
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত ৭ খুন মামলার রায়ে কাউন্সিলর নুর হোসেন এবং সাবেক র্যাব অধিনায়ক তারেক সাঈদসহ ২৬ জনকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে।
৩৫ জন আসামীর বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় নারায়নগঞ্জের একটি আদালত। হত্যাকাণ্ডের প্রায় তিন বছর পর রায় হলো চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এই মামলার।
২০১৪ সালের এপ্রিলের ঐ ঘটনায় সিটি কর্পোরেশনের একজন কাউন্সিলর এবং একজন আইনজীবীসহ সাতজনকে হত্যা করা হয়।
মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে ছিল র্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ের ২৫ জন সদস্য এবং একজন সাবেক কাউন্সিলর।
২০১৪ সালের এপ্রিলের ২৭ তারিখ আদালত থেকে ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫ জন এবং তার আইনজীবী চন্দন সরকার ও মি. সরকারের ড্রাইভারকে অপহরণ করা হয়। এর তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
ঐ ঘটনা সেসময় সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত হয় এবং এই অপহরণ এবং হত্যার সাথে বিশেষ বাহিনী র্যাবের সেখানকার কর্মকর্তা ও সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ প্রকাশ পায়।
এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌশুলী ওয়াজেদ আলী জানিয়েছেন, ঐ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এর একটি করেন নিহত ইসলামের স্ত্রী এবং অপরটি আইনজীবী সরকারের জামাতা।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে দুই মামলার কার্যক্রম একই সাথে চলে এবং আজ একইসাথে দুটি মামলার রায় দেয়া হল।
এই মামলার অভিযোগ গঠন করা হয় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর আট মাসে ৩৮ কার্যদিবসে এই মামলাটির কার্যক্রম শেষ হয়েছে।
এই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছেন দুজন, তাদের মধ্যে একজন তৎকালীন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক এবং পরবর্তীতে বরখাস্তকৃত ল্যাফটেনেন্ট কর্নেল তারেক সাঈদ এবং অপরজন কাউন্সিলর নুর হোসেন।
সেনা কর্মকর্তা তারেক সাঈদ সরকারের একজন মন্ত্রীর জামাতা হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও বেশ আলোচনা হয়। পরবর্তীতে সেনানিবাস থেকে সাঈদসহ আরো একজন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে ভারতে পালিয়ে যান অপর আলোচিত অভিযুক্ত নুর হোসেন। ঐ বছরই জুনে কলকাতা থেকে নুর হোসনকে গ্রেপ্তার করে সেখানকার পুলিশ। আর ২০১৫ সালের নভেম্বরে তাকে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অভিযুক্তদের মধ্যে ২৩ জন বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। যাদের মধ্যে ১৭ জন র্যাব সদস্য এবং বাকি ৬ জন নুর হোসেন এবং তার পাঁচজন সহযোগী বলে জানিয়েছেন আলী।
কারাগারে থাকা ২৩ জনের মধ্যে র্যাব কর্মকর্তারাসহ মোট ২১ জন ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল।
দণ্ডপ্রাপ্ত যারা:
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা হলো-সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক, বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, র্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার, বরখাস্ত মেজর আরিফ হোসেন, র্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার, বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পুর্নেন্দ বালা, নূর হোসেনের সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, রহম আলী,আবুল বাশার, মোর্তুজা জামান চার্চিল, সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর, কর্পোরাল মো. মোখলেছুর রহমান (পালাতক),সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী (পালাতক),সৈনিক আল আমিন শরীফ (পালাতক), সৈনিক তাজুল ইসলাম (পালাতক),সার্জেন্ট এনামুল কবীর (পালাতক), সেলিম (নূর হোসেনের সহযোগী, বর্তমানে ভারতের কারাগারে বন্দি), সানাউল্লাহ ছানা, নূর হোসেনের সহযোগী,শাহজাহান, নূর হোসেনের ম্যানেজার, জামাল উদ্দিন, নূর হোসেনের সহযোগী।
রুহুল আমিন, কর্পোরাল (১০ বছর কারাদণ্ড), বজলুর রহমান, এএসআই (৭ বছর কারাদণ্ড), নাসির উদ্দিন, হাবিলদার (৭ বছর কারাদণ্ড),আবুল কালাম আজাদ, এএসআই (১০ বছর কারাদণ্ড), নুরুজ্জামান, সৈনিক (১০ বছর কারাদণ্ড),বাবুল হাসান, কনস্টেবল, (১০ বছর কারাদণ্ড), আব্দুল আলীম, সৈনিক (১০ বছর কারাদণ্ড), কামাল হোসেন, এএসআই, (১০ বছর কারাদণ্ড),হাবিবুর রহমান, কনস্টেবল, (১০ বছর কারাদণ্ড)।