ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

বছরজুড়ে আলোচনা-সমালোচনায় সৌদির ২০৩৪ ফুটবল বিশ্বকাপ

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

মুসলমানদের তীর্থভূমি সৌদি আরব কয়েক হাজার বছর ধরে বিশ্বব্যাপী গুরুত্ববহন করছে। সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে পবিত্র এই দেশটি বেশ আগ্রহের। প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ সেখানে হজ পালন করতে যায়, কেউ কেউ যায় দেশটির ঐতিহ্য, ইতিহাস আর সমৃদ্ধির কথা জানতে। কাজের খোঁজেও দেশটিতে পাড়ি জমায় লাখ লাখ মানুষ।

তেল আর খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধি সৌদি আরব বিশ্বের বুকে আবারও আলোচনায় এসেছে ২০৩৪ ফুটবল বিশ্বকাপ দিয়ে। মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের ডাক পেয়েছে তারা। ২০২২ সালে মধ্যপ্রাচ্য যেন বিশ্বের বুকে নতুন এক পরিচয়ের জন্ম দিয়েছে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই ওই অঞ্চলের ফুটবল নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে গোটা বিশ্বে।

২০২২ বিশ্বকাপ মঞ্চে সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার পরাজয়, কাতারের সফল বিশ্বকাপ আয়োজন, সৌদির ক্লাবে রোনালদো-নেইমার-বেনজেমাদের মতো তারকাদের আগমন। লিওনেল মেসির শুভেচ্ছা দূত হওয়া। সৌদির মালিকানাধীন পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেডের মালিকানা নেয়া। এ ছাড়াও ছেলেদের পেশাদার এলআইভি গলফ সিরিজ চালু করাসহ নানা ভাবে ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনার জন্মদিয়েছে মরুদেশগুলো।

২০২২ থেকে শুরু হওয়া আলোচনা এবার সৌদি আরব টেনে নিয়ে যাচ্ছে ২০৩৪ ফিফা বিশ্বকাপ পর্যন্ত। আগামী দশ বছর বিশ্বফুটবলে নিয়মিত সৌদি আরবের নাম জপবে। কারণ ফুটবলের ২৫তম বিশ্বকাপের আয়োজক হতে যাচ্ছে তারা। আসরটি বেশ কয়েকটি কারণে ইতোমধ্যে আলোচনার শীর্ষে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ প্রথমবার ৪৮ দলের ফুটবল বিশ্বকাপ এককভাবে আয়োজন করবে তারা। এছাড়া দ্বিতীয় মরুদেশ হিসেবে আয়োজক হচ্ছে সৌদি।

সম্প্রতি ফিফা সৌদি আরবকে ২০৩৪ বিশ্বকাপের আয়োজক ঘোষণার পর দেশটিতে শুরু হয়েছে উৎসবের আবহ। এরই মধ্যে টুর্নামেন্টটির নকশা তৈরি করে ফেলেছে তারা। ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বিশেষ পরিকল্পনাও ছকে ফেলছে সৌদি আরবের পর্যটন দফতর। ফুটবল বিশ্বকাপ কেন্দ্র করে সৌদি আরবে যাওয়া ক্রীড়াপ্রেমীরা যাতে সে দেশের সংস্কৃতিরও ছোঁয়া পান, তা নিশ্চিত করতে চাইছে সৌদি প্রশাসন।

২০৩৪ ফুটবল বিশ্বকাপের সম্ভাব্য সূচি কবে হতে পারে তা এখনই জানা সম্ভব নয়। তবে সূচির বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া গেছে। রমজান মাস ও সৌদিতে গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রার কথা চিন্তা করে ২০৩৪ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ফুটবল বিশ্বকাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

সৌদিতে অনুষ্ঠিত আসরটিই হবে ৪৮ দেশের প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ যা কি না আয়োজিত হবে একটিমাত্র দেশে। এর আগের দুই আসর তথা ২০২৬ ও ২০৩০বিশ্বকাপে ৪৮ দেশ অংশ নিলেও তা আয়োজিত হবে একাধিক দেশ মিলিয়ে। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের আসরই যেমন বসছে যুগ্মভাবে মেক্সিকো, কানাডা ও আমেরিকায়। ২০৩০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ হবে স্পেন, পর্তুগাল, মরক্কোয় এবং একটি করে ম্যাচ হবে আর্জেন্তিনা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়েতে।

আসন্ন এই বিশ্বকাপকে ঘিরে সৌদি যে মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে তার একটি অংশ হলো ১১টি নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ এবং চারটি সংস্কার। এর মধ্যে কেবল রাজধানী রিয়াদেই থাকছে আটটি স্টেডিয়াম। এছাড়া জেদ্দা চারটি এবং আবহা, আল-খোবার ও নিওমে একটি করে স্টেডিয়াম নির্মিত হবে।

রাজধানী রিয়াদে নির্মিত হবে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ও ফাইনাল ম্যাচের ভেন্যু ‘কিং সালমান ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম’। যা হবে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। যেখানে দর্শক ধারণক্ষমতা হবে ৯২ হাজার। এর নামকরণ করা হয়েছে সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের নামে ।

এছাড়া রিয়াদের বাকি স্টেডিয়ামগুলো হলো, কিং ফাহদ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়াম (৭০ হাজার), দক্ষিণ রিয়াদ স্টেডিয়াম, (৪৭ হাজার), যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান স্টেডিয়াম, (৪৭ হাজার), প্রিন্স ফয়সাল বিন ফাহদ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়াম (৪৭ হাজার), কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়াম (৪৬ হাজার), নিউ মুরাব্বা স্টেডিয়াম (৪৬ হাজার) ও রোশন স্টেডিয়াম (৪৬ হাজার)।

জেদ্দার কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়াম (৫৮ হাজার) সংস্কারের পাশাপাশি নতুন করে নির্মিত হবে আরও তিনটি স্টেডিয়াম। সেগুলো হলো, কিদ্দিয়া কোস্ট স্টেডিয়াম (৪৬,হাজার), জেদ্দা সেন্ট্রাল ডেভেলপমেন্ট স্টেডিয়াম (৪৬ হাজার), কিং আবদুল্লাহ ইকোনমিক সিটি স্টেডিয়াম (৪৬ হাজার)। আবহা, আল-খোবার ও নিওমে নির্মিতি হবে তিনটি নতুন স্টেডিয়াম। সেগুলো হলো কিং খালিদ বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়াম (সাড়ে ৪৫ হাজার), আরামকো স্টেডিয়াম (৪৬ হাজার) ও নিওম স্টেডিয়াম (৪৬ হাজার)।

সৌদি আরবের আগামীর শহর খ্যাত নিওমে নির্মানের অপেক্ষায় থাকা স্টেডিয়ামটির ভূমি থেকে ৩৫০ মিটার উঁচুতে বানানো হবে। এই স্টেডিয়ামে শুধু দ্রুতগতিসম্পন্ন লিফট ও চালকবিহীন যানবাহনে করে এই খেলোয়াড়-দর্শকরা প্রবেশ করবেন। সৌদির ‘দ্য লাইন’ প্রজেক্টের অংশ এটি, যে (নিওম) শহরটি হবে গাড়িবিহীন, প্রস্থে মাত্র ২০০ মিটার এবং দৈর্ঘ্যে ১৭০ কিলোমিটার। এই লাইন লম্বায় নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের চেয়েও উঁচু হবে। আর দূরত্ব লন্ডন থেকে ব্রিস্টলের সমপর্যায়ের।

আসন্ন এই বিশ্বকাপকে ঘিরে পৃথিবীর বুকে যেন নতুন এক সৌদি আরব জন্মদিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটির সরকার। ইতোমধ্যে তারা জানিয়েছেন সৌদির বিমানবন্দরগুলো বড় করা হবে, দ্রুতগতিসম্পন্ন রেল এবং জনমানুষের যাতায়াতের পরিবহনও বাড়ানো হবে। তবে একটি স্টেডিয়াম থেকে অন্যটির বিশাল দূরত্বের কারণে, আয়োজক শহরে যাতায়াত করতে চাওয়া সমর্থকদের বিমানপথেই বেশি ভরসা রাখতে হবে।

মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় দেশ সৌদি আরব আয়তনে যুক্তরাজ্যের চেয়ে ৯ গুণ বড়। বিভিন্ন শহরের বিভিন্ন স্টেডিয়াম তৈরি হবে বলে জনমানুষের পরিবহন কাঠামোর ব্যাপক উন্নয়নের ঘোষণা দিয়েছে তারা। গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে যুক্ত করবে মেট্রো সেবা। তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে প্রতিটি ভেন্যু শহরে দুটি করে মোট ১০টি ফ্যান-পার্কেরও।

সৌদি আরবে বিশ্বকাপ যেমন গোটা ফুবটল বিশ্বকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে তেমনি বিশ্বকাপ আয়োজনের আগেই নানা কারণে সমালোচনার মুখেও পড়েছে তারা। এর মধ্যে মানবাধিকার ও নারী অধিকার লঙ্ঘন, সমকামিতাকে অপরাধীকরণ, মুক্ত বাকে বাঁধা এবং ইয়েমেনে যুদ্ধ।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন এনজিও ও সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে কেবল ২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে সৌদি আরব অন্তত ২০০ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে, যা গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সৌদির অবস্থান নড়বড়ে হয়ে পড়ে ২০১৮ সালে জামাল খাসোগিকে হত্যার পর। খাসোগি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সৌদি সংবাদকর্মী এবং সৌদি সরকারের কট্টর সমালোচক। মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবকে এসব বিষয়ের জন্য যে চোখে দেখা হচ্ছে, সেখান থেকে নজর অন্য দিকে নিতেই খেলাধুলাকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এদিকে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য ফিফার নির্দেশনা, আয়োজনে বিড করা দেশগুলোকে অবশ্যই মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে। গত নভেম্বরে ফিফা সৌদির বিশ্বকাপ আয়োজনের বিড নিয়ে নিজেদের মূল্যায়নপত্রে দেশটিকে ‘মোট ৫-এর মধ্যে গড়ে ৪.২’ দিয়েছে, যা ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

তবে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধীকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, মানবাধিকারে বড় সংস্কারের ঘোষণা দেওয়ার আগপর্যন্ত সৌদি আরবকে ২০৩৪ বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করতে হবে। তাদের দাবি ছিল, সেখানে টুর্নামেন্টটির আয়োজন করা হলে মানবাধিকারে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।

এছাড়া ১৯৫২ সাল থেকে সৌদি আরবে মদ নিষিদ্ধ। স্থান‍ীয়দের পাশাপাশি বিদেশিরাও সেখানে মদ কিনতে বা খেতে পারেন না। মদপানের বিরুদ্ধে দেশটিতে কঠোর আইন রয়েছে। কেউ যদি মদ পান করে ধরা পড়েন তাহলে তাকে কয়েকশ বেত্রাঘাত করা, সৌদি থেকে বের করে দেয়া, কারাদণ্ড দেওয়া অথবা আর্থিক জরিমানা করা হয়।

নিজ দেশের আইন অনুযায়ী সৌদিতে বিশ্বকাপে আগত সমর্থকরা চাইলেই মদ পান করতে পারবেন না। তাদের জন্য প্রকাশ্য মদ্যপানের তেমন ব্যবস্থা থাকবে না। ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দশ বছর পর অনুষ্ঠিতব্য সৌদি বিশ্বকাপে স্টেডিয়ামে বসে মদ্যপান করতে পারবেন না।

ইউরোপ ও আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলোতে বিশ্বকাপ আয়োজন হলে মদ ও পতিতাবৃত্তি বেশ জমজমাট থাকে। তবে সৌদিতে সেসবের সুযোগ নেই। এছাড়া নিষিদ্ধ রয়েছে সমকামিতাও। স্বীকৃতি নেই ট্রান্সজেন্ডারদের। এসব কারণে সমালোচনার মুখে বার বার পড়তে পারে মধ্যপ্রাচের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ আসর।

তবে এসব কিছুকে টপকে যেতে পারে দেশটির নান্দনিক ও অনবদ্য আয়োজন। কারণ এই বিশ্বকাপ আয়োজন ও দেশটির খেলাধুলা মান উন্নয়নের পরিকল্পনায় ৫০০ কোটি পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করেছে সৌদি আরব।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print