ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

বসন্ত ছুঁয়েছে আমাকে তাই ছুঁয়ে দিলাম তোমায়…….

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে ১১ মিনিট

সাহাব উদ্দীন হাসান বাবু।

সৌন্দর্য্য আর রূপের প্রশংসা কার না ভালো লাগে? হোক তা আমার, আপনার এবং সকলের। পরিবেশের এক ভিন্নধর্মী রূপের মুগ্ধতায় আজ তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে কলম ধরেছি। কী, ভাবছেন কার রূপের এতো প্রশংসা করার জন্য লেখকের এই কলম ধরা! চারিদিকে চোখ মেলে দেখুন যেন রূপলাবণ্যে থোকায় থোকায় জেগে উঠেছে প্রকৃতি। আপনার চারপাশ এখন নানা রঙে রঙ্গিন, নানা বর্ণে বর্ণিল আকার ধারণ করেছে। বৃক্ষরাজির নবীন কঁচি পাতায় আর শাখা প্রশাখায় মোহনীয় রূপের নাচন। আর তার সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে গোলাপ, জবা, বেলি, পলাশ, পারিজাত, কৃষ্ণচূড়া আর হাঁসনাহেনার হাঁসি। তাই দেখে ফুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে পাগলপারা হয়ে ঘরছাড়া মৌমাছি। অন্যদিকে কোকিলের কুহুতানে উন্মাতাল ব্রক্ষ্মান্ড।

.

এমনিভাবেই চারপাশের প্রকৃতিই জানিয়ে দিচ্ছে আমাদের দ্বারে দ্বারে বসন্ত জাগ্রত হয়ে চোখের তৃপ্তি মিঠিয়ে হৃদয় ছুঁয়ে দেয়ার কাহিনী। শীত শেষ শেষ ভাব আবহাওয়াটাও কিছুটা অন্য রকম। খুব ভাবুক বা আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ না হলে তখন চট করে হয়তো ধরে ফেলা যাবে না বসন্ত আপনার দরজায় এসে কড়া নাড়ছে। যথা নিয়মেই প্রকৃতির পরিবর্তন এসে পড়ে মনে এবং বনে। রূপ লাবণ্যে তরুতাজা হয়ে জেগে উঠে প্রকৃতি। এমনি করে অবচেতন মনেই কিন্তু সবাই বসন্তকে আহ্বান করি। তাই তো কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে ইচ্ছে করে- আজি দখিণ-দুয়ার খোলা-/ এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো…/ বসন্তকে স্বাগত জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, বসন্ত দাও আনি/ ফুল জাগাবার বাণী/ তোমার আশায় পাতায় পাতায় চলিতেছে কানাকানি…। দ্রোহ আর প্রেমের কবি কাজী নজরুলের উচ্চারণ- এলো খুনমাখা তূণ নিয়ে / খুনেরা ফাগুন…। হ্যাঁ, সেই প্রিয় জাগ্রত বসন্ত মানে ১৪২০ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাস আমাদের মাঝে সশরীরে উপস্থিত। কান পাতলেই শুনতে পাবেন আপনার পাশেই কেউ হয়তো গুণগুণিয়ে গেয়ে উঠছে পলাশ ফুটেছে শিমুল ফুটেছে/ এসেছে ফাগুন মাস…জনপ্রিয় গানের এই কলিই বুঝিয়ে দিচ্ছে ফাগুন কতো আকাঙ্খিত। আচ্ছা সবই বাদ দিলাম, ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক/ আজ বসন্ত… কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের এই বিখ্যাত কলিই বা বাঙ্গালি ভুলে কী করে? বাঙ্গালির প্রাণে প্রাণে প্রথীত হয়ে গেছে এই কলি। হ্যাঁ এতোক্ষণ আপনাদের সাথে ঋতুরাজ বসন্তের সৌন্দর্য্য নিয়েই কিছু বলার চেষ্টা করেছি। অর্থাৎ বসন্ত ঋতুর হয়ে ওকালতি করছিলাম আরকি।

.

ঋতুরাজ বসন্তের আগমন মানেই কিন্তু মিষ্টি হিমেল শীতের বিদায় ঘন্টা বেজে উঠা। একদিকে বিদায়ের করুণ সূর অন্যদিকে বরণের ব্যস্ততা। শীতের স্থবিরতা-জড়তা-বিবর্ণতা-জীর্ণতা কাটিয়ে উত্তুরে হাওয়ার গতিপথ পরিবর্তীত হয়ে দখিনা হাওয়ায় রুপান্তরীত করাই ফাগুনের স্বভাব বা বিশেষত্ব। এভাবেই বসন্তের আগমনবার্তা ঘোষিত হয়। শীতের বিদায়ে যেন কোকিলের ধড়ে প্রাণ ফিরে আসে। ফাগুনের এই আগমনে মানুষের মতো বিবর্ণ-ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া প্রকৃতিও জেগে উঠে নতুন করে, নব রূপে, নব বধূ সাজে। মৃত প্রায় বৃক্ষরাজি যেন আবার নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। বাগানে বাগানে ফুটে ফুলের কলি। রক্তলাল পলাশ, মাধবী, শিমুল, কৃষ্ণচূড়ায়, নানা রঙে সাজে বন-বাঁদাড়, প্রাণের আবেশে জেগে উঠে প্রকৃতি। এককথায় গোটা প্রকৃতির রাজ্যে মায়াবী জাগরণ নিয়ে আসে বসন্ত। গাছপালায় যেন নতুন কুঁড়ি জন্মানোর মহোৎসব শুরু হয়। একই সাথে শুরু হয় ফুলে ফুলে প্রস্ফুটিত হওয়ার খেলা। তাই না দেখে সমস্ত প্রাণিজগতেও শুরু হয় প্রাণচাঞ্চল্য। বিশেষ করে মানুষ, পাখ-পাখালী, মৌমাছি যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে ফুলের সুবাসে সুশোভিত হয়ে উঠার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে।

কোকিল কুহু কুহু তানে বন-বাগানের সাথে সাথে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তোলে। অন্য পাখিরাও তাদের সমস্ত জড়তা কাটিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হয়। যেন প্রাণে প্রাণে মিলিত হয়ে অন্য রকম এক ভালোলাগার জন্ম নেয়। মুগন্ধতায় আবেশীত হয়ে তা হৃদয়াঙ্গম করতে পেরেছেন বলেই এতো ফুল ফুটে/ এতো বাঁশি বাজে, এতো পাখি গায়/ আহা, আজি এ বসন্তে…ঠিক এইভাবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তার গানে বসন্তকে সুন্দর করে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন।

শুধু প্রকৃতিকে নয়, অনাদিকাল ধরে এ ঋতুরাজ বসন্ত বাঙ্গালির হৃদয়কে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। প্রতিবছর ফাল্গুন মাস এলেই ফুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মন প্রাণ কেমন জানি আকুলি বিকুলি করে উঠে। শুধু কী তাই, মনে ভালোলাগা ভালোবাসার সৌরভ ছড়িয়ে প্রিয়জনকে আরো কাছাকাছি এনে দেয়ার প্রকৃতির এক অমোঘ নিয়মের আয়োজন যেন এই বসন্ত। ফাগুন মাসে নাকী আবহাওয়া খট্খটিয়ে হাঁসে অর্থাৎ খুবই মনোরম ও আরামদায়ক আবহাওয়া হয়ে আমাদের কাছে ধরা দেয়। তেমন ঠান্ডাও না আবার তেমন গরমও না। এককথায় যাকে বলতে পারেন নাতিশীতোষ্ণ। এ মাসে স্বচ্ছ নীল আকাশ, মাতাল হাওয়া, ঝঁকমকে রোদ- বাতাসে প্রকৃতিতে অন্যরকম মাদকতা, সবকিছুতেই ছন্দের দোলা আপন মনে খেলা করে। নীল আকাশের সৌন্দর্য্যতায় মুগ্ধ হয়ে ‘নীলাকাশ ছুঁতে পারি/ যদি তুমি চাও/ ঐ নীল হতেই পারি/ যদি তুমি চাও…এই গানের কলির মতো বাধাহীন চিত্তে নতুন করে ভালোবাসার প্রেরণা খুঁজে নিতে পারেন। সমাজের নষ্ট মানুষগুলোর কলুষিত মনের মতো প্রকৃতি কিন্তু ভেজাল কলুষিত হয়ে যায় না। ফাল্গুগুন এলেই প্রকৃতির নির্ভেজাল রূপ নতুন সাজে ধরা দেয় মুগ্ধতার আবেশ নিয়ে। বনে বনে বয়ে যায় মাতাল করা পাগলা হাওয়া। ভালোলাগাময় এসবকিছুই মানুষের অবচেতন মনে দোলা দিয়ে শিহরণ তোলে সবার প্রিয় আগুন লাগা মাস ফাগুন মানে ফাল্গুন।

.

আমরা সবাই জানি বাংলাদেশ ষড় ঋতুর দেশ অর্থাৎ ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ। একেকটি ঋতুর আবার একেক বৈশিষ্ট্য। তবে সব ঋতুর মাঝে বসন্ত কিছুটা ব্যতিক্রম হয়ে আমাদের মাঝে ধরা দেয়। বসন্ত ঋতুর প্রধান আশ্রয় আগুনের ফাগুন এলেই যেন বাঙ্গালি জাতি নতুন করে উৎসবের আমেজে জেগে উঠে। এমনিতেই উৎসব উদযাপনে জুড়ি নেই বাঙ্গালির। তার ওপর উৎসবটি যদি হয় প্রকৃতির পালাবদল ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের দিন- তবে তো সোনায় সোহাগা। বসন্তকে বরণ করে নিতে প্রথম দিনেই শুরু হয় বাসন্তি রঙের মিছিল। বসন্তে প্রকৃতির সাজে তাল মিলিয়ে সবাই নিজেকে মনের রঙে সাজিয়ে তোলে।

নানা বয়সের, নানা পেশার বঙ্গ ললনারা বাসন্তি রঙের শাড়ি পরে ঘুরে বেড়ায়। বিশেষ করে যুবতীরা বাসন্তি রঙের শাড়ি পরে কঁপোলে লাল, নীল, হলুদ, কালো, গোলাপী টিপ পরে পথে ঘাটে, বিনোদন স্পটগুলোতে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তাই তো বসন্ত ঋতুকে বলা হয় ঋতুর রাজা, যৌবনের ঋতু। এ ঋতুতে প্রকৃতির মতো মানুষের মনও চঞ্চল হয়ে ওঠে। চঞ্চল মন… উড়- উড়- মন…কী চাই- কী চাই…। দালান-কোটা, ইট-পাথরের অট্টালিকাময় নগরীতে একটু প্রাণের ছোঁয়া পেতে এদিন নারী-পুরুষরা ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।

সাধারণ মানুষেরতো বটেই বসন্তের উন্মাতাল বাতাস বাউল সম্রাট আবদুল করিমের মনকেও অশান্ত করে তুলেছিলো। তাইতো সুনামগঞ্জের বাউল আনমনে গেয়ে উঠেন- বসন্ত বাতাসে সই গো/ বসন্ত বাতাসে/ বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ/ আমার বাড়ি আসে…। এভাবে বসন্তের আগমনে উচাটন হয়ে উঠে আমাদের মন। এসময়ে মৌমাছিরা মধুর খোঁজে হন্যে হয়ে ফুল থেকে ফুলে হামলে পড়ে। সবমিলিয়ে অনন্য এক ঐশ্বর্য্যরে অধিকারী ঋতুরাজ বসন্ত। বসন্তকে বরণ করার জন্য প্রতিবছর এই সময়ে উৎসব প্রিয় বাঙ্গালি উন্মুখ হয়ে থাকে। প্রকৃতির যাই অবশিষ্ট আছে সেটাই সাজিয়ে তোলে। প্রকৃতির এ অনন্য উপহার বাঙ্গালি বরণ করে নেয় মনপ্রাণ দিয়ে। বসন্তকে বরণ করে নিতে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে সারাদেশে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালার পাশাপাশি শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। তবে পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ, ভালোবাসা দিবস, ইংরেজী নববর্ষকে বরণের মতো বর্ণাঢ্য ও ব্যাপক আয়োজন বসন্ত উৎসবে দেখা যায় না।

এবার ভিন্ন এক প্রসঙ্গে আপনাদের নিয়ে যাচ্ছি। আমরা সিংহভাগ বাঙ্গালিই কিন্তু জানিনা এই ফাল্গুগুন মাসেই বাঙ্গালির এক মহাস্মরণীয় দিন লুকায়িত আছে। বসন্ত যেহেতু ফাল্গুন মাসকেই কেন্দ্র করে কেন্দ্রীভূত সেহেতু প্রসঙ্গের বাহিরে গেলেও সেই মহাস্মরণীয় দিন নিয়ে দু’কলম লেখা এখানে একেবারে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ৮ ফাল্গুন, বাঙ্গালি জাতির ইতিহাসে অন্যতম এক দ্রোহের দিন। এদিন বাঙ্গালির দামাল ছেলেরা মায়ের মুখের ভাষা, বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য ঢাকার রাজপথের পিচঢালা রাস্তায় বুকের তাজা রক্ত ঢেলে আরো একবার প্রমাণ করে দিয়েছিলেন বাঙ্গালি জাতি কোনদিন মাথা নত করেনি তাঁরা মাথা নত করতেও জানেনা। দ্রোহের এই দিনটি বাঙ্গালি জাতির ইতিহাসের পাতায় অবিশ্বস্মরণীয় হয়ে থাকবে। অথচ বঙ্গাব্দের এই দিনটির কথা আমরা বেমালুম ভুলে থাকার চেষ্টা করছি। দুঃখজনক হলেও সত্যি আমরা শুধু ২১ ফেব্র“য়ারী কে নিয়েই মাতামাতি করি ৮ ফাল্গুনের চর্চা করি না। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে এসে ৮ ফাল্গুনকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

আবার প্রাসঙ্গিকতায় ফিরে এসে ঋতুরাজ বসন্তকে বাঙ্গালি কিভাবে বরণ করেছে সেদিকে এবার চোখ বুলানো যাক। নগরীর সংস্কৃতি চর্চার প্রধান কেন্দ্র নজরুল স্কায়ার (ডিসি হিল), শিল্পকলা একাডেমী চত্বর, থিয়েটার ইনষ্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনষ্টিটিউট প্রাঙ্গণ, শিশু পার্কগুলি, নেভাল একাডেমী, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত (সী-বীচ) এই সমস্ত বিনোদন কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি মুসলিম হল চত্বরে আয়োজিত বই মেলায়ও পহেলা ফাল্গুন বসন্তের রঙ ছড়িয়েছে। দিনভর নাচ-গান ও আবৃত্তিতে মুখরিত ছিল প্রাঙ্গণগুলো।

এদিনকে বরণে চট্টগ্রামের দুই শীর্ষস্থানীয় আবৃত্তি সংগঠন বোধন ও প্রমা’র বর্ণাঢ্য আয়োজন সব বয়সি মানুষের প্রাণ ছুঁয়ে গেছে। এদিন দামপাড়া মোহাম্মদ আলী রোডস্থ চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমীর উন্মুক্ত মঞ্চে প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের আবৃত্তি উৎসব বোদ্ধা মহলের দৃষ্টি কেড়েছে। তবে প্রমার অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে আশপাশের মসজিদগুলো থেকে মাগরিবের আজান ভেসে এলে তা শুনার পরেও সংগঠনের পক্ষ থেকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অনুষ্ঠানের বিরতি ঘোষণা করা হয়নি যথারীতি মঞ্চে গান চলতে থাকে। তাদের দৃষ্টিকটূ এ সিদ্ধান্ত উপস্থিত সচেতন দর্শক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সংগঠনের নির্লিপ্ততায় দর্শক মহলের পক্ষ থেকে এব্যাপারে প্রমার কর্ণধার রাশেদ হাসানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি।

শতকরা ৯০ শতাংশ মুসলিম প্রধান এদেশে অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে সাধারণত আজান ও নামাজের জন্য বিরতি দেয়ার রেওয়াজ চালু আছে। কিন্তু সেদিন রাশেদ হাসানের নির্লিপ্ততায় ধর্মের অনুশাসনের প্রতি তার হীনমন্যতা প্রকাশ পেয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে শতকরা ৯৯.৯৯ শতাংশ বিভিন্ন ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের এই দেশে ধর্মের অনুশাসনকে অসম্মান করাটা সাব্বাসী কাজ নয়। যেকোন ধর্মের ধর্মীয় মূল্যবোধকে সম্মান জানানোটা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এব্যাপারে আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্য আরো সচেতন হওয়া আবশ্যক। একই দিন নজরুল স্কোয়ারে বোধনের দুই দিনব্যাপী বসন্ত উৎসবও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আগে থেকেই সেখানে একুশ মেলা পরিষদের উদ্যোগে একুশ বই মেলা চলছিলো তার উপর বোধনের বসন্ত আয়োজন সবার প্রাণে হিল্লোল ছড়িয়েছে। এদিন বাসন্তি রং শাড়ি, পাঞ্জাবি পরিধান করে খুব ভোরেই বাসা থেকে বের হয়ে পড়ে তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীরা। মেয়েরা খোঁপায় পেঁচিয়ে রাখে বকুল, বেলি বা হলুদ গাঁদা ফুল। ছেলেদের পাঞ্জাবি বা ফতুয়াতে বসন্তের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ রঙের আবহ দেখতে পাওয়া যায়। অনেকেই আবার কঁপোলে ও গালে লাল-হলুদ রঙের আবির মাখিয়ে উৎসবটিকে আরও প্রাণবন্ত ও রাঙিয়ে তুলে। কেউবা দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় বিনোদন স্পটগুলোতে। কেউবা প্রিয়জনের হাতে হাত, চোখে চোখ রেখে রেঁস্তোরার আলো আঁধারিতে খুঁনসুটি করে সময় কাটিয়ে দেয়। মোটকথা সবখানে পরিলক্ষিত হয় উৎসবের আমেজ, নানা রঙে রাঙিয়ে দিকবিদিক বর্ণিল- উচ্ছ্বল ছোটাছুটি। তবে চট্টেশ্বরী রোডের চট্টগ্রাম চারুকলা মহাবিদ্যালয় (চট্টগ্রাম আর্ট কলেজ) এবার বসন্ত বরণ উৎসবের আয়োজন না করায় সংস্কৃতি পিপাসুরা হতাশ হয়েছেন।

বিগত বছরগুলোতে তাদের বর্ণাঢ্য বর্ণিল আয়োজন সকল বয়সী মানুষের প্রাণের খোরাক মিঠাতো এবং তাদের দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা যেন সব অঙ্গনের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হতো কিন্তু এবার তাদের নির্লীপ্ততায় সবাই হতাশ হয়েছেন। বিশেষ করে সংস্কৃতিসেবীরা তাদের স্মৃতির আয়নাতে শান দিতে না পেরে হৃদয়ে চোট পেয়েছেন। বাঙ্গালির প্রিয় অন্যান্য উৎসবের মতো ততোটা জাঁকজমক না হলেও সব মিলিয়ে দারুণ আনন্দের একটি দিন কাটলো উৎসব প্রিয় বাঙ্গালির। রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার এই দেশে প্রতিদিন এমনভাবেই আনন্দ, উচ্ছ্বলতায় কাটুক আমাদের। শেষ লগ্নে এসে বসন্তের বর্ণিলতায় গা ভাসিয়েই বলি, চুপি চুপি পিছু পিছু/ কানে কানে কিছু কিছু/ সূরেরও ঝঙ্কার বাজে/ মনটাই উঁচাটন/ বদলায় ক্ষনে ক্ষন/ স্বপ্নটাকে শুধু কাছে ডাকে…বসন্তের মাতাল হাওয়ায় উন্মাতাল হয়ে প্রিয়জনের একান্ত সান্নিধ্য কামনায় গানের এই কলির মতো আমাদেরও রাঙানো স্বপ্নের পিছনে ছোটার পালা…। ভালোলাগা- ভালোবাসার সৌরভ ছড়িয়ে, প্রাণে প্রাণে আবগাহন করার পালা। প্রিয় পাঠক, আপনিও প্রস্তুত আছেন তো?

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গল্পকার।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print