নয়াপল্টনে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের পরদিন ৮ ডিসেম্বর পল্টন মডেল থানায় দায়ের হওয়া মামলায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) আদালতে হাজির করা হবে।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা নয়াপল্টনের ঘটনার পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও উস্কানিদাতা।
এর আগে শুক্রবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘তাদের (ফখরুল ও আব্বাস) গ্রেপ্তার করা হয়নি। কিছু বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা এখনও ডিবি কার্যালয়ে রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর এ বিষয়ে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানানো হবে।’
আর কোনো কেন্দ্রীয় নেতা নজরদারিতে আছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা সবকিছুই খেয়াল রাখছি। কেউ যদি এরকম অপরাধ করেন, তবে তারাও আমাদের নজরদারিতে থাকবেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ভোররাত ৩টার দিকে পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ফখরুলের উত্তরার বাসায় গিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়।
তিনি জানান, একই সময়ে ডিবি পুলিশের আরেকটি দল আব্বাসের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ঢাকার শাহজাহানপুরের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন দলের দুই শীর্ষ নেতাকে আটকের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, শনিবারের সমাবেশের বিষয়ে তাদের দলের সিদ্ধান্ত সকাল সাড়ে ১১টায় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের পর ঘোষণা করা হবে।
শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম বলেন, ভোররাত ৩টার দিকে ডিবি পুলিশের চার সদস্য তাদের বাড়ির ওপরের তলায় আসেন এবং বাকিরা নিচে অবস্থান করছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের শেষ রাতে এখানে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করেছি। তারা বলেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা তাকে (ফখরুল) নিয়ে যেতে এখানে এসেছেন।’
রাহাত আরা বলেন, তাদের কাছে তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে কি না জানতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, গতকাল দায়ের করা নতুন দুই বা তিনটি মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে।
মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘আমি ঘুমিয়ে ছিলাম যখন আব্বাস আমাকে ডেকে জাগান এবং বলেন যে তারা (ডিবি সদস্যরা) আমাকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যাবে। আমি প্রথমে (একথা) বিশ্বাস করতে পারিনি।’
তিনি বলেন, তারা (ডিবি সদস্যরা) বলেছে যে তার (আব্বাসের) সঙ্গে আলোচনার পর তাকে ফিরিয়ে দেবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ছয় ঘণ্টা বৈঠক করে। যেখানে শনিবার (১০ ডিসেম্বর) কমলাপুর স্টেডিয়াম বা মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠে সমাবেশ করার বিষয়ে কথা হয়।
পরে বিএনপির কয়েকজন নেতাকে নিয়ে আব্বাস দুটি অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শন করেন।
ওই বৈঠকে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয় খুলে দেয়ার আশ্বাস দেন পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
বুধবার, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের আগে দলের নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা নিহত ও প্রায় ৫০ জন আহত হন।
বুধবারের সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি আদালত বিএনপির ৪৪৫ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর শাখার আহ্বায়ক আবদুস সালাম ও প্রকাশনা সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ শীর্ষ নেতাদের পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।