মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘প্লাটিনাম জয়ন্তী’ উদযাপন অনুষ্ঠানে সংঘর্ষ ও চেয়ার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত দুইজন।
আহতরা হলেন- আওয়ামী লীগ কর্মী মোহাম্মদ হোসেন (২৫) ও স্থানীয় এক আইপি টিভির সাংবাদিক সোলাইমান সিকদার (৩৭)।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার (২৩ জুন) বিকেল সাড়ে ৫টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ‘প্লাটিনাম জয়ন্তী’ উপলক্ষে উপজেলার আনাপুরা খেলার মাঠে জনসভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সোহানা তাহামিনা, প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন- মুন্সীগঞ্জ ৩ আসনের এমপি মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান শুরু করার প্রাক্কালে ব্যানারে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মাজহারুল হক তপনের নাম না থাকায় এবং তার জন্য চেয়ার নির্ধারিত না থাকায় তার নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এসময় আমন্ত্রিত অতিথিদের সামনেই তারা নানা স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় মোহাম্মদ হোসেন নামে একজন মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ সমর্থক তাদের শান্ত হতে বললে তাকে বেধড়ক মারধর করে ডা. মাজহারুল হক তপন সমর্থকরা।
ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভ করতে গিয়ে হামলাকারীদের টার্গেটে পরিণত হন ফাল্গুনীর সাংবাদিক সোলায়মান শিকদার। হামলাকারীরা তাকে পিটিয়ে আহত করে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও অর্ধশত চেয়ার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও এমপির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আহতদের উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কামরুন নাহার বলেন, সন্ধ্যায় ৬টার দিকে হাসপাতালে দুজন রোগী নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে হোসেনের মাথায় আঘাত এবং সোলেমান শিকদারের গালে ও গায়ে আঘাত রয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে।
গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠান হওয়াতে ব্যানারে জেলা পর্যায়ের অনেক নেতার নাম রাখা হয়নি। নাম না রাখা হলেও তাদের বসার ব্যবস্থা এবং বক্তব্য দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছিলাম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি পক্ষ বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। তখন আমি আমার নিজের চেয়ারটি ছেড়ে দেই, এতেও তারা শান্ত হয়নি। তারা পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড করতে চেয়েছিল।
বিষয়টি সম্পর্কে তার বক্তব্য জানতে অধ্যাপক ডা. মাজহারুল হক তপনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিয়ে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান।
এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখানে যাই ঘটুক আর যেভাবেই ঘটুক তার দায় উপজেলা আওয়ামী লীগের। এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছি। ভবিষ্যতে যাতে নেতাকর্মীরা এসব বিষয়ে সতর্ক থাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজিব খান বলেন, শুনেছি মঞ্চে বসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় দুইজন আহত হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।