
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বিএনপির মোটরসাইকেল বহরে হামলার ঘটনার জের ধরে উল্টো বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা মামলা-হামলার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির নেতারা।
আজ বুধবার (৫ জুলাই) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সাম্মেলনে এ সব অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক সরোয়ার আলমগীর বলেন-ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিমুউদ্দীন মুহুরীর নির্দেশেই বিএনপির শোভাযাত্রার উপর হামলা হয়েছিল। সে দিন বিএনপি অঙ্গসংগঠনের কয়েকশত মোটরসাইকেলের মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে ঈদের শুভোত্রা বিনিময় করার উদ্দেশ্যে দুপুর ঘটিকার সময় নাজিরহাট থেকে হেয়াকো সড়ক পর্যন্ত ঈদের শুভেচ্ছা শেষে হেয়াকো বাজারে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ এবং ছাত্র লীগের ক্যাডাররা মোটর শোভাযাত্রার পেছনে বঙ লাটি, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করে। আমাকে এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামীলীগ নেতা ইসমাইল মজুমদার, সেলিম সরকার, হানিফ সরকার। এই হামলায় বিএনপি নেতা আবুল খায়ের, আ হাশেম, মুবদল নেতা সামত, সেচ্ছাসেবকদল নেতা মোঃ জসীম উদ্দীন, আরিফ, ইউসুফ এবং হানিফ, ছাত্রদল নেতা মীর মোহাম্মদ আলী আকবর, আনিসুর রহমান টিটু, ইয়াকুব, জয়নাল আবেদীন, জামশেদ আলম, আরিফ হোসেন, ফারহানসহ অসংখ্য নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে এবং প্রায় ৫০টি মোটরসাইকেল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ১২টি মোটরসাইকেল ভারা রেখে দেয়। এ ঘটনার আরেকটি ভূজপুর ট্রাজেডি যাতে না হয় তার জন্য আমার নেতাকর্মীদের শান্ত করে ঘটনার ব্যাপকতা যাতে না হয় সেখান থেকে আমরা সকলে যার যার এলাকায় চলে আসি। এই সংগঠিত ঘটনার পুরো ভিডিও ইতিমধ্যে ফেইসবুকের কল্যাণে ভাইরাল হয়ে গেছে এবং দেশে-বিদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ সেটা পর্যবেক্ষণ করছে।
ইতিমধ্যে স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকা, মিডিয়া ঘটনা প্রচার করা হয়েছে। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে এ হামলার প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামীলীগ একটি সন্ত্রাসী দল। তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় চিরস্থায়ীভাবে থাকার জন্য তাদের একমাত্র নির্ভরতা প্রশাসন এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে বিরোধী দলের উপর হামলা, মামলা এবং সভা-সমাবেশের উপর হামলা করে।
শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলার ঘটনা পুর্বপরিকল্পিত জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর ধরে যা করেছে, তার ব্যতিক্রম এখনও হয়নি। তারা মুখে বলে শান্তিপুর্ণ, কিন্তু তারা যে কত অশান্ত সেটা বর্তমান ফটিকছড়ির বিভীষিকাময় পরিস্থিতি প্রমান করে। আমরা শান্তিপূর্নভাবে ফটিকছড়িতে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করতে রাস্তায় নেমে নীরব শোভাযাত্রা বের করেছিলাম। সেই শোভাযাত্রাকে তারা ভন্ডুল করতে চেয়েছে। নাজিম উদ্দিন মুহুরীর উষ্কানীমূলক বক্তব্য প্রমাণ করে তিনি এ পুরো ঘটনার পরিকল্পনাকারী এবং নির্দেশদাতা। সংগঠিত ঘটনার পর থেকে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা দাঁতমারা, নারায়নহাট এবং ভূজপুরের নীরিহ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নির্যাতন এবং হামলা অব্যাহত রাখে। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কারেম করছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সেদিন হামলা করে আমাদের প্রায়ই ৫০টি মোটরসাইকেল তারা ধ্বংস করেছে এবং ১২ থেকে ১৪টি মোটরসাইকেল তারা রেখে দিয়েছে। এছাড়া ফটিকছড়ির প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের তল্লাশি চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডারেরা। তাদেরকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছে।
তিনি বলেন- আমি বারবার প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য। কিন্তু প্রশাসন বিশেষ করে ভূজপুর পুলিশ এখনও কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আমি আপনাদের মাধ্যমে দাবী করি, সংগঠিত ঘটনার সুষ্ট তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধী এবং ঘটনার সঙ্গে জ ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আমার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। আপনারা জানেন, নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা সাধারণ মানুষের ভালোবাসা নিয়ে আমাদের রাজ নৈতিক কর্মকাজ পরিচালনা করি। আমরা মামলা-হামলা, সংঘাত, সংঘর্ষে বিশ্বাস করিনা। আমি আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনকে আগামী ৭২ ঘন্টার ভিতরে এ ঘটনার সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তি ও ঘটনার পরিকল্পনাকারী নেতৃত্বকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবী। তিনি বলেন- দাঁতমারা, নারায়নহাট এবং ভূজপুরের সংগঠিত হামলা, ত্রাসের রাজত্ব বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় আমার দল বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, কাজী সালাউদ্দিন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, জেলা বিএনপির সদস্য শওকত আলী নূর, সোলায়মান মঞ্জু, আজমত আলী বাহাদুর, ফটিকছড়ি পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মোবারক হোসেন কাঞ্চন, সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন শাহিন, আবু তাহের সিদ্দিকী, মহিউদ্দিন আজম তালুকদার, মনসুর আলম চৌধুরী, আবুল খায়ের, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক জসীম উদ্দীন চৌধুরী, ছাত্রদলের সহ সভাপতি আনসুর উদ্দিন, বিএনপি নেতা আবু মেম্বার, খালেদ বাবুল, হাফেজ জয়নাল, এস এম মনসুর, জালাল উদ্দীন চৌধুরী, মোশারফ আনোয়ার মশু, ফয়েজ তারেক, ওমর ফারুক প্রিন্স, দৌলত মিয়া প্রমূখ।