
জিয়া চৌধুরী, হাটহাজারী, প্রতিনিধিঃ
বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ স্বীকৃতি প্রাপ্ত হালদা নদী মিঠাপানির মেজরকার্প জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল এবং কালিবাউশ) একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ন প্রাকৃতির মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। বিশ্বের অন্যতম এই প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রে গত এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া প্রজননের মৌসুমে এখনো ডিম ছাড়েনি কার্প জাতীয় মা মাছ।
ইতোমধ্যে একের পর এক পাঁচটি ডিম ছাড়ার জো (ডিম ছাড়ার নির্দিষ্ট সময়) চলে গেলেও এখনও পর্যন্ত খুবই সামান্য পরিমান নমুনা ডিম ছাড়া পুরোদমে ডিমের দেখা পায়নি ডিম সংগ্রাহকরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পর্যাপ্ত পরিমান বজ্রসহ বৃষ্টি না হওয়ায় এবং প্রবল গতির পাহাড়ী ঢল নেমে না আসায় হালদায় তৈরী হয়নি ডিম ছাড়ার অনুকুল পরিবেশ। তাই পাঁচটি জো অতিক্রান্ত হলেও দেখা মিলেনি কাঙ্খিত ডিমের।
চলতি সর্বশেষ অমাবশ্যার জো’তে মা মাছ ডিম না ছাড়লে এবার হয়তো ডিম ছাড়া ঘরে ফিরতে হতে পারে হালদা পাড়ের শত শত ডিম সংগ্রাহককে।
একসময় এই হালদা নদীর ডিম সংগ্রহ, রেনু উৎপাদন ও মাছ চাষের উপর র্নিভরশীল ছিল হালদার দুই পাড়ের কয়েক হাজার পরিবার। কালের পরিক্রমায় হালদা নদীও যেন ক্রমাগত কৃপণ হয়ে পড়ছে। প্রতিবছর আশংকাজনক হারে কমে আসছে সংগৃহীত ডিমের পরিমান। হালদার পোনাও যেন হারিয়ে ফেলছে তার চিরায়ত ঐতিহ্য। আগের মত হালদার মাছের পোনা চাষ করে স্বল্প খরচে কাঙ্খিত সাইজের মাছ উৎপাদন করতে পারছেননা মাছ চাষীরা। হালদার রেনু উৎপাদন কমে যাওয়ায় হালদার প্রাকৃতিক পোনা বাদ দিয়ে অনেক মাছ চাষীরা ঝুঁকে পড়ছে হ্যাচারীর বিভিন্ন হাইব্রিড পোনার দিকে। হালদা নদী থেকে উর্পাজন করে পরিবারের খরচ চালাতে ব্যর্থ হয়ে অনেক ডিম সংগ্রাহক ও জেলে বাপ দাদার প্রাচীন পেশা ত্যাগ করে চলে গেছে অন্য পেশায়।
হালদা নদীর ডিম সংগ্রহকারী সমিতির সভাপতি শফিউল আলম জানান, গত পরপর পাঁচটি জো’তে আমরা কয়েকশত ডিম সংগ্রহকারী নৌকা ও ডিম ধরার জাল নিয়ে দিনরাত হালদা নদীতে অপেক্ষার পরেও মা মাছ ডিম না দেওয়ায় আমরা এক প্রকার হতাশ হয়ে পড়েছি। তবে চলতি অমাবশ্যার জোতে তুমুল বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢল নেমে আসলে যে কোন মুহূর্তে নদীতে মা মাছ ডিম দেবে এমনটাই আশা করছি। নদী থেকে ডিম আহরণ করে রেনু ফুটানোর কাজে ব্যবহারের জন্য সরকারি মৎস্য হ্যাচারীগুলো ইতোমধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।
হালদা নদীর উপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রজননের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটারসমুহ অনুকূলে না আসায় ইতোমধ্যে পাঁচটি জো’ (ডিম ছাড়ার সময়) অতিক্রম হলেও এখনো হালদায় পূরোদমে ডিম ছাড়েনি কার্পজাতীয় মা মাছ।
বিগত চতুর্থ জো’ অর্থাৎ মে মাসের অমাবস্যার জো’ ও চলতি মাসের অমাবস্যার জো’য়ের পূর্বে ১১ জুন হালদা নদীর বিভিন্ন স্পনিং স্থানে খুবই সামান্য পরিমাণে নমুনা ডিম ছেড়েছিলো মা মাছ। কিন্তু ওই সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল না নেমে আসায় পূরোদমে ডিম ছাড়েনি কার্পজাতীয় মা মাছ।
১৫ জুন থেকে শুরু হয়েছে কার্পজাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার ৬ষ্ঠ জো’ অর্থাৎ অমাবস্যার জো’ যা ২০ জুন পর্যন্ত চলবে। এই সময় বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল নেমে আসলে হালদা নদীতে অনূকুল পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং পূরোদমে ডিম ছাড়বে কার্পজাতীয় মা মাছ।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম জানান, ডিম সংগ্রহকারীরা যাতে সর্বোচ্চ নিরাপদ উপায়ে আহরিত ডিম ফুটাতে পারে সেজন্য সরকারী হ্যাচারীগুলো সর্ম্পূণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন পুরো হালদায় মা মাছ নিধন বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। হালদা নদীর ডিম সংগ্রহ সহ সার্বিক পরিস্থিতি উপজেলা প্রশাসনের নিরবচ্ছিন্ন তদারকিতে রয়েছে।