
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর আঘাতে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা বাঁশখালী রাস্তাঘাট, খেতখামার ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার কাঁচা বাড়িঘর ভেঙে গেছে। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ এবং মঙ্গলবার রাত থেকে প্রধান সড়কে গাছপালা ভেঙে আনোয়ারা-বাঁশখালী সড়কের যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ হামুন’র প্রচণ্ড গতিবেগের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকা ছনুয়ায় অবস্থিত প্রান্তিকের গণপাঠাগার উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরীটি।
গতকাল মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টায় বাঁশখালী উপকূলে আঘাত হানে হামুন। এতে বাতাসের তোড়ে গাছপালা উপড়ে পড়ে বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হলেও কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, উপজেলার পুইছড়ি, ছনুয়া, চাম্বল, শিলকৃপ, গণ্ডামারা, সরল, বাহারছাড়া, খানখানাবাদ, সাধনপুর, পুকুরিয়ার কাঁচাঘরবাড়ি, গাছপালা ও সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, রাস্তাঘাটে ভেঙ্গে পড়ে আছে গাছ পালা। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন যান চলাচল স্বাভাবিক সকাল থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাঁশখালী পৌরসভার মহাজনপাড়া এলাকার সুধীর মহাজন বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয় বুধবার ভোর নাগাদ ঘূর্ণিঝড় হামুন আঘাত হানবে। তাই আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। হঠাৎ রাত সাড়ে ৯টায় তীব্র বেগে বাতাস শুরু হয়। কোথায় যাবো বুঝতে পারছিলাম না। মূলত আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভুল সংবাদে এতো বড় বিপর্যয় ঘটেছে।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় হাজার খানেক কাঁচাঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। সড়কসহ বিভিন্ন জায়গায় গাছপালা ভেঙে যাওয়ায় বাঁশখালীর যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে ক্ষতির তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে ।
উপজেলা প্রশাসনের মতে সহস্রাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অপরদিকে গতকাল সকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ বিহীন থাকার কারণে ইন্টারনেট সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে সীম কোম্পানিগুলোকে।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ বাঁশখালী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) রিশু কুমার ঘোষ বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন এর প্রভাবে বাঁশখালীতে ৩৩ কেভি লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অন্তত ২০ টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে। পথেঘাটে তাঁর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আমাদের লোকজন ভোরবেলা থেকে গাছপালা কাটার কাজে নিয়োজিত আছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যেও বিদ্যুৎ সচল করা যায় কিনা বলতে পারছি না। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার।
ছনুয়া ইউনিয়নের মধুখালী এলাকার রোকেয়া বেগম বলেন, আমার কাঁচাপাঁকা বাড়িটি বাতাসের তোড়ে ভেঙে গেছে। টিনও উড়ে গেছে। এখন আমি নিঃস্ব। বিদ্যুৎ না থাকায় সাবমারসিবল থেকে পানিও নিতে পারছি না।

উপকূলীয় পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সাফি আনোয়ারুল আজীম বলেন- রাতে চট্টগ্রামের উপকূল দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে লাইব্রেরির অর্ধেক অবকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। পাঠাগারের প্রায় ২ হাজার বই নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া সৌর প্যানেল,হলরুম, নামাজঘর, সম্প্রতি নির্মিত নান্দনিক পাঠকরুমটিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলাম, বিশেষ করে আমাদের যে সব বই নষ্ট হয়েছে, সেগুলো নির্বাচিত গ্রন্থ, পাঠাগারের নিজস্ব ফান্ড থেকে ক্রয় করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ভিত্তিক বই। বিগত ২ বছর ধরে আমরা ধারাবাহিকভাবে বইগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশীদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন এর তান্ডবে আমার ইউনিয়নের অন্তত তিন শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে কোথাও বেড়িবাঁধ ভাঙার খবর পাইনি।