বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ তার গতিপথ কিছুটা উত্তর-পূর্ব দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে। এতে করে মূল কেন্দ্রসহ সিংহভাগ বাংলাদেশের উপকূলের দিকে রয়েছে। বৃহস্পতিবার মাত্র ৬ ঘণ্টায় উপকূলের পথে ১০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে। এর ফলে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সময় অনেকটা এগিয়ে এসেছে। আরও শক্তি বাড়িয়ে শুক্রবার ভোরের দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’তে রূপ নিতে পারে। আর ঘূর্ণিঝড় হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ সন্ধ্যা ৬টায় ইস্যু করা বিশেষ বুলেটিনে জানান, দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময়ে গভীর নিম্নচাপটি শক্তি বাড়িয়ে উপকূলের দিকে ১০০ কিলোমিটারের কিছুটা বেশি পথ অতিক্রম করেছে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে গভীর নিম্নচাপটি শক্তি সঞ্চয় করে আরও উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৯০ কিলোমিটার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি শক্তি বাড়িয়ে উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর এবং আরও ঘনীভূত হতে পারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে একটানা বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গভীর নিম্নচাপের অগ্রভাগের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার দূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের উপর দিয়ে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সাবাজর, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোরের মধ্যে গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১১টি জেলায় আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। জেলাগুলো হলো- সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম। এটি সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার গতিতে উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া অফিস বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাদের বিশেষ বুলেটিনে বলেছে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটির স্টিয়ারিং কিছুটা উত্তর পূর্ব দিকে সরেছে। এর ফলে এর মূল কেন্দ্রসহ গতিপথের একটি বড় অংশ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানবে। গভীর নিম্নচাপটি দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে চলেছে। শুক্রবার দুপুরের আগেই ১ নম্বর ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। কেন্দ্রের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ৬০ কিলোমিটার।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে গভীর নিম্নচাপের গতিপথ উত্তর পূর্ব দিকে কিছুটা সরে যাওয়ায় মোংলা ও খেপুপাড়ার মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে। অগ্রভাগ উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছার পর শক্তি ক্ষয় হয়ে আবার গভীর নিম্নচাপ হতে পারে। তবে এর গতিপথ বলে দিচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণের উপকূলের বড় অংশে আঘাত হানবে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। এর আঘাতে কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলে গাছ ও দেওয়াল চাপায় অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় উপকলীয় কয়েকটি জেলায়। তছনছ হয়ে যায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয় অন্তত ৭ লাখ মানুষ। এখনো সেই ক্ষতই কাটেনি। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র খবর উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
