়ে জিয়াউদ্দিন বলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি সমিতির কোনো বক্তব্য না শুনে, সমিতির জায়গার দলিলাদি ও ভবনের অনুমোদনপত্র যাচাই বাছাই না করে মিথ্যা পরিদর্শনের নাটক সাজিয়ে মনগড়া একটি তদন্ত প্রতিবেদন হাসিল করতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক অপতৎপরতা চালাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মুজিবুল হক বলেন, তদন্ত কমিটি আদালত ভবন পরিদর্শনের মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন এবং সমিতির জায়গা, স্থাপনা ইত্যাদি সংক্রান্তে জেলা প্রশাসন থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদ, সচিবালয় সহ সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে সত্য গোপন করে গোপন প্রতিবেদনের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে”
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাম্মদ হাশেম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আমি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাথে যুক্ত আছি। জেলা প্রশাসন অফিস এবং আমরা আইনজীবিরা পাশাপাশি থেকে অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণভাবে এই দীর্ঘ সময় আমরা নিজ নিজ পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছি। কোন সময় কোন জেলা প্রশাসকের সাথে কোন বৈরী সম্পর্ক হয়নি। একে অপরকে সহযোগিতা করে কাজ করেছি। কিন্তু এই জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান আইনজীবীদের তো অসহযোগিতা করছেন এবং বিজ্ঞ বিচারক এবং বিচারপ্রার্থী জনসাধারণের চলাচলের পথকে সংকীর্ণ করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক আদালত অবমাননা করেছেন বলে অভিযোগ এনে বলা হয়, “জেলা প্রশাসক উদ্দেশ্যমূলকভাবে সুপরিচিত কোর্টহিল নামটি ব্যবহার না করে ‘পরীর পাহাড়’ ব্যবহারের কারণে সম্প্রতি সমিতির পক্ষ থেকে বিজ্ঞ আদালতে মামলা আনায়ন করে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার ডিক্রি প্রাপ্ত হয়। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এরপরও জেলা প্রশাসক সরকারি বেসরকারি দপ্তরে চিঠি বা নোটিশ চালাচালিকালে বিভিন্ন ফ্যাস্টুন পোস্টারে কোর্টহিল বা আদালত ভবনকে ‘পরীর পাহাড়’ হিসেবে চিহ্নিত করে বা নামকরণ করে প্রচার করে আসছে- যা আদালত অবমাননার শামিল।
সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হয়, ডিসি আদালত ভবন এলাকায় আনসার ব্যাটলিয়নের সদস্য এনে নিরাপত্তার নামে বরিশালের মতো ঘটনা সৃষ্টির পায়তারা করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের সাথে বিচার বিভাগের অতীতের মতো সুসম্পর্ক অটুট রাখতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্র, দখলদারিত্বের অভিযোগ এনে তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাম্মদ হাশেম এর সভাপতিত্বে ও সহ সাধারণ সম্পাদক এরশাদুর রহমান রিটুর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, সমিতির সাবেক সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, এ কে এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এ এস এম বদরুল আনোয়ার,সৈয়দ মোক্তার আহমদ। সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন আক্তার, মনতোষ বড়ুয়া, আইয়ুব খান। কার্যনির্বাহী পরিষদের সিনিয়র সভাপতি মোহাম্মদ শফিক উল্লাহ, সহ সভাপতি মোহাম্মদ আজিজ উদ্দীন হায়দার সহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী।