ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি।

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

.

আজ ০৯ মার্চ। বিশ্ব কিডনি দিবস। প্রতি বছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়।

তথ্যনুসন্ধ্যানে জানাগেছে- দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার মানুষের কিডনি স্থায়ীভাবে বিকল হচ্ছে। দেশের কিডনি রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ২০ শতাংশ চিকিৎসাসেবা পেলেও ৮০ শতাংশ রোগী চিকিৎসার বাইরে থেকে যান। তারা মূলত চিকিৎসা না পেয়েই মারা যান। তবে জীবনধারা পরিবর্তন ও প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে মৃত্যুঝুঁকি কমানো সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, কিডনি মানুষের দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গের সুস্থতা রক্ষায় মানুষকে সচেতন করে তুলতে প্রতিবছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হয়। সেই হিসেবে আজ ৯ মার্চ বিশ্ব কিডনি দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্যÑ কিডনি রোগ ও স্থূলতা, সুস্থ কিডনির জন্য সুস্থ জীবনধারা। অর্থাৎ এবারের কিডনি দিবসের মূল্য উদ্দেশ্য- কিডনি রোগ প্রতিরোধে সুস্থ জীবনধারা চর্চা করা ও ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা।

কিডনি দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), কিডনি ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি, গণস্বাস্থ্য উন্নয়ন সংস্থা, কিডনি অ্যাওয়ারনেন্স মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেশন সোসাইটি ও ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, অপর্যাপ্ত পানি পান ও অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ সেবনসহ নানা কারণে কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এ ছাড়া ভেজাল ও রাসায়নিক পদার্থযুক্ত খাবার খেয়েও অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন কিডনি রোগে। ডায়বেটিস রোগীরা এর প্রত্যক্ষ শিকার। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি রোগ দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত থাকলে কিডনি সহজেই আক্রান্ত হয়। তাছাড়া জাংকফুড কিডনির জন্য ক্ষতিকর। ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক সেবন, ধূমপান ইত্যাদি ফুসফুস ও হার্টের অসুখের পাশাপাশি কিডনিকেও আক্রান্ত করে। প্রয়োজন ছাড়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে ওষুধ গ্রহণ কিডনির জন্য খুবই ক্ষতিকর।

কিডনি ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. হারুন-অর-রশিদ বলেন, আমাদের দেশের প্রায় ২ কোটি লোক কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে বছরে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার রোগীর কিডনি পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে রোগীদের কিডনি প্রতিস্থাপন ও ডায়ালাইসিস করতে হয়। কিডনি বিকল হওয়া একজন রোগীকে সপ্তাহে ২/৩ দিন করে বছরে ১০৬ বার ডায়ালাইসিস করতে হয়। প্রতিবার ডায়ালাইসিস করতে ব্যয় হয় দেড় থেকে ৫ হাজার টাকা। আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ রোগী এই ব্যয় বহন করতে সক্ষম।

তিনি বলেন, যাদের কিডনি বিকল হয় তাদের মধ্যে ৮ থেকে ১০ হাজার রোগীর কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের (প্রতিস্থাপন) প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রতিস্থাপনের সুযোগ আছে মাত্র ১২০ জন রোগীর। দেশে যে পরিমাণ রোগী কিডনি রোগে আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা প্রদানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন মাত্র ১২০ জন। এই স্বল্পসংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে কিডনি বিকল হওয়া ৩৫ থেকে ৪০ হাজার রোগীসহ ২ কোটি রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা ব্যয় বহনের সক্ষমতাসহ যে সুযোগ-সুধিবা রয়েছে তার মাধ্যমে ২০ শতাংশ রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। বাকি ৮০ শতাংশ রোগী চিকিৎসার বাইরে থেকে যান। এখন কিডনি চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের দিকে আমাদের জোর দিতে হবে। কিডনি রোগ প্রাথমিক অবস্থায় বোঝা যায় না। কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার শুরুতেই রোগ চিহ্নিত করতে হবে।

ডা. হারুন-অর-রশিদ মনে করেন, প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ চিহ্নিত করা গেলে উপজেলা ও জেলা হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চিকিৎসায় কিডনি রোগ সেরে যাবে। এজন্য দেশের যেসব কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে সেখানে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের কিডনি রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা রাখা দরকার। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে কিডনির সমস্যা চিহ্নিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উপজেলা ও জেলা হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তুলতে পারবেন।

বিএসএমএমইউ’র কিডনি বিভাগ সূত্র জানায়, বাংলাদেশে শতকরা ১৭ শতাংশ (অর্থাৎ আড়াই লাখের বেশি) মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার রোগীর কিডনি স্থায়ীভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে ২০ ভাগ মানুষ চিকিৎসা করাতে পারলেও বাকি ৮০ শতাংশ চিকিৎসাসেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ডায়াবেটিসজনিত কারণে শতকরা ৪১ ভাগ, উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে ৩৩ ভাগ, সংক্রমণজনিত ২৫ ভাগ এবং অন্যান্য কারণে শতকরা ১ ভাগ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়।

এ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউ’র প্রক্টর ও ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল আমাদের সময়কে বলেন, প্রতিবছর যে পরিমাণ রোগীর কিডনি বিকল হয়, তাদের দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন ও ডায়ালাইসিস করা- এই দুই ধরনের চিকিৎসা দিতে হয়। দেশে কিডনির ডোনার একেবারেই কম। প্রতিবছর মানবদেহে প্রতিস্থাপনের জন্য যে পরিমাণ কিডনির প্রয়োজন হয়, তার মাত্র এক শতাংশ পাওয়া যায়। পারিবারিক কিডনিদাতা হ্রাস এবং তাদের শারীরিক জটিলতা তৈরি হওয়ায় কিডনিদাতার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কিডনি সংকট কাটাতে আইন সংশোধনের মাধ্যমে নিকট আত্মীয় ছাড়াও মৃত ব্যক্তির কিডনি সংগ্রহে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

তিনি আরও জানান, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে টিস্যু প্রতিস্থাপন আইন প্রথম পাস হয়। এতে নিকট আত্মীয়রাই (বাবা, মা, চাচা, চাচি, ভাই, বোন, ছেলে, মেয়ে, ফুফু ও স্বামী-স্ত্রী) কিডনি দান করতে পারবেন। এই সম্পর্কের বাইরে অন্য কারো কাছ থেকে কিডনি নেওয়া যাবে না। আইনের কারণে অনেক সময় কিডনিদাতা পাওয়া যায় না। আইনি জটিলতা, চিকিৎসক ও ডোনার স্বল্পতাসহ নানা কারণে কিডনি প্রতিস্থাপনে একটি নেতিবাচক অবস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে চিকিৎসার জন্য চলে যায়। এটি কাটাতে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

বিএসএমএমইউ’র পেডিয়াট্রিক নেফ্রলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান জানান, সারা বিশ্বে বর্তমানে শিশুদের স্থূলতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বে বয়স্কদের মধ্যে এ হার শতকরা ৪০ শতাংশ। বাংলাদেশে স্থূলতার হার শহরে শিশুদের মধ্যে ২০ শতাংশ এবং গ্রামের শিশুদের মধ্যে ৮ শতাংশ। গবেষণায় দেখা যায় যে, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস, শিশুদের কায়িক পরিশ্রম সম্পন্ন খেলাধুলার অভাব ও ফাস্টফুড জাতীয় খাবার গ্রহণের ফলে এই স্থূলতার হার ক্রমাগত বেড়েই চলছে। ফলে শিশুরা উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিজনিতসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে একটি কিডনি নিয়েই জন্মগ্রহণ করেছে, আবার কারো কিডনিতে জন্মগত ত্রুটি রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় এটি ধরতে না পারায় বেশিরভাগ শিশুর কিডনি বিকল হয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print